বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী ডায়ার উলফকে ফিরিয়ে আনলেন বিজ্ঞানীরা

নতুন যুগের দিকপাল হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বায়োটেক প্রতিষ্ঠান কলসাল বায়োসায়েন্সে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, তারা পৃথিবীর প্রথম সফল ‘ডি-এক্সটিংকশন’(বিলুপ্ত প্রজাতিকে পুনর্জীবিত করা) সম্পন্ন করেছে। লক্ষ্য ছিল এক সময় ‘গেম অব থ্রোনস’ সিরিজে জনপ্রিয় হওয়া, আজ থেকে প্রায় ১২ হাজার ৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া বিশালাকার নেকড়ে ডায়ার উলফ—বৈজ্ঞানিক নাম Aenocyon dirus।

এর আগেও কলসাল প্লাইস্টোসিন যুগের লোমশ ম্যামথ ফিরিয়ে আনতে ‘উলির মাউস’ নামে একটি জিন-সম্পাদিত ইঁদুর তৈরি করেছিল। এবার তারা পরীক্ষাগারে তিনটি ডায়ার উলফ শাবকের জন্ম দিতে সফল হয়েছে।

প্রথম ধাপে, বিজ্ঞানীরা ডায়ার উলফের জেনেটিক কোড পুনর্গঠন করেন। এজন্য তাঁরা একটি ১৩ হাজার বছরের পুরোনো দাঁত ও ৭২ হাজার বছরের পুরোনো একটি খুলি থেকে প্রাচীন ডিএনএ সংগ্রহ করেন। এরপর আধুনিক গ্রে উলফের (Canis lupus) ডিএনএ ব্যবহার করে ডায়ার উলফের অনুপস্থিত বিশেষ জিনগুলো সম্পাদনা করা হয়।

ডিএনএ সম্পাদনার জন্য CRISPR জিন-এডিটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ১৪টি জিনের ২০টি ভিন্নতা চিহ্নিত করেন, যা ডায়ার উলফের অনন্য বৈশিষ্ট্য—বড় শরীর, সাদা লোম, বড় দাঁত ও স্বতন্ত্র ডাক—নির্ধারণ করে। এসব সম্পাদিত ডিএনএ গ্রে উলফের ডিম্বাণুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। ডিমের মূল নিউক্লিয়াস আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল যাতে নতুন ডিএনএ সন্নিবেশ করা যায়।

এই প্রযুক্তি মূলত ১৯৯৬ সালে ক্লোনিং করা ভেড়া ডলির পদ্ধতির মতোই, যেখানে একটি দাতা প্রাণীর কোষ থেকে নিউক্লিয়াস নিয়ে সেটি অন্য প্রাণীর ডিম্বাণুতে সন্নিবেশ করা হয়।

পরবর্তী ধাপে, গবেষণাগারে ডিমগুলো পরিপক্ব করে তৈরি হয় ৪৫টি ভ্রূণ। এসব ভ্রূণ তিনটি গৃহপালিত কুকুরের গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। উল্লেখ্য, গৃহপালিত কুকুর গ্রে উলফেরই একটি উপপ্রজাতি।

প্রতিটি সারোগেট কুকুরের গর্ভে একটি করে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হয়। নির্ধারিত ৬৫ দিনের গর্ভধারণ শেষে গত ১ অক্টোবর সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেয় দুটি সাদা রঙের নেকড়ে শাবক—রোমুলাস ও রেমুস। পরে একই প্রক্রিয়ায় আরও একটি শাবক খালেসি জন্ম নেয়। এদের নামকরণ করা হয়েছে রোমান পৌরাণিক কাহিনি ও গেম অব থ্রোনসের চরিত্র থেকে।

এই তিন শাবকের চেহারা ও স্বভাব অনেকটাই গেম অব থ্রোনসের চরিত্র জন স্নোর সঙ্গী ডায়ার উলফ ‘ঘোস্ট’-এর মতো।

কলসাল বায়োসায়েন্সেস এর সিইও বেন ল্যাম একে “প্রযুক্তির এক ঐতিহাসিক বিজয়” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এটি এমন এক যুগের সূচনা, যেখানে বিজ্ঞান হারিয়ে যাওয়া প্রাণীকেও ফিরিয়ে আনতে পারছে।”

এর আগে, ২০০৩ সালে স্পেনের বিজ্ঞানীরা বিলুপ্ত পিরেনিয়ান আইবেক্স নামের বন্য ছাগলের ক্লোন তৈরি করেছিলেন। তবে সেই ছাগল জন্মের কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়। কলসাল সেই ভুল পেছনে ফেলে এবার সফলভাবে ডায়ার উলফকে ফিরিয়ে আনায় নতুন যুগের সম্ভাবনা উন্মোচন করলো।

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের পরবর্তী লক্ষ্য ‘রেড উলফ’ এবং ২০২৮ সালের মধ্যে উইলি ম্যামথ বা অতিকায় লোমশ হাতিকে পুনরায় জীবন্ত করা।

Share this news on: