বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা যাচাই ও আগ্রহী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার লক্ষ্যে আগামী মাসে ঢাকায় আসছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন্টাও। তার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন প্রায় ২০০ চীনা বিনিয়োগকারী।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’-এর তৃতীয় দিন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “চীনের বাণিজ্য সচিব আমাকে জানিয়েছেন, তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে ২০০ বিনিয়োগকারী নিয়ে ঢাকায় আসবেন। আমরা যদি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারি, তাহলে দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।”
বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন সম্পর্কে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হলো দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাংলাদেশের নেতিবাচক ধারণাকে ইতিবাচক রূপ দেওয়া। আমি জার্মান দলের সাথে বসেছি। তাদের দলের প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ সদস্য প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি যে বাংলাদেশে জার্মান বিনিয়োগ আনতে আমাদের আর কী করা উচিত। তারা সকলেই বলেছেন যে আমাদের আরও জার্মান বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আনতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চীনের হোন্ডা কোম্পানির সাথে ইতিমধ্যেই ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সুতরাং আমাদের ধারাবাহিকভাবে তাদের বাংলাদেশে আনতে হবে। এত বড় বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রয়োজন নেই। বিনিয়োগ আনতে নির্দিষ্ট দেশগুলিকে চিহ্নিত করে তাদের সাথে বৈঠক করাই শ্রেয় হবে।’
বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনে আসা ব্যবসায়ীরা শ্রম-নিবিড় শিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী জানিয়ে চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘তারা বাংলাদেশের ভোক্তা বাজার দখলে টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক, ওষুধ ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে বিনিয়োগ করতে চান।’
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এক প্রশ্নের জবাবে আশিক বলেন, ‘প্রতিরক্ষা শিল্পে আমাদের বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। নীতিগতভাবে, আমরা মনে করি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য সামরিক বাহিনীতে কিছু প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। আমাদের যে বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি আছে, সেখানে ইতিমধ্যেই দক্ষতা রয়েছে। আমরা এর উপর ভিত্তি করে সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ট্যাঙ্ক তৈরির দরকার নেই, আমাদের মহাকাশযান তৈরির দরকার নেই, আমাদের যুদ্ধবিমান তৈরির দরকার নেই। আমাদের উন্নত রেডিও, ট্যাঙ্ক অ্যাক্সেল, ছোট বুলেট এবং ছোট অস্ত্র ইত্যাদির মতো ছোট আকারের পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এগুলোর চাহিদাও অনেক।’
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের একটি বড় উদ্যোগ হল বাইরে থেকে বিনিয়োগকারী খুঁজে বের করা যারা প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছুক। আমরা উৎপাদিত পণ্য কিনতে প্রতিশ্রুতি দেব, পাশাপাশি তাদের রপ্তানি করার সুযোগ দেব। আমরা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মতো একটি সামরিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের ধারণার উপর কিছু প্রস্তাব দেব।’
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘সামরিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হবে, তবে এটির উপর কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। একটি সামরিক অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির জন্য আমাদের নীতিমালা তৈরি করতে হবে। নিরাপত্তা নীতি, ডিজিটাল ডেটা নীতি, আইটি অধিকারের মতো অনেক সমস্যা রয়েছে, যা আমাদের সমাধান করতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে। এগুলির উপর কাজ শুরু হয়েছে।’
আরএ/এসএন