বর্ষাকাল মানেই কাদা, পানি আর রাস্তার ঝামেলা— চলতি মাস থেকে দেশের প্রায় সব এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে এবং আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই বৃষ্টি আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে।
এই বর্ষার সময়ে সড়ক ও মহাসড়কগুলো পিচ্ছিল হয়ে যায়, যে কারণে দুর্ঘটনার পরিমাণও বাড়ে। বিশেষ করে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েন মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীরা।
তাই এই সময়ে বাইক চালাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, বৃষ্টির দিনে বাইক চালানোর সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি-
মোটরসাইকেলের টায়ার পরীক্ষা করা
ভেজা ও পিচ্ছিল রাস্তায় টায়ারের গ্রিপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই বর্ষা শুরুর আগেই টায়ার ঠিকঠাক আছে কি না, হাওয়া ঠিক আছে কি না, ভালোভাবে দেখে নিন। ভালো মানের টায়ার বাইকের রোড গ্রিপ বজায় রাখে এবং হাই স্পিডে ব্রেক কষলেও ভেজা রাস্তায় স্কিড করার ঝুঁকি অনেকটাই কম থাকে।
সীমিত গতিতে বাইক চালানো
বৃষ্টির সময় দ্রুত গতিতে বাইক চালানো খুব বিপজ্জনক। কাদা-পানি জমা রাস্তায় হঠাৎ ব্রেক কষলে অথবা বাঁক নিতে গেলে বাইক পিছলে যেতে পারে। বাঁক নিতে গেলে ভুল করেও বাইকের সামনের ব্রেক কখনই কষবেন না! কারণ এতে মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই এ সময় বাইকের গতি কমাতে আগে পিছনের ব্রেক চেপে গতি কমিয়ে তারপর সামনের ব্রেক চাপতে হবে। এ সময় বাইকের গতি ৩০-৪০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখাই নিরাপদ। ধীরগতিতে বাইক চালালে নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়, অন্যথায় গতি বেশি থাকলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা থাকে।
নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা
বৃষ্টির দিনে ব্রেক চাপার সময় বাইক থামাতে বাড়তি সময় লাগে। তাই অন্য গাড়ির থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা খুবই জরুরি। এতে হঠাৎ কোনো বাধা আসলে প্রতিক্রিয়া করার সময় ও জায়গা পাওয়া যায়, ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও অনেকটা কমে যায়।
ব্রেক ঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করা
ভেজা আবহাওয়ায় ব্রেক ঠিকমতো কাজ না করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই বাইকের ব্রেক ঠিকমতো কাজ করছে কি না, সেটা আগেই পরীক্ষা করে নেওয়া। প্রয়োজনে ব্রেক অয়েল ব্যবহার করা, যেন হঠাৎ পরিস্থিতিতে ব্রেক চেপে নিয়ন্ত্রণে থাকা যায়।
ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করা
যে কোনো দুর্ঘটনা থেকে মাথাকে সুরক্ষা দিতে হেলমেট খুবই জরুরি। বৃষ্টির দিনে হেলমেট শুধু মাথা নয়, চোখেরও সুরক্ষা দেয়। বিশেষ করে যখন সামনের দিক স্পষ্ট দেখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই সাদা, হলুদ বা কমলা রঙের গ্লাসওয়ালা হেলমেট ব্যবহার করলে বর্ষায় দৃষ্টিসীমা ভালো থাকে। আর অবশ্যই চালক ও আরোহী উভয়ের হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক।
হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখা
বর্ষা মানেই অনবরত বৃষ্টি হবে। আর বৃষ্টির সময় দৃষ্টিসীমা কমে যায়। তাই বাইক চালানোর সময় সবসময় হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখুন। এতে সামনে থাকা অন্যান্য চালক সহজেই আপনার উপস্থিতি বুঝতে পারে, এতে বিপদের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
রেইনকোট ব্যবহার করা
বর্ষাকালে কখন বৃষ্টি হবে তার কোনো পূর্বাভাস থাকে না। ফলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই রেইনকোট সঙ্গে রাখুন। উজ্জ্বল রঙের বা রিফ্লেক্টিভ রেইনকোট আপনাকে অন্যদের কাছে দৃশ্যমান রাখে, যা নিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
চেন পরীক্ষা করা ও যত্ন নেওয়া
বর্ষাকালে বাইকের চেন কাদা-পানির কারণে স্লিপ করতে পারে। প্রতিদিন বাইক চালানোর আগে চেন ঠিক আছে কি না দেখে নিন। নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করুন। এতে বাইকের নিয়ন্ত্রণ ভালো থাকে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে।
বর্ষাকালে বাইক চালানো মানেই বাড়তি চ্যালেঞ্জ। তবে কিছু সতর্কতা মানলে এই সময়টাতেও নিরাপদে ও আরামদায়কভাবে রাইড করা সম্ভব। এভাবে নিজে সচেতন হোন, অন্যকেও নিরাপদ রাখুন।
এসএম/এসএন