পেঁয়াজের দাম বাড়লেও লোকসানের আশঙ্কায় চাষিরা

গত দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ দ্বিগুণ হলেও রাজশাহীর মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষিরা মারাত্মক লোকসানের মুখে পড়েছেন। গত মৌসুমে উচ্চমূল্য দেখে আগাম জাতের পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত হলেও এবার অতিবৃষ্টি, ফলন হ্রাস এবং বাজারে কম দামের কারণে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না তারা। ফলে অনেক চাষি ভবিষ্যতে পেঁয়াজ চাষ চালিয়ে যাবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছেন।​

রাজশাহীর পেঁয়াজচাষিরা আরও বলছেন, ভালো দামের আশায় যারা আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন, ন্যায্য দাম না পেয়ে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে যারা ছাঁচি পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন তারা কিছুটা দাম পেয়েছেন। কোনোভাবে আবাদের খরচ তুলতে পেরেছেন। আগাম জাতের পেঁয়াজচাষিরা পেঁয়াজ বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না।

বাগমারার তাহেরপুরের পেঁয়াজচাষি মজিবুর রহমান জানান, তিনি এবার পৌনে তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। মার্চের শেষে জমিতে পেঁয়াজ তোলার কাজ শেষ করেন। মৌসুম ভালো হওয়ায় এবার প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ৫৬ মন করে। পৌনে তিন বিঘায় পেঁয়াজ পেয়েছেন প্রায় ১৭০ মন। পৌনে তিন বিঘার জমি ভাড়াসহ পেঁয়াজ আবাদে তার মোট খরচ হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। সব পেঁয়াজ বিক্রি করে তিনি পুরো টাকা তুলতে পারবেন কিনা চিন্তায় আছেন।

এদিকে চাষি মজিবুর রহমান মার্চের শেষে খরচ মেটাতে জমি থেকে তুলেই কেজিপ্রতি ২০ টাকা করে ১২ মন পেঁয়াজ বিক্রি করে পেয়েছেন ১৬ হাজার টাকায়। কয়েক দিন পরে ৩২ টাকা কেজি হিসেবে আরও ৫০ মন বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকা মন দরে। এখন তাহেরপুর মোকামে পাইকারিতে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মন দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

আমন আবাদের খরচ মেটাতে বাকি পেঁয়াজ তিনি বিক্রি শুরু করেছেন। মজিবুর রহমানের প্রশ্ন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে ৬০ টাকা কেজি হিসেবে ২ হাজার ৪০০ টাকা মন দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু চাষিরা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন ১ হাজার ৮০০ মন দরে। সব পেঁয়াজ বিক্রি করে তিনি হয়তো কোনোমতে খরচ তুলতে পারবেন কিন্তু খাটা খাটনির সবই বেকার।

পুঠিয়ার মাহেন্দ্রা গ্রামের চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, এবার তিনি এক বিঘায় পেঁয়াজ করেছিলেন। পেঁয়াজ পেয়েছিলেন ৪০ মন। পেঁয়াজ আবাদে তার খরচ হয়েছিল ৩৮ হাজার টাকা। জমি থেকে তুলে ৮০০ টাকা মন দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ৩২ হাজার টাকা।

এবার পেঁয়াজ চাষ করে তার ৬ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এই পেঁয়াজচাষি আরও বলেন, বাড়িতে পেঁয়াজ রাখার জায়গা নেই। ফলে জমি থেকে তুলেই বিক্রি করে দিয়েছি।

রাজশাহীর আরও কয়েকটি এলাকার পেঁয়াজচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার রাজশাহীতে বিঘাপ্রতি পেঁয়াজের ফলন হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ মন। এক বিঘায় পেঁয়াজ চাষে খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। পেঁয়াজের ফলন বিবেচনায় চাষিদের এবার লোকসান হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অধিকাংশ চাষি জমি ধার-দেনা করে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তারা দেনা মেটাতে জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ কারণে রাজশাহীর চাষিরা পেঁয়াজের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বলেন, কিছু পেঁয়াজ এখনও জমিতে রয়েছে। কিছু পেঁয়াজচাষিদের কাছেও রয়েছে। কৃষক যাতে উৎপাদনের শুরুতে ভালো দাম পায়, সে জন্য তারা এয়ার ফ্লো পদ্ধতিতে কৃষকের বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার নির্মাণের জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন।

এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজ অনেক উৎপাদন হয়েছে, সে জন্য ছাঁচি পেঁয়াজ ওঠার প্রথম দিকে পেঁয়াজের দাম কম ছিল। এবার পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে না। তাই এখন চাষিরা একটু লাভের মুখ দেখবেন।

 আরএম/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আমার কাছে মাঝে মধ্যে মনে হয়, সরকার আছে নাকি নেই : রাশেদ খান Sep 18, 2025
img
৭ কলেজ ইস্যুতে ফের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা Sep 18, 2025
img
দেশের মিডিয়া এখনও নিয়ন্ত্রিত : নাহিদ ইসলাম Sep 18, 2025
img
আমাকে আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল: নাহিদ ইসলাম Sep 18, 2025
img
ইভ্যালির রাসেল ও শামীমার ৩ বছরের কারাদণ্ড Sep 18, 2025
img
লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন আরও ১৭৬ বাংলাদেশি Sep 18, 2025
img
ঢাকায় ফ্রান্স চালু করল অত্যাধুনিক ভিসা সেবা কেন্দ্র Sep 18, 2025
img
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর অচল : নিলোফার মনি Sep 18, 2025
img
চাকসু নির্বাচনে প্যানেল ঘোষণা করল ছাত্রদল Sep 18, 2025
img
ফিরেছে নেহাল, স্কোয়াডে নেই আরিফিন Sep 18, 2025
img
সৌদির নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্র নয়, প্রধান সঙ্গী এখন পাকিস্তান Sep 18, 2025
img
দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের গোপন মিশন : রনি Sep 18, 2025
img
পাকিস্তান-সৌদি চুক্তি নিয়ে ভারতের বার্তা Sep 18, 2025
img
কলকাতার বাজারে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি ইলিশ Sep 18, 2025
img
কথা রাখলেন যোগী আদিত্যনাথ, দিশার বাড়িতে হামলাকারী ২ জন নিহত Sep 18, 2025
img
মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মেলায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ Sep 18, 2025
img
গ্রামে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম রাখা উচিৎ : আরশ খান Sep 18, 2025
img
কষ্টার্জিত জয়ে আমিরাতকে হারিয়ে আবারও পাকিস্তান অধিনায়কের হুঙ্কার Sep 18, 2025
img
শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের শাস্তি চাইলেন নাহিদ Sep 18, 2025
img
অবশেষে বাংলাদেশে চালু হচ্ছে এইচবিও ম্যাক্স Sep 18, 2025