পরকীয়ার জেরে কনস্টেবল হত্যার ঘটনায় স্ত্রী ও বান্ধবী গ্রেফতার

যাত্রাবাড়ীতে পরকীয়ার কারণে প্রেমিক ও বান্ধবী মিলে পুলিশ কনস্টেবল হুমায়ুন কবির (৪৪)কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। সোমবার সকালে দয়াগঞ্জে তার বাসার নিচ থেকে পুলিশ সদস্যের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় হুমায়ুনের ছোট ভাই মোঃ খোকন হাওলাদার (৩৯) বাদী হয়ে তিনজনকে এজাহার নামীয় আসামী করে এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

ঘটনায় পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হুমায়ুনের স্ত্রী সালমা বেগম (৩২) এবং তার বান্ধবী মরিয়ম বেগম (৩৮) নামে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে এখনো গ্রেফতার হয়নি রাজিব হোসেন (২৬) নামের সেই প্রেমিক । এদিকে মামলার তদন্তে হত্যার চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। 

হুমায়ুন কবির পুলিশে কনস্টেবল পদে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকার পরিবহন বিভাগের জলকামান ড্রাইভার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তার স্ত্রী সালমা বেগম, ছেলে কাওসার হোসেন ইমন (১৩) ও মেয়ে তুবা (৭) সহ সপরিবারে যাত্রাবাড়ী থানাধীন দয়াগঞ্জ বটতলা জজ মিয়ার বাড়ীর ৩য় তলায় ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করত। 

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, হুমায়ুনের ছোট ভাই আল মামুনের স্ত্রী'র বড় ভাই রাজিব হোসেন আত্মীয়তার সুবাদে প্রায়ই হুমায়ুনের বাসায় যাতায়াত করত। এর সুবাদে হুমায়ুনের স্ত্রী সালমা’র সাথে রাজিব অবৈধ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। স্ত্রীর পরকীয়ার প্রেমের বিষয়ে হুমায়ুন জানতে পারে। তার সন্তানদের কথা ভেবে স্ত্রীকে একাধিকবার সতর্ক করে। তারপরও তাদের সর্ম্পক চলমান রাখে।


এ বিষয়ে ২৫ এপ্রিল হুমায়ুনের দয়াগঞ্জের ভাড়া বাসায় তার স্ত্রীর বড় ভাই হারুন, ফারুক, মানিকসহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে পারিবারিকভাবে শালিস বৈঠক হয়। উক্ত শালিসে সালমা তার স্বামী হুমায়ুনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয় এবং আর কোন অনৈতিক কর্মকান্ড করিবে না মর্মে জানায়। শালিসের পর সালমা হুমায়ুনের সাথে প্রায়ই বাকবিতন্ডা করত। 

হুমায়ুন কবিরের ছেলে কাওসার হোসেন ইমন ও মেয়ে তুবা'র কথা অনুযায়ী ২৭ এপ্রিল রোববার রাত অনুমান সাড়ে ১০ ঘটিকার সময় হুমায়ুন কবির তার ডিউটি শেষে বাসায় আসে এবং খাওয়া দাওয়া করে। কিছুক্ষণ পর দুই ছেলে মেয়ে তাদের নিজ নিজ রুমে ঘুমিয়ে পড়ে।

২৮ এপ্রিল সকাল আনুমানিক সোয়া ৭ ঘটিকার সময় ওই বাসার নিচে বাউন্ডারির মেইন গেইটের ভিতরে হুমায়ুনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে ওই বাড়ির এবং এলাকার লোকজন। এসময় মৃতদেহের গলার চারপাশে কালো দাগ ও ডান চোখে কালচে দাগসহ নাক ও কান দিয়া রক্ত বের হচ্ছিল। হুমায়ুনের বাসার দরজা বাহির হইতে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

এদিকে গ্রেফতারকৃত সালমা ও তার বান্ধবী মরিয়মকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। অকপটে হত্যার ঘটনা বলতে থাকেন কনস্টেবল হুমায়ুনের স্ত্রী সালমা। কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়, কীভাবে পরিকল্পনা এবং কারা এই হত্যায় জড়িত সব কিছু।

সালমার সঙ্গে তার প্রেমিক রাজিবের সাথে এক থেকে দেড় বছর ধরে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। সেই প্রেমিক সালমার স্বামীর নিকটাত্মীয়। প্রথমে মোবাইল ফোনে এমনিতেই তারা কথা বলতেন। পরে তাদের মধ্যে প্রেম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরকীয়ায় আসক্ত হওয়ার পর সালমা সবসময় সেই ছেলের সঙ্গে কথা বলতেন। বিষয়টি নানা সময়ে হুমায়ুনের চোখেও ধরা পড়ে। তিনি জানতে পেরে পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীকে নানাভাবে শাসিয়েছেন ও সতর্ক করেছেন। সামলাতে না পেরে দুই পরিবারের সঙ্গে শালিস বৈঠকও করেছেন। কেন শালিস বৈঠক বসিয়েছেন সেজন্য হুমায়ুনের প্রতি ক্ষুদ্ধ ছিলেন সালমা। এই ক্ষোভ থেকে সালমা সেই ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্লাটে থাকা মরিয়ম এবং তার প্রেমিক রাজিবকে নিয়ে হুমায়ুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কামরুজ্জামান তালুকদার গণমাধ্যমকে বলেন, পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রী সালমাকে এ পথ থেকে ফেরাতে স্বামী হুমায়ুন কবির নানাভাবে চেষ্টা করেছেন কিন্তু পারেননি। শেষমেষ দুই পরিবার সালমা ও সেই পরকীয়া প্রেমিককে নিয়ে বিচারে বসেন। এটাই ছিল সালমার ক্ষোভ। তাকে কেন সবার সামনে অপমানিত করা হলো। এই ক্ষোভ থেকে মূলত হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। 

এ বিষয়ে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, এটি পরকিয়া প্রেম থেকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত আমরা তার স্ত্রী এবং এক নারীকে গ্রেফতার করেছি। সেই পরকীয়া প্রেমিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। 

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আন্দোলনে বিকল্প যোগাযোগের গোপন ছক ফাঁস করলেন শিবির সভাপতি Jul 07, 2025
img
৭ জুলাই: ঢাকায় বাংলা ব্লকেডের ১ বছর Jul 07, 2025
img
মাহমুদুর রহমানের মায়ের মৃত্যুতে তারেক রহমানের শোকপ্রকাশ Jul 07, 2025
img
কুয়াকাটায় এক ইলিশ বিক্রি সাত হাজার সাতশ টাকায় Jul 07, 2025
img
বাল্কহেড আটকিয়ে চাঁদাবাজি, গোয়াইনঘাটে ৬ জন গ্রেফতার Jul 07, 2025
img
শেখ হাসিনা কি দিল্লি থেকে লন্ডনে যাচ্ছেন? Jul 07, 2025
img
রাজধানীর দুই স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ Jul 07, 2025
img
স্বজন হারালেন জামায়াত আমির, জামায়াতের শোক প্রকাশ Jul 07, 2025
img
জামায়াত আমিরের শাশুড়ি ইন্তেকাল করেছেন Jul 07, 2025
img
বিদায়ী সংবর্ধনা শেষে গ্রেফতার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান Jul 07, 2025
img
অসুস্থ চালকের জায়গায় গাড়ি চালালেন হাসনাত আব্দুল্লাহ Jul 06, 2025
img
যৌথ অভিযানে ধরা পড়ল আন্তঃজেলা ডাকাত সর্দার Jul 06, 2025
img
প্রয়োজনে পর্যাপ্ত ডকুমেন্টস সরবরাহ করা হবে : ফরহাদ Jul 06, 2025
img
টলিপাড়ার দ্বন্দ্বে কাজহীন অনির্বাণ Jul 06, 2025
img
কোনো দেশে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারিত থাকার নজির নেই : সালাহউদ্দিন Jul 06, 2025
img
রেকর্ড জয়ে সিরিজে সমতা ভারতের Jul 06, 2025
img
ব্যাংকক থেকে হাতিরঝিল : সংবর্ধনা নিয়ে ফুটবলারদের বার্তা Jul 06, 2025
img
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা, চলছে গোলাগুলি Jul 06, 2025
img
৫ আগস্ট গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব : নাহিদ Jul 06, 2025
img
বিশ্বরেকর্ড গড়লেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক Jul 06, 2025