সরকার কোনোভাবেই ‘কাজ’ ছাড়া সময় পেতে পারে না : আখতার

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের সময় ‘হত্যা ও দমন-পীড়নের’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ দৃশ্যমান করার পরই নির্বাচন চেয়েছে।

বিচার ও সংস্কার কাজ করা জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথাও বলেছে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের গঠন করা দলটি।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর দেড়টায় জাতীয় সংসদের এল ডি হলে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠকের মধ্যবর্তী বিরতিতে বেরিয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এসব কথা বলেন।

তার আগে সকাল ১০টার দিকে সংলাপের শুরুতে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বক্তব্য রাখেন। যে সংস্কার করলে রাষ্ট্র কাঠামোর গুণগত আমূল পরিবর্তন সম্ভব হবে, ঐকমত্য কমিশনের কাছে সেই পথ তৈরির আহ্বান জানান তিনি।

গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপির আত্মপ্রকাশ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এই গণঅভ্যুত্থান কেবল কোনো ব্যক্তির পরিবর্তন নয়, ক্ষমতা থেকে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। বরং কীভাবে রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার রক্ষা করবে, সেরকম একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল।”

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ও ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এই বৈঠক শুরু হয়। সংলাপে অংশ নেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম-আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, যুগ্ম-আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

আখতার হোসেন বলেন, “এনসিপি মনে করে অন্তরবর্তীকালীন সরকার যে এজেন্ডা-ম্যানডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, বিচার এবং সংস্কার দৃশ্যমান করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে।

“নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে, কিন্তু তার আগে বিচার এবং সংস্কার সরকারকে দৃশ্যমান করতে হবে৷ এটার জন্য যেটুকু সময় পাওয়া প্রয়োজন, সরকার সে সময়টুকু পেতে পারে। কোনোভাবেই কাজ ব্যাতিরেকে সময় পেতে পারে না।”

এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত সংবিধানের বিষয়ে আলোচনা করেছি৷ বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন, দুদক ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের মত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে পারিনি৷ “তবে পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন কেন অন্তর্ভুক্ত হয়নি সে বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছি। আমাদের মতামতগুলো জানাতে চেয়েছি।”

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে দুই ধাপে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে।

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।

আখতার বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমানে সংবিধানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বরং এখানে প্রধানমন্ত্রীকে একচ্ছত্র ক্ষমতায়ন করা হয়েছে৷ তার মধ্য দিয়েই সাংবিধানিকভাবে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ রয়েছে ৷

“আমরা ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা বলছি এবং বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের কথা বলছি৷ সেই প্রেক্ষাপটে কীভাবে সংবিধান পুনর্লিখন করা যায় এবং গণপরিষদ নির্বাচনের বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেছি৷”

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “১৬৬টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে আমরা ১২৯টির সাথে একমত হয়েছি৷ যেসব বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি সেগুলোর বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। মূলত এখন পর্যন্ত আমরা তিনটি বিষয়ে কথা বলেছি৷ প্রথম বিষয়টি হচ্ছে, প্রটেকশন অব সিটিজেন বা নাগরিকদের নিরাপত্তা।

“আমরা দেখেছি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরঙ্কুশ অধিকার নিশ্চিত হয়নি৷ সেসব বিষয়ে আমরা বিস্তারিত কথা বলেছি। দ্বিতীয় বিষয় পিসফুল ট্রানজেকশন অব পাওয়ার বা শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর। আমরা দেখেছি, যখনই রাষ্ট্রের পাওয়ার ট্রানজেকশনের সময় এসেছে তখনই দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷”

তিনি বলেন, “একটি নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আরেকটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর কীভাবে হবে, এই বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। যাতে আমাদের অতীতের যেসব দুঃখ স্মৃতি রয়েছে সেগুলোর পুনরাবৃত্তি আর না হয়৷

“তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, সংসদের স্থিতিশীলতার নাম করে ৭০ অনুচ্ছেদ দিয়ে কণ্ঠরোধ করে রাখা হয়েছে। সেটি নিয়ে কথা হচ্ছে৷ যেটির মধ্য দিয়ে আমরা একসাথে সংসদে স্থিতিশীলতা, সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা, আমাদের সংসদকে কীভাবে আরও বেশি কার্যকর করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।”

এসএম/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
একবার বিরতি দিয়ে একই ব্যক্তির তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীত্ব চায় বিএনপি Apr 20, 2025
img
এবার রোহিত শেট্টির ছবিতে যীশু! Apr 20, 2025
img
শহীদদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে: নাহিদ ইসলাম Apr 20, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে দামি পণ্যের পরিবহন স্থগিত করল ডিএইচএল এক্সপ্রেস Apr 20, 2025
img
চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত গেল বোয়িং বিমান Apr 20, 2025
img
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেক্রেটারি এখন জিয়া মঞ্চের সভাপতি Apr 20, 2025
img
দ্বিতীয় সন্তান প্রসঙ্গে লজ্জায় লাল অভিষেক বচ্চন, ভিডিও ভাইরাল Apr 20, 2025
img
প্রেমিকার বয়স ২৭ নয়, পাসপোর্টে ৪৮! প্রেমিকের চোখ কপালে Apr 20, 2025
img
'যারা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছেন, তারা তো এলিয়েন' Apr 20, 2025
img
ভারত স্থগিত করল বাংলাদেশ হয়ে সেভেন সিস্টার্সে যাওয়ার রেল প্রকল্প Apr 20, 2025