ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ে প্রস্তুত চীন

অর্থনৈতিক যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যদিও শুরুতে একাধিক দেশের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের কথা বলেছিলেন ট্রাম্প, বর্তমানে এই লড়াই শুধু চীনকেই ঘিরে।

সম্প্রতি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশের ওপর আগামী ৯০ দিন শুল্ক আরোপ করা হবে না। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে নতুন করে শুল্ক বসিয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে শুল্ক ৫৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে। চীনও পাল্টা পদক্ষেপে শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশে নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক বিভাজন তৈরি করছে। তাদের মতে, এই উত্তেজনার প্রভাব শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীন নয়, গোটা বিশ্বের বাণিজ্য ব্যবস্থার ওপর পড়তে পারে।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এই শুল্ক নীতিকে একতরফা চাপের প্রচেষ্টা বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন, দেশটি এর জন্য বহু বছর ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। চীনের সরকারি পত্রিকাগুলো বলছে, তারা দেশীয় চাহিদা বাড়ানো, রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্যময় করা ও উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে জোর দিচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, চীন এখন আগের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কম নির্ভরশীল। তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপসহ বিকল্প বাজার তৈরি করেছে এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও চাহিদা বাড়াতে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য বিক্রি অনেক কমে যেতে পারে, যার ফলে সাধারণ মানুষকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হতে পারে। বিশ্লেষণ বলছে, মার্কিন ক্রেতাদের বাড়তি ৮৬০ বিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী অনেক দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের একক বাণিজ্যনীতিতে অস্বস্তি বোধ করছে। ফলে চীন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুদ্ধে কে বেশি সময় টিকে থাকতে পারবে, সেটাই ভবিষ্যতের বাণিজ্য ভারসাম্য নির্ধারণ করবে।

সার্বিকভাবে, বাণিজ্যযুদ্ধে দুই পরাশক্তির এই সংঘর্ষ শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত হিসাবেও গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে এই লড়াইয়ের পরিণতির দিকে।

আরএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মমতার অভিযোগ উড়িয়ে দিল ঢাকা Apr 18, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বাতিল হওয়া অর্ধেকই ভারতীয় শিক্ষার্থী, দাবি কংগ্রেস নেতার Apr 18, 2025
img
‘অনেক পরিচিত ক্রিকেটার আমাকে তাদের নগ্ন ছবি পাঠাত’ Apr 18, 2025
img
কবে আসছে আমিরের ‘সিতারে জমিন পার’? Apr 18, 2025
img
আগামীকাল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু Apr 18, 2025
img
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে পরীক্ষামূলক সি-ট্রাক চলাচল শুরু Apr 18, 2025
img
সংস্কার ও হাসিনার বিচারের আগে কোনো নির্বাচন নয় : গোলাম পরওয়ার Apr 18, 2025
img
অপহরণের পর কিশোরীকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত শিক্ষক গ্রেফতার Apr 18, 2025
img
পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্য ‘অযৌক্তিক’ : ভারত Apr 18, 2025
img
পাঞ্জাবের ১৪টি গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড ধরা পড়লেন আমেরিকায় Apr 18, 2025