ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে হঠাৎ প্রবেশের চেষ্টা করেন এক ব্যক্তি। পুলিশের দাবি তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন।
পুলিশ আরও জানায়, ঐ ব্যক্তি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধু পরিচয় দিয়ে দূতাবাসের ভিতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ও দূতাবাসের নিরাপত্তা রক্ষীরা তাকে গেটের বাইরে আটক করে। এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কথা বলে মানসিক রোগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ। তবে পুলিশ ওই ব্যক্তির নাম পরিচয় জানায়নি।
বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুর বেলায় রাজধানীর নতুন বাজারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে এই ঘটনা ঘটে। নতুন বাজার থেকে গুলশান ২ নম্বরে যাওয়ার রাস্তার পাশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের যে গেটটি রয়েছে, সেখানে ওই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই ব্যক্তি বাংলাদেশি ইউএস সিটিজেন। তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত। বুধবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে গিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশের রাষ্ট্রপতি তার বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার বন্ধু। এই কথা বলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ভিতরে প্রবেশ করতে চান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করবেন বলে। কিন্তু দূতাবাসের সামনে থাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে দ্রুত আটক করে। তাকে কেন যেতে বাধা দেওয়া হয়, সেজন্য তিনি সেখানে রাগান্বিত হয়ে উশৃঙ্খলতা করার চেষ্টা করেন।
আবার কিছুক্ষণ পরে তিনি বলেন, প্যালেস্টাইনে কেন যুক্তরাষ্ট্র হামলা করছে? এসব ছাড়াও তিনি আরও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর তিনি নানা ধরনের উল্টোপাল্টা কথা বলতে থাকেন।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, এ অবস্থায় ওই মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে দূতাবাস এলাকায় রাখা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেহেতু এটি স্পর্শকাতর এলাকা এবং বিভিন্ন দেশের দূতাবাস রয়েছে। তাকে অনেকক্ষণ বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তিনি উল্টো পুলিশ সদস্যদের চর-থাপ্পড় দেওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা বাধ্য হয়ে তার হাতে হাতকড়া পরায়। পরে তাকে কোনোমতে গাড়িতে করে গুলশান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গুলশান থানায় নিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই করে জানা যায় ওই ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন এবং তিনি বাংলাদেশি-মার্কিন নাগরিক। তার বাসা রাজধানীর বনানীতে। পরে তাকে গুলশান থানা থেকে বনানী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় তার পরিবারের লোকজন এলে তাকে তাদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাসেল সারোয়ার বলেন, আমরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। ওই ব্যক্তি ও তার স্ত্রী বাংলাদেশি-মার্কিন নাগরিক। তাদের বাসা রাজধানীর বনানীতে। ওই ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন। আমরা জানতে পেরেছি, গত দুই রাত ধরে তার ঘুম হয়নি এবং তিনি ওষুধ খাননি। ঘুম না হওয়া এবং ওষুধ না খাওয়ার কারণে তার মধ্যে মানসিক সমস্যা বেড়ে যায়। মানসিক সমস্যা বাড়তে থাকায় তার মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে নিরাপত্তা চায়। পরে সে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে যেতে চায় নিরাপত্তা চাওয়ার জন্য।
ওসি বলেন, সেখানে গিয়ে তার মানসিক সমস্যা আরও বেড়ে যায়। পরে তাকে সেখান থেকে প্রথমে গুলশান থানায় এবং সর্বশেষ সেখান থেকে বনানী থানায় আনা হয়। এর মধ্যে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বনানী থানায় আসেন। একই সময় ওই ব্যক্তির একজন বন্ধুও থানায় আসেন। তিনি পরিবারের লোকজন এবং বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হন। প্রতিদিন যে ওষুধটি তিনি খেয়ে থাকেন, সেটি খাওয়ার পর তিনি বলেন, বাসায় গিয়ে দুদিন ঘুমাবেন এবং ঘুমানোর পর ঠিক হয়ে যাবেন। তার মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়।
এফপি