কুমিল্লায় বিএনপির কাউন্সিল ঘিরে সংঘর্ষে গাড়ি ভাঙচুর, আহত ১০

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলকে ঘিরে দুই সভাপতি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সভাপতি প্রার্থী মাজেদুল ইসলাম বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে কাউন্সিলস্থলে যাচ্ছে এমন অভিযোগে গাড়ি বহরে হামলা করে অপর প্রার্থী আক্তার বেপারীর সমর্থকরা। এ সময় ১০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে, তবে আহতরা বহিরাগত হওয়ায় তাদের নাম জানা যায়নি।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫টায় উপজেলার মোহনপুর-উজিরাকান্দি ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে এ ঘটনা ঘটে।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মেহেদী হাসান সেলিম ভূইয়া তার ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট করেন, আজকের মজিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে তিতাস উপজেলা যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল, শ্রমিকদল, জাসাসের সকল নেতৃবৃন্দকে উপস্থিত থেকে কাউন্সিলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য আহবান করছি, কোনো প্রকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করব ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরো লিখেছেন- বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কোনো প্রার্থী মোটরসাইকেল মহড়া দিতে পারবেন না, দিলে তার প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। প্রার্থী অবশ্যই ওয়ার্ড কমিটির সদস্য থাকতে হবে। আগে পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। প্রার্থী নিজ এলাকার ভোটার হতে হবে।

সিনিয়র নেতার এমন পোস্ট দেখে ইউনিয়নের তৃণমূল নেতাকর্মীরা সতর্ক হন এবং ঐক্যবদ্ধ হন বহিরাগত সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়নের মোহনপুর দাখিল মাদরাসা মাঠে কাউন্সিল শুরু হলে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কাউন্সিলস্থলে যাওয়ার পথে জানতে পারে মাজেদুল ইসলাম মন্টু বহিরাগত সন্ত্রাসীরা গাড়ি বহর নিয়ে কাউন্সিলস্থলে আসছে, তখন নেতাকর্মীরা মন্টুর সন্ত্রাসী বাহিনী গাড়ি বহরে হামলা করে।

তারা আরো বলেন, ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম করেছে মাজেদুল ইসলাম মন্টুর।

তিনি উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এবং গঠিত আহ্বায়ক কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মতামতের মূল্যায়ন না করে এবং সদস্য সচিবের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে আহ্বায়ক মাজেদুল ইসলাম মন্টু তার একক ক্ষমতাবলে স্বজনপ্রীতি, একই পরিবারে একাধিক সদস্য, আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করাসহ নানা অনিয়ম করেছেন। ১, ৩, ৪, ৫,৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এই কমিটিগুলো বিলুপ্ত করে পুনরায় নতুন করে কমিটি করার জন্য উপজেলা নেতৃবৃন্দের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

তারা বলেন, মাজেদুল ইসলাম মন্টু হলো আওয়ামী পরিবারের লোক, তার বড় ভাই শাহ আলম তিতাস উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি, ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট উপজেলার মৌটুপী বাসস্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে এসে মন্টুর উপস্থিতিতে মজিদপুর ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা করে অন্তত ১০ জনকে আহত করে, তখন মন্টুকে পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে হাসতে দেখা গেছে একটি ভিডিও ফুটেজে।

তৃণমুল নেতাকর্মীরা আরো বলেন, তার ভাইয়ের পরামর্শক্রমে এবং আওয়ামী লীগের লোকদের সুযোগ-সুবিধা দিতেই নিজের মনমতো করে কমিটিগুলো করছে। তাদের দাবি মন্টুকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদ থেকে দ্রুত অপসারণ না করলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চরম খেসারত দিতে হবে দলটিকে।

সভাপতি প্রার্থী আক্তার বেপারী বলেন, আমি সম্মেলনস্থলে ছিলাম, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি শত শত লোক, বহিরাগতদের আটক করেছে এসময় ওসিকে সঙ্গে নিয়ে উভয়কে সরিয়ে দিয়েছি। কে বহিরাগতদের এনেছে জানতে চাইলে আক্তার বেপারী বলেন মন্টু এনেছে।

মাজেদুল ইসলাম মন্টু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো বহিরাগত লোক নেইনি, সবাই আমার উপজেলার দড়কান্দি ও শোলাকান্দির লোক এবং তারা দলীয় লোক, পরে কথা বলব বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. ওসমান গনি ভূইয়া বলেন, কাউন্সিলস্থল থেকে অনেক দূরে ঝগড়া হয়েছে তবে আমাদের কাউন্সিল শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে।

তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদ উল্যাহ বলেন, ঘটনাস্থলে আমি উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি শান্ত করি। তবে বেশ কয়েকজন আহত হলেও তাদের নাম জানা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরআর/এসএন 

Share this news on: