মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার চলার তিন ঘণ্টা পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। আর কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নন এমন কেউ চলাচল করতে পারবেন না।এসএসসি-সমমান পরীক্ষার শুরুর দিন ১০ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশও দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এসব নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়ানুর রহমান।বাংলা প্রথম পত্র দিয়ে এবার শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা, যা শেষ হবে (তত্ত্বীয় পরীক্ষা) শেষ হবে ১৩ মে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নেওয়া হবে এ পরীক্ষা।
তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষে ১৫ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা চলবে। এবারের এসএসসি পরীক্ষা হবে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে, সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও সময়ে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, “সাধারণত কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে শুধু পরীক্ষার তিন ঘণ্টা ১৪৪ ধারা জারি থাকে। তবে কেন্দ্রভেদে এ দূরত্ব কম-বেশি হতে পারে।
“কেন্দ্রের আশপাশে কতটুকু জায়গা ১৪৪ ধারার অন্তর্ভুক্ত থাকবে তা লালপতাকা দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। পরীক্ষা চলার সময়ে সংশ্লিষ্টরা ছাড়া অন্য কেউ ওই লালপতাকা অতিক্রম করে কেন্দ্রের কাছে যেতে পারবেন না।”
এসএসসি, দাখিল এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে আয়োজনে ওই পরিপত্রে একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই পরিপত্রটি সব বিভাগীয় কমিশনার, সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সব জেলা প্রশাসকদের পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
এতে বলা হয়েছে, পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে সব পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই কেন্দ্রে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করতে হবে। কোনো পরীক্ষার্থী দেরিতে কেন্দ্রে আসলে রেজিস্টারে নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও দেরি হওয়ার কারণ উল্লেখ করতে হবে। দেরিতে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডকে জানাবেন। তবে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পর কোনো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া বা পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না।
কেন্দ্র সচিব ছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন ও মোবাইল ফোনের সুবিধাসহ ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না বলেও পরিপত্রে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণায়ল।
কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অননুমোদিত ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা ‘প্রোগ্রামেবল’ ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে ‘নন প্রোগ্রামেবল’ সায়েন্টিফেক ক্যাকুলেটর ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন তারা।
অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার বলেন, “প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটরগুলোতে গণিতের বিভিন্ন সূত্র চলে আসে। তাই প্রতিবছরের মত এবারের পরীক্ষাতেও প্রোগ্রামেবল ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না।”
ট্রেজারি-থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহণ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, শিক্ষক এবং কর্মচারীদেরকে ফোন ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই পরিপত্রে। একইসঙ্গে প্রশ্নপত্র বহন কাজে কালো কাঁচযুক্ত যানবাহন ব্যবহার করতেও নিষেধ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) নিয়োগ দিতে হবে। ট্রেজারি, থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব বা তার মনোনীত প্রতিনিধি ট্যাগ অফিসারসহ প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে পুলিশ প্রহরার কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা কর্মকর্তার (ট্যাগ অফিসার) উপস্থিত না থাকলে প্রশ্নপত্র ট্রেজারি, থানা বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে বের করা বা বহন করা যাবে না।
নিরাপত্তা হেফাজত থেকে বহুমুখী নির্বাচনি প্রশ্নসহ রচনামূলক ও সৃজনশীলের সব সেট প্রশ্নই কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে জানিয়ে মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, প্রশ্নের সেট কোড পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে জানানো হবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সেট কোডে পরীক্ষা নিতে হবে। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার), কেন্দ্র সচিব এবং পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি ও স্বাক্ষরে নির্ধারিত সেট কোড নিশ্চিত হয়ে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলতে হবে।
পরীক্ষার আগে, চলাকালীন এবং পরে কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ছাড়া অন্যদের প্রবেশ ‘সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ’ থাকবে। এ সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশকারী অননুমোদিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনিবার্য কারণে কোন পরীক্ষা দেরিতে শুরু করতে হলে ‘যত মিনিট পরে পরীক্ষা শুরু হবে পরীক্ষার্থীদের সে সময় থেকে যথারীতি প্রশ্নপত্রে উল্লিখিত নির্ধারিত সময় দিতে হবে’ বলেও জানানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরীক্ষা কেন্দ্রে ও প্রশ্ন পরিবহনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস বা পরীক্ষার্থীদের কাছে উত্তর সরবরাহে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জেলা প্রশাসন কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস সংক্রান্ত গুজব বা এ কাজে তৎপর চক্রগুলোর কার্যক্রমের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারি জোরদার করবে।কেন্দ্রের আশপাশে সকল ফটোকপি মেশিন বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশনায় জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।প্রত্যেক বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব উত্তরপত্র নিকটস্থ ডাক বিভাগে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে কেন্দ্রগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, পরীক্ষার তথ্য-উপাত্ত গণমাধ্যম ও অন্যান্য মাধ্যমে উপস্থাপনের দায়িত্ব পালন করবেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির।
এহসানুল কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরীক্ষা নেওয়ার সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। পরীক্ষার সব সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে।”
এমআর/টিএ