রাবি ছাত্রদলের স্ক্রিনশট ফাঁস, শিক্ষার্থীদের পেটানোর পরিকল্পনা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে ‘বটবাহিনী’ উল্লেখ করে পেটানোর পরিকল্পনার একটি কথোপকথনের স্ক্রিনশট সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। স্ক্রিনশটগুলোতে ‘রাবি ছাত্রদল’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে কথোপকথন করতে দেখা গেছে।

সোমবার (৫ মে) সকালে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের এই স্ক্রিনশটটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

স্ক্রিনশটটিতে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে কথোপকথন করতে দেখা যায়। এরমধ্যে রয়েছেন রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. তুষার শেখ, শাখা ছাত্রদলের বহিষ্কৃত কর্মী ও জিয়া সাইবার ফোর্স রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম হাসিব এবং যুগ্ম-আহ্বায়ক আহসান হাবীব।

সেখানে হাসিবুল ইসলাম হাসিবকে বলতে দেখা গেছে, আগামীকাল ক্যাম্পাসে আসেন, এই বট বাহিনীর ছেলেগুলাকে চিহ্নিত করে দিন। এক সালাকেও ছাড় হবে না। ক্যাম্পাসের বাইরে বের হবে না? সবগুলারে একটা একটা করে ধরে ছিড়ে ফেলে দিব।

পরের মেসেজে আহসান হাবিবকে বলতে দেখা যায়, যাচাই-বাছাই ছাড়াই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংগঠন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানহানিকর ও মিথ্যা পোস্ট অ্যাপ্রুভ করায় এদের বিরুদ্ধেও মামলা করা যাবে।
হাসিবুল ইসলাম হাসিবের মেসেজের প্রতিউত্তরে তুষার শেখকে বলতে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের বাইরে-ভেতরে না মামা, এদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই পিটাতে হবে।

আহসান হাবিব আবার বলেন, কিন্তু বাদি হবে কে? এদের বিরুদ্ধে মামলা করা মানে শিবিরের বিরুদ্ধে মামলা করা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাহস...!

অন্য আরেকটি স্ক্রিনশটে দেখা গেছে সেখানে অধিকাংশ মেসেজগুলো মুছে ফেলা হয়েছে। তবে একটি মেসেজ দেখা যায়। সেখানে তুষার শেখ লিখেছেন, গায়ে হাত দেওয়া অন্যায় ঠিক। কিন্তু এদেরকে পিটানো ছাড়া কোনোভাবেই সোজা করা সম্ভব নয়। এদেরকে পিটুনি দিলে সব ঠিক।

ভাইরাল হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের স্ক্রিনশট দুইটি সত্য বলে স্বীকার করেছেন স্ক্রিনশটে নাম থাকা দুই নেতা।

স্ক্রিনশটটি সত্য কিনা জানতে চাইলে কথোপকথনকারীদের অন্যতম একজন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. তুষার শেখ বলেন, হ্যাঁ, এটাতো অস্বীকার করার কিছু নাই। আমি বট বাহিনীকে পিটাতে চেয়েছি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের না। আপনারা এভাবেই নিউজে উল্লেখ করবেন। আমি মার্ডার করলে আমাকে মার্ডারের আসামি দিবেন, চুরির আসামি দিবেন না আমাকে।

উল্লিখিত বটবাহিনীকে পিটুনি দেওয়া সঠিক বা, আইনসম্মত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাতো অবশ্যই সঠিক না। কিন্তু তাঁরা যে ফেক আইডি খুলে অপপ্রচার চালাচ্ছে, এটাকেতো আমরা মেনে নিব না। ছাত্রদলের সাধারণ কর্মী হিসেবে অপপ্রচারতো রোধ করতেই হবে।

আরেক কথোপকথনকারী শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আহসান হাবীব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ আছে। এখানে ফেক আইডি থেকে ছাত্রদল বা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নামে বিভিন্ন পোস্ট অ্যাপ্রুভ করা হয়। এবিষয়ে ওই গ্রুপে একজন জানতে চেয়েছিল যে, এবিষয়ে মামলা করা যাবে কিনা। তখন আমি আইনের ছাত্র হিসেবে বলেছি যে, মামলা করা যাবে। এখানেতো আমিতো অন্য আর কিছু বলি নাই। এখানে আমাকে জড়ানো হচ্ছে কেনো বুঝছি না।

বারবার যোগাযোগ করেও আরেক কথোপকথনকারী ও শাখা ছাত্রদলের কর্মী হাসিব হাসানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রথমে তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু পরে আর দেখা করেননি। পরে কল দিলেও আর রিসিভ করেনি।

এবিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, আমাদের এরকম অনেকগুলো গ্রুপ রয়েছে। তবে, আমি ওই গ্রুপটাতে নেই। স্ক্রিনশটগুলো আমিও ফেসবুকে দেখেছি। ব্যস্ততার কারণে সবাইকে এখনো জিজ্ঞাসা করতে পারিনি। আমি একজনকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছি। সে অস্বীকার করেছে। তবে, এটা প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে যতবড় নেতা বা হোক। ছাত্রদলে তাকে রাখার এক বিন্দু সুযোগও নