চিকেন নেককে দুর্গে পরিণত করছে ভারত, মোতায়েন করছে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে অস্থির। ভারত, বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে, ভারতের সামরিক প্রস্তুতি এবং সুরক্ষার ব্যাপারে নতুন একটি কৌশলগত পদক্ষেপ সামনে এসেছে। দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত এখন একটি নতুন শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়ন করেছে, যা গোটা অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

আঞ্চলিক উত্তেজনা কমানোর যেন কোন আগ্রহই নেই ভারতের। উল্টো, নিজ দেশের প্রচার করা গুজব আর প্রচারণায় ভয়েই একাকার অবস্থা নরেন্দ্র মোদির দেশটির। বাংলাদেশ সীমান্তের চিকেন’স নেককে দুর্গে পরিণত করতে এবার অঞ্চলটিতে সর্বাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা মোতায়ন করেছে ভারত।

চিকেন’স নেক আর সেভেন সিস্টারস এর পাহারায় যুক্ত হয়েছে রাশিয়া থেকে কেনা এস ৪০০। বেইজিং সফর সহ একাধিকবার প্রধান উপদেষ্টার সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্যে বাংলাদেশকে ঘিরে চীনের তৎপরতা বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা জানাচ্ছে মোদি সরকার। ভারতের গণমাধ্যমগুলো আরো এক ধাপ এগিয়ে জানাচ্ছে, চিকেন নেক কাছেই নাকি চীনের সহায়তায় বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করবে বাংলাদেশ। আর সেই জন্যই এমন আকাশ প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই চিকেন নেক ভারতের সবচেয়ে দুর্বল অংশগুলোর একটি। ভারতের মূল ভূখন্ডের সাথে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যকে যুক্ত করে রেখেছে মাত্র ২০ কিলোমিটার ব্যাপী এই করিডোর। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, চীনের মতো দেশগুলোর উপস্থিতির জন্য এই অঞ্চলটি নিয়ে সবসময় আতঙ্কে থাকে ভারত। করিডোরটি কোন কারণে হাতছাড়া হয়ে গেলে সেভেন সিস্টারসের সাতটি রাজ্যই ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে চিকেন নেক করিডরে রাশিয়ার এস 400 মোতায়েনের মত পদক্ষেপ এখন আলোচনায়। ৪০০ কিলোমিটার দূর থেকেও যে কোনো হুমকি শনাক্ত করতে পারা এবং একই সাথে একাধিক মিসাইল ধ্বংসের ক্ষমতা থাকা এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অস্ত্র। নিরাপত্তার জন্য ভঙ্গুর এই অঞ্চলটিতে সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি চতুর্থ প্রজন্মের রাফাল যুদ্ধ বিমান, ব্রাহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন দিয়ে চিকেন নেককে ঘিরে ফেলেছে ভারতীয় বাহিনী। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি রাখতে চালাচ্ছে একের পর এক মহড়াও।

আর ভারতের এমন জোরালো পদক্ষেপের জন্য বাংলাদেশি কারণ বলে জানাচ্ছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা। এত বছর সেভেন সিস্টারস এর জন্য বাংলাদেশ ঢালের মত কাজ করলেও তা নিয়ে কোন কৃতিত্ব নেয়া হয়নি। তবে চীনে শি জিনপিং এর সাথে বৈঠক সহ বিমস্ টেক সম্মেলনেও একাধিকবার প্রধান উপদেষ্টা সেভেন সিস্টারসে বাংলাদেশের ভূমিকা এবং সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। সেখান থেকেই ভারতের ধারণা হয়েছে, অঞ্চলটিতে চীনকে প্রবেশের সুযোগ করে দেবে ঢাকা।

ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, সেভেন সিস্টারস সীমান্তে বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় চীন অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারে। আর এসব উপলক্ষে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর কাছাকাছি চীনের উপস্থিতি এবং তৎপরতা আরো বাড়বে। এমনকি চীনের সহায়তায় লালমনির হাটে বাংলাদেশ বিমান ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। চীন থেকে নাকি বাংলাদেশ ৩২ টি জেএফ থান্ডার যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিও প্রায় পাকা করে ফেলেছে। এমনটাই জানাচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। আর তাই এসব হুমকি মোকাবেলায় আগেভাগেই পাল্টা প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা জানাচ্ছে দিল্লি।

এফপি/টিএ

Share this news on: