বড় ধাক্কা খেতে যাচ্ছেন আইফোন ব্যবহারকারীরা!

যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনসহ অন্যান্য স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও স্মার্টওয়াচের দাম বড় রকমের বাড়তে পারে—এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতির কারণে। যদি তাই হয়, তবে ধাক্কাই খেতে যাচ্ছে আইফোন ব্যবহারকারীরা। কেননা, শুল্কের অতিরিক্ত খরচ গ্রাহকের ওপরে চাপিয়ে দিলে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের দাম কয়েকশ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। খবর বিবিসির।

চীনে তৈরি পণ্যের ওপর এখন ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন, যা প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে বড় ধাক্কা দিতে পারে। বিশেষ করে আইফোন, যেগুলোর বড় অংশই চীনে তৈরি হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই অতিরিক্ত খরচ গ্রাহকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের দাম কয়েকশ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ইউবিএস ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, চীনে তৈরি ২৫৬ জিবি স্টোরেজের আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স-এর দাম ১,১৯৯ ডলার থেকে বেড়ে ১,৯৯৯ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

এদিকে ভারতে তৈরি আইফোন ১৬ প্রো (১২৮ জিবি) মডেলের দাম তুলনামূলকভাবে কম বাড়বে, ৯৯৯ ডলার থেকে ১,০৪৬ ডলার—মাত্র ৫ শতাংশ বৃদ্ধি।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, যদি ডলারের মান প্রভাবিত হয়, তাহলে বিশ্বব্যাপী আইফোনের দাম বাড়তে পারে। অ্যাপোল সাধারণত বিশ্বজুড়ে একইরকম দাম রাখে, যাতে কেউ সস্তায় একটি দেশে কিনে অন্য দেশে বেশি দামে বিক্রি করতে না পারে।

বিশ্লেষক বেন উড মনে করেন, ভবিষ্যতে অ্যাপল বিশ্বব্যাপী দাম বাড়াতে পারে—এবং এর ফলে দীর্ঘমেয়াদী কিস্তির ফোন চুক্তির দিকে যেতে পারে ব্যবহারকারীরা। এমনকি ৫ বছর মেয়াদি ফোন কিস্তির চুক্তিও দেখা যেতে পারে, যাকে তিনি তুলনা করেছেন ‘একটি স্মার্টফোনের মর্টগেজ’-এর সঙ্গে।

এখনও অ্যাপল আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি যে তারা বাড়তি শুল্কের খরচ ভোক্তার ঘাড়ে চাপাবে কি-না। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু অ্যাপলের মুনাফার মার্জিন বেশ উঁচু, তারা প্রাথমিকভাবে কিছুটা খরচ নিজেদের দিকেই রাখতে পারে।

তবে ব্র্যান্ডটির জনপ্রিয়তা ও ভক্তদের আনুগত্য এমন যে, দাম বাড়লেও অনেকেই হয়তো অ্যাপল ছাড়বেন না।

চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে অ্যাপল ইতিমধ্যে ভারতে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এমনকি গত সপ্তাহেই ভারত থেকে ৬০০ টনের বেশি আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে আনার জন্য চার্টার ফ্লাইট পাঠিয়েছে অ্যাপল।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ‘মেইড ইন ইউএসএ’ আইফোন তৈরি করতে চাইলে সময় লাগবে কমপক্ষে ৩ বছর এবং খরচ হতে পারে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার—তাও মাত্র ১০ শতাংশ উৎপাদন স্থানান্তরের জন্য।

যেহেতু অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি, তাই অনেকে আগে থেকেই আইফোন কিনে নিচ্ছেন। কেউ কেউ পুরোনো মডেলেই সন্তুষ্ট থাকতে চাইছেন, আবার অনেকে বিকল্প ব্র্যান্ড বা ব্যবহৃত ফোনের দিকে ঝুঁকছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে অর্থনৈতিক উপায় হতে পারে—নতুন আইফোন না নিয়ে পুরোনো ফোনটাই আরও কিছুদিন চালিয়ে যাওয়া।
চলতি বছরের শেষ দিকে নতুন আইফোনের ঘোষণা এলে বোঝা যাবে, এই শুল্ক যুদ্ধের প্রভাব কতটা পড়ল আমাদের হাতে থাকা ডিভাইসের দামে। তবে আপাতত, প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে উদ্বেগটা বাড়ছেই।

এফপি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
উড্ডয়নের সময় খরগোশের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উড়োজাহাজে আগুন Apr 18, 2025
img
ভাতিজা হত্যার দায়ে চাচির যাবজ্জীবন Apr 18, 2025
img
ভাই সোহেলের ছবি থেকে সরে দাঁড়িয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলেন সালমান খান! Apr 18, 2025
img
রাখাইনে এখন রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পরিস্থিতি নেই : খলিলুর রহমান Apr 18, 2025
img
উদ্ধার হলো শখ পূরণে বিক্রি করে দেওয়া সেই শিশু Apr 18, 2025
img
নারায়ণগঞ্জে ‘মার্চ ফর ড. ইউনূস’ কর্মসূচি পালন Apr 18, 2025
img
গুজরাটে গ্লেন ফিলিপসের বদলি লঙ্কান অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা Apr 18, 2025
img
ভালুকায় মাইক্রোবাস-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২ Apr 18, 2025
img
ভারতীয় ক্রিকেটারের পরিবর্তে আইপিএলে ডাক পেলেন প্রোটিয়া অলরাউন্ডার Apr 18, 2025
img
খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল দুইজনের Apr 18, 2025