বছরের বৃহত্তম উৎসব বলে কথা। একসঙ্গে তাই ছয়টি ছবি উঠেছিল বড় পর্দায়। যদিও তারকা খ্যাতির প্রভাবে বেশির ভাগ হল দখলে রেখেছে শাকিব খান অভিনীত ‘বরবাদ’। আবার একাধিক ছবি সপ্তাহ না ঘুরতেই ছিটকে পড়েছে মিছিল থেকে।
শেষ পর্যন্ত ঈদের বাজার জমে উঠেছে তিন ছবিতে—’বরবাদ’, ‘দাগি’ ও ‘জংলি’। এসব ছবি ঘিরে দর্শকের আগ্রহ তুঙ্গে। কিন্তু এমনটাও দেখা যায়, সিনেমা হলে ছবির রমরমা অবস্থা। অথচ প্রযোজকের ভাণ্ডারে লোকসান! ঈদের আলোচিত তিন ছবির ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা কেমন? প্রযোজকরা কতটা খুশি? জানার চেষ্টা করেছেন কামরুল ইসলাম।
আমাদের মানসিকতা বড় করা উচিত || শাহরিন আক্তার সুমি প্রযোজক, বরবাদ
যারা কখনো ভাবেনি ‘বরবাদ’ চালাতে পারবে, তারাও যখন অনুরোধ করেছে, আমরা ছবি দিয়েছি। অথচ সেই মানুষগুলোই চুরি করছে! কী বলার আছে? আমি ছবি বানাব, বিপরীতে সততাও তো থাকতে হবে। হল মালিকরা যদি ভাবেন, ব্যবসার পুরোটা নিজেরা ভোগ করবেন, এটা একদমই ভুল। তাঁরা ২০-৩০ আসনের গরমিল করলে মানা যায়, কিন্তু ২০০-৩০০ আসনের নড়চড় করলে তো মানা যায় না।
এটা চুরি। আবার এটা বললেও আমার দোষ! ক্ষমতা দেখায়, নানা কথা বলে। এগুলো ঠিক না হলে তো ইন্ডাস্ট্রির কখনো উন্নতি হবে না। ভীষণ মন খারাপের জায়গা থেকে কথাগুলো বলছি। আমার লগ্নি হয়তো কোনো না কোনোভাবে উঠে আসবে।
কিন্তু এই যে চুরির সিস্টেম, এটা থাকলে আদতে কোনো লাভ নেই। আগামী তিন বছরে আমরা আরো তিনটা ছবি বানাব, শাকিব খানকে নিয়ে। এখনকার পরিস্থিতি দেখে ভাবছি, শুধু মাল্টিপ্লেক্সেই ছবি মুক্তি দেব।
আমাদের দেশের মানুষের চিন্তা, মানসিকতা এখনো ছোটই রয়ে গেছে। যেকোনো কাজ করতে গেলেই অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। এমন অনেকে আছে, এফডিসিতে গেলে কিংবা কোথাও দেখা হলে বলবে, ‘আপা, সালাম দিয়েছি!’ এর বিনিময়ে সে কী চায়? টাকা। দেখুন, আমি তো খুশি হয়ে এমনিতেও দিতে পারি। কিন্তু এটাকে যে সিস্টেম বানিয়ে ফেলা হয়েছে, এই ছোট মানসিকতার সিস্টেম বন্ধ হওয়া উচিত।
আবার অনেকে ফ্রি টিকিট চায়। অমুক দেখবে, তমুক তার পরিবার নিয়ে দেখবে, দশটা টিকিট দিন! আরে ভাই, আমরা তো বিশেষ প্রদর্শনী করব। সেখানে সবাইকে আমন্ত্রণ করব। যেহেতু আমাদের ছবিটা বড়, অনেক মানুষ জড়িত, ফলে একটা স্ক্রিন দিয়ে হবে না। তিন-চারটা স্ক্রিন দিয়ে ওই প্রদর্শনীটা করব। সেটার জন্য অন্তত অপেক্ষা করুন। না, তারা চেয়ে চেয়ে টিকিট নেবে! আমাদের মানসিকতা বড় করা উচিত। অনেকেই ফোন করে জানতে চাইছেন, এ সপ্তাহের পর কালেকশন কত হয়েছে? আমি কী জবাব দেব? আমি তো নিজেই সঠিক হিসাবটা পাচ্ছি না। তবে, প্রযোজকের জায়গা থেকে আমরা লগ্নির কাছাকাছি চলে এসেছি। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে আশা করছি লগ্নি পুরোপুরি উঠে আসবে। এটা শুধু দেশের কথা বললাম। দেশের বাইরেও তো মুক্তি দিচ্ছি। সেটার হিসাব আলাদা।
