নির্বাচন ঠেকাতে চাওয়া শক্তিকে ক্ষমা করবে না জনগণ : আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যারা জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনে ছিল না, এখন তারাই বলছে, নির্বাচন না হলেই ভালো। তারা এক ধরনের সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু জনগণ তাদের এ সুযোগ বেশিদিন দেবে না। তাদের জনগণ কখনো ক্ষমা করবে না।

বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে নগরীর কাজীর দেউড়ী নসিমন ভবনস্থ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নুর আহম্মদ সড়কে মহান মে দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের শ্রমিক মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন ছাড়া কাউকে ক্ষমতা গ্রহণের বৈধতা দেবে না। যারা নির্বাচন ঠেকাতে চায়, তাদের প্রতি দেশের মানুষের বার্তা স্পষ্ট। তাদের জনগণ ক্ষমা করবে না এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মাটিতে তাদের কোনো ইচ্ছাও পূরণ হবে না। জনগণ নির্বাচন ঠেকাতে চাওয়া শক্তিকে ক্ষমা করবে না।

সম্প্রতি মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সম্ভাব্য ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারের কথাবার্তা প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, যদি দেশে একটি নির্বাচিত সরকার থাকত, তাহলে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে সংসদে আলোচনা হতো, জনগণের মতামত বিবেচনা করা হতো। অথচ এখন এমন সিদ্ধান্ত কে নিচ্ছে, কাদের সঙ্গে বসে নিচ্ছে, তা জাতি জানে না।

তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, জাতিসংঘের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সম্মতিতেই শুধু এই করিডর সম্ভব, তা-ও নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনের শর্তে। তাহলে এখন যারা বাইরে বসে এসব দিচ্ছেন, তারা কিভাবে এত সাহস পাচ্ছেন?

আমীর খসরু বলেন, বিএনপির ৩১ দফা রোডম্যাপে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা এবং তাদের পরিবারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণমূলক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় যেভাবে শ্রমিক স্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি বলেন, দেশে এখন নির্বাচিত সরকার নেই। ফলে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা, পারিশ্রমিক ও চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না। মালিক ও প্রশাসনের একচেটিয়া অবস্থানে শ্রমিকরা নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।

তাই সবাইকে এগিয়ে এসে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিতে সহায়তা করতে হবে। ন্যায্য পাওনা আদায়ের লড়াইয়ে শ্রমিকদের পাশে আছে বিএনপি।

আমীর খসরু আরো বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলন হতে হবে শান্তিপূর্ণ এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ। যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক না ছড়ায় এবং দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কারণ, দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিদেশি বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের অবদান ছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও রাজনীতি কোনোটিই সম্ভব নয়। যারা এ দেশের শিল্প-কারখানা, অবকাঠামো, পরিবহন খাতকে সচল রাখেন, তাদের বাদ দিয়ে দেশের কোনো অগ্রগতি সম্ভব না।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা গত ১৬ বছর ধরে লড়াই করছি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। গণতন্ত্রের বাহনই হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচন ছাড়া জনগণের ক্ষমতায়ন ও জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন সম্ভব নয়। নির্বাচন ছাড়া জনগণের মালিকানা ফেরানো সম্ভব নয়।

আমীর খসরু বলেন, যারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন, তারা নিজেরাই অনির্বাচিত সরকারের সুবিধাভোগী। তারা এখন নানা শর্ত দিচ্ছেন, এই না হলে নির্বাচন হবে না, ওই না হলে নির্বাচন হবে না। এসব বলে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। কারণ, তারা জানেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে গেলে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান মুখ থুবড়ে পড়বে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এ এম নাজিম উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহারের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া।

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সবাইকেই ট্রানজিশন পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, বাংলাদেশের পারফরমেন্স প্রসঙ্গে জয়সুরিয়া Jul 05, 2025
img
বাবার দ্বিতীয় বিয়ের খবরে ক্ষুব্ধ সানি, তেড়ে যান হেমা মালিনীর দিকে! Jul 05, 2025
img
১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি হারানোর মুখে সাইফ আলি খান Jul 05, 2025
img
‘দ্য ট্রেইটার্স ইন্ডিয়া’র মঞ্চে উরফি জাভেদ ও নিকিতার জয় Jul 05, 2025
img
আগে পিওনের ৪০০ কোটি টাকা বানাতে লেগেছে ১৫ বছর কিন্তু এখন লাগে ৩ মাস : রুমিন ফারহানা Jul 05, 2025
img
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণরা নতুন সমাজ গড়বে : সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা Jul 05, 2025
img
ক্লাব বিশ্বকাপে আল হিলালকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল ব্রাজিলের ফ্লুমিনেন্স Jul 05, 2025
img
‘বাবা আমাকে সাহায্য করেনি’, অভিনয় জীবন নিয়ে মিঠুন পুত্রের আক্ষেপ Jul 05, 2025
img
দেশের বাজারে আবারও বাড়ল সোনার দাম Jul 05, 2025
img
হজ শেষে দেশে ফিরলেন ৬৫ হাজার ৫৭৩ হাজি Jul 05, 2025
img
‘আমি পাঁচ বছরের মধ্যে বিয়ে করে মা হতে চাই’, জায়েদ খানকে তিশা Jul 05, 2025
img
রোমে পেট্রোল স্টেশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, আহত ৪৫ Jul 05, 2025
img
চট্টগ্রামে তাজিয়া মিছিলে আতশবাজি-অস্ত্র নিষিদ্ধ করল সিএমপি Jul 05, 2025
img
উড্ডয়নের আগেই অসুস্থ হয়ে লুটিয়ে পড়লেন এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট Jul 05, 2025
img
আমরা যেনতেন নির্বাচন চাই না : জামায়াত আমির Jul 05, 2025
img
এ কে আজাদের বাসভবনে হামলা, ফরিদপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা Jul 05, 2025
img
গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা Jul 05, 2025
img
৩৬ জুলাই শহীদ হওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলাম, সুযোগ এলে পিছপা হবো না: আসিফ Jul 05, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এক দিনে নিহত আরও ১৩৮ Jul 05, 2025
img
দেশের ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস Jul 05, 2025