লুটের অস্ত্র এখনো সন্ত্রাসীদের হাতে, বাড়ছে উদ্বেগ

সম্প্রতি চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী ‘মেহেদী গ্রুপ’-এর প্রধান আরিফ হোসেন ওরফে মেহেদী হাসানকে বিদেশি পিস্তল ও ৫০ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। পুলিশ জানায়, তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রটি সিএমপির ডবলমুরিং থানা থেকে লুট হওয়া একটি পিস্তল, যা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই সন্ত্রাসী চক্র চট্টগ্রামে বিভিন্ন অপরাধ চালিয়ে আসছিল।

এ ঘটনা আবারও সামনে এনেছে থানা থেকে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রের বিষয়টি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন দেশের বিভিন্ন থানার মতো চট্টগ্রামের ১২টি থানায় ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়। সেদিন ওই থানাগুলো থেকে অন্তত ৯৪৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৪ হাজার রাউন্ড গুলি লুট হয়ে যায়।

সিএমপি সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ৭৮৩টি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো ১৬২টি অস্ত্র পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। নগরবাসীর আশঙ্কা, এসব অস্ত্র এখন অপরাধীদের হাতে গিয়ে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো বিশেষ অভিযান না থাকায় নাগরিক উদ্বেগ বাড়ছে।

এর আগে, ১ মার্চ নগরীর পাহাড়তলী রানী রাসমণি ঘাট এলাকা থেকে একটি রিভলবার ও ছয় রাউন্ড গুলিসহ ছিনতাইকারী দলের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটিও থানা থেকে লুট হওয়া। ৫ মার্চ সাতকানিয়ায় একটি লাশের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া পিস্তলটিও ছিল কোতোয়ালি থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের একটি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ছাড়াও অপরাধীদের কাছে বিভিন্ন উৎস থেকে আসা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে। অপরাধ দমনে পুলিশ নিয়মিত তৎপর রয়েছে এবং বাকি অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।

তবে দীর্ঘ সময়েও সব অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া এবং সেই অস্ত্রগুলো অপরাধীদের হাতে ব্যবহৃত হওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের নাগরিকরা।

মানবাধিকার আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ৫ আগস্টের ঘটনার পর আমরা আশা করেছিলাম যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর মাধ্যমে সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হবে। কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই হয়নি। বরং এসব অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গিয়ে নাগরিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, লুট হওয়া অস্ত্র দলীয় সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের হাতে গিয়ে নির্বাচনী পরিবেশকেও বিপদে ফেলতে পারে। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের

স্বার্থে অবিলম্বে কঠোর অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো জরুরি।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ক্রাইম) মো. রইছ উদ্দীন বলেন, অভ্যুত্থানের সময় ৯৪৫টি অস্ত্র লুট হয়। এর মধ্যে ৭৮৩টি উদ্ধার করা গেছে, বাকি অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে। উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন বিজয় মিছিলের আড়ালে চট্টগ্রামের ১২টি থানায় একযোগে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতের সহায়তা ছাড়া তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ নয়: পরিকল্পনা উপদেষ্টা Apr 20, 2025
img
নির্বাচনকালীন তিন মাসের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমেদ Apr 20, 2025
img
যাদের নির্বাচন থেকে বাদ দেবেন তারা ঘরে বসে আঙুল চুষবে? : জি এম কাদের Apr 20, 2025
img
স্বস্তির বাতাস বইছে রিজার্ভে Apr 20, 2025
img
'জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার যুবক Apr 20, 2025
img
গাজায় আরও ৩০ হাজার তরুণকে যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ Apr 20, 2025
img
ছোট ছেলে আব্রামের পেছনে মাসে কত খরচ শাহরুখের Apr 20, 2025
img
যারা দেশে বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়, তারা কখনোই জনগণের বন্ধু হতে পারে না : মির্জা ফখরুল Apr 20, 2025
img
চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ২ জন Apr 20, 2025
img
সংস্কার কাজে দেরি না করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Apr 20, 2025