শুধু প্রেক্ষাগৃহ থেকে লগ্নি তোলা অসম্ভব || শাহরিয়ার শাকিল প্রযোজক, দাগি
যেটা প্রত্যাশা ছিল, সেটাই পাচ্ছি। তবে পুরো সিস্টেমে তো সমস্যা আছে। প্রযোজকের অংশটাও নগণ্য। আবার সিঙ্গেল স্ক্রিনের হিসাবে বরাবরই গরমিল থাকে, স্বচ্ছ হিসাবটা পাওয়া যায় না। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কথা বলতে হবে। ই-টিকিটিং চালু করতে হবে, বক্স অফিস থাকা লাগবে। তবে ‘দাগি’ নিয়ে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে। একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন, ‘বরবাদ’-এর পরেই ‘দাগি’র অবস্থান। আরেকটা বিষয় হলো, শুধু দেশের প্রেক্ষাগৃহ থেকে ছবির লগ্নি তোলা অসম্ভব। সেটা ‘বরবাদ’-এর ক্ষেত্রেও সত্য, ‘দাগি’র ক্ষেত্রেও। অন্যান্য খাত মিলিয়ে লগ্নি তুলতে হয়। ওটিটি প্ল্যাটফরম, বিদেশে মুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র রয়েছে। সেগুলোর মাধ্যমে ছবির বাজেট তুলে আনা যায়। আমরা দুই দিন আগেই ‘দাগি’র লগ্নি তুলে ফেলেছি।
আরেকটা বিষয়ে বলতে চাই, হলের সংখ্যা। ‘দাগি’র হলসংখ্যা তুলনামূলক কম হতে পারে। তবে আমাদের কাছে অনেকেই ছবি চেয়েছে। আমরা দিইনি। এমনও হয়েছে, ১৫-২০ হাজার টাকায় ছবি নিতে চায়। এত কমে তো দেব না। তাদের প্রেক্ষাগৃহে ১০-১২ লাখ টাকার ব্যবসার সুযোগ আছে, সেখানে এই অল্প টাকায় কেন ছবি দেব? আবার অনেক হলে ‘দাগি’ চালানোর পরিবেশও নেই। এসব বিবেচনা করেই আমরা হল কম নিয়েছি। তবে বড় বড় সিঙ্গেল স্ক্রিন যেগুলো আছে, সেগুলো থেকে ‘বরবাদ’ নামলে ‘দাগি’ উঠবে।
শতভাগ সফল হতে যাচ্ছি || জাহিদ হাসান অভি প্রযোজক, জংলি
আমাদের শুরুটা খুব কমসংখ্যক হল দিয়ে হয়েছে। পরে ক্রমে ওয়ার্ড অব মাউথে দর্শকের আগ্রহ এবং হলের সংখ্যা বেড়েছে। দর্শক ইমোশনালি কানেক্ট করতে পারছেন, এর ফলে তৃতীয় সপ্তাহে এসে বুম করেছে। তিনগুণ হলে চলছে। আবার মাল্টিপ্লেক্সেও শো বেড়েছে প্রচুর। এখন দৈনিক ২৮টি শো চলছে। তার মানে ব্যবসা ভালো হচ্ছে। আর সেটার একটা অংশ স্বাভাবিকভাবেই আমরাও পাচ্ছি। সব মিলে ঠিকঠাক এগোচ্ছি।
‘জংলি’ একেবারে দেশের ছবি, দেশের আর্টিস্ট, টেকনিশিয়ান। এ রকম একটা ছবির বাজেট দুই-তিন কোটি টাকার মতো হয়। আমাদের ছবিটার বাজেটও আড়াই কোটির বেশি। তবে যেভাবে ছবিটা যাচ্ছে, তাতে আমরা খুব আশাবাদী, শতভাগ সফল হতে যাচ্ছি। দর্শকের মুখে মুখে ছবির কথা ছড়িয়ে যাচ্ছে। কোরবানির ঈদ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আবার বাইরেও অনেক দেশে অফিশিয়ালি রিলিজ দিচ্ছি। সেখান থেকেও একটা ভালো অঙ্কের আয় হবে। দেশের প্রযোজকদের জন্য ‘জংলি’ একটা দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে। আমি নিজেও আগের কোনো ছবিতে এত সাড়া পাইনি।
এসএন