মান্নার মৃত্যু মানে চলচ্চিত্রের অর্ধেক মৃত্যু হয়ে গেছে : মিশা সওদাগর

খেটেখাওয়া মানুষের নায়ক অভিনেতা ছিলেন নায়ক মান্না। অভিনয়ের মধ্য দিয়ে কথা বলতেন সাধারণ জনগণের। সোমবার (১৪ এপ্রিল) তার জন্মদিন। কাশেম মালার প্রেম সিনেমাটি হিট হওয়ার পর মান্না হয়ে উঠেছিলেন ঢাকাই সিনেমার যুবরাজ।

এদিকে নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিযোগিতার দিয়ে বড় পর্দায় পা রাখেন খল অভিনেতা মিশা সওদাগর। নায়ক মান্নার সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করেছেন অনেক ছবিতে। এই নায়কের জন্মদিনে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় মিশা সওদাগরের। 

মিশা বলেন, আমার দৃষ্টিতে মান্না মহানায়ক। আর মহানায়ক বলার কারণ এই যে আমাদের চলচ্চিত্রের অনেকের পক্ষে অনেক কিছু করাই সম্ভব হয়নি, যা মান্নার পক্ষে করা সম্ভব হয়েছে।

মুখের সন্ধান থেকে মানা আসার পর তিন দুই নাম্বার হিরো, দুই নাম্বার হিরো থেকে নিজেকে চলচ্চিত্রের অপরিহার্য নায়কে পরিণত করেছিল। ও যখন প্রথম প্রযোজনা সংস্থা থেকে ছবি নির্মাণ শুরু করেন প্রথম সিনেমাতেই পরিচালক কাজী হায়াতকে নেন। তাছাড়া একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিল সেটি হলো মৌসুমী আর শাবনূরকে কেউ এক সিনেমায় নিতে পারেনি কখনো। কিন্তু সেটিই করে দেখিয়ে ছিলো নায়ক মান্না। ‘দুই বধূ এক স্বামী’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন মৌসুমী-শাবনূর।

নায়ক মান্নাকে বাংলা চলচ্চিত্রের গবেষক উল্লেখ করে এই খল অভিনেতা বলেন, মৌসুমী-শাবনূরকে এক করার ফলে দুই নায়কার দর্শকই সিনেমাটি দেখেছে। যার ফলে ছবিটি সুপার হিট হয়েছে। তাছাড়া বড় বড় নির্মাতা নিয়ে মান্না সব সময় কাজ করতেন। চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক বেশি চর্চা করতেন তিনি। চলচ্চিত্র নিয়ে মান্না যেই কথাগুলো বলতো অনেক চিন্তাভাবনা করে বলত।

একটা সময় চলচ্চিত্রে পাইরেসি ও অশ্লীলতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। আর সেই সময় মান্না এককভাবে জীবন দিয়ে লড়ে গেছেন উল্লেখ করে মিশা বলেন, ছবি পাইরেসি বন্ধে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করেছে। কোথাও পাইরেসি হচ্ছে এমন খবর শুনে দেয়াল টপকিয়ে জীবন বাজি রেখে সেখানে গিয়ে তা প্রতিহত করেছে। পরে পাইরেসির সঙ্গে জড়িতদের ধরে এনেছে, পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করিয়েছে। এ ছাড়া তিনি অশ্লীল ছবি বন্ধে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করে গেছেন। বলতে গেলে এখন তার সেই যুদ্ধের ফল ভোগ করছে। এটা শতভাগ সত্য যে তিনি পাইরেসি ও অশ্লীলতা বন্ধে একেবারে শীর্ষে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। চলচ্চিত্রের যেকোন ক্রান্তিলগ্নে মান্না একা দাড়িয়ে গেছে।

আক্ষেপ নিয়েই এই দর্শকপ্রিয় অভিনেতা বলেন, মান্নার মৃত্যু মানে চলচ্চিত্রের অর্ধেক মৃত্যু হয়ে গেছে। অনেকেই বলে ইন্ডাস্ট্রি কোমায় আছে কিন্তু আমি বলবো চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি একদম শেষ হয়ে গিয়েছে। আজ মান্না থাকলে বাংলা চলচ্চিত্রের এমন হাল হতো না।

প্রসঙ্গত, জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ঢালিউডের এই মহাতারকা। মান্নার পরিবারের দাবি, ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে মামলা এখনো চলমান।

মান্না অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে দাঙ্গা, লুটতরাজ, তেজি, আম্মাজান, আব্বাজান, বীর সৈনিক, শান্ত কেনো মাস্তান, বসিরা, খল নায়ক, রংবাজ বাদশা, সুলতান, ভাইয়া, টপ সম্রাট, চাঁদাবাজ, ঢাকাইয়া মাস্তান, মাস্তানের ওপর মাস্তান, বিগবস, মান্না ভাই, টপ টেরর, জনতার বাদশা, রাজপথের রাজা, এতিম রাজা, টোকাই রংবাজ, ভিলেন, নায়ক, সন্ত্রাসী মুন্না, জুম্মান কসাই, আমি জেল থেকে বলছি, কাবুলিওয়ালা ইত্যাদি।

মান্না তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পাশাপাশি আমৃত্যু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেছেন।

এসএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

মায়ানমার থেকে ২০ বাংলাদেশিকে নিয়ে ফিরলো নৌবাহিনী Apr 16, 2025
আপনের সামনে সেদিন কি ঘটেছিল? Apr 16, 2025
ভোল পাল্টে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা বনে গেলেন শ্রমিকদল নেতা Apr 16, 2025
শাপলা চত্বরের ঘটনায় ৭১ টিভির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভি যোগ দায়ের Apr 16, 2025
জনগণ কি ইউনুস সরকারকেই পাঁচ বছর চায়? Apr 16, 2025
পাঁচ বছর সরকারকে ক্ষমতায় রাখার বিষয়ে কিছু বলেননি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Apr 16, 2025
ছাত্রদলের মাতব্বরি আমরা চায় না, ছাত্রসংসদের এই কথা কেন Apr 16, 2025
ঢাকা কলেজ সিটি কলেজ দ্ব'ন্দ্ব নিয়ে যা জানালেন পুলিশ কর্মকর্তা Apr 16, 2025
বহুল প্রত্যাশিত ডাকসু নির্বাচনের টাইমলাইন প্রকাশ Apr 16, 2025
জামায়াত আমীরকে ভালোবাসা জানিয়ে ইলিয়াস হোসেনের পোস্ট Apr 16, 2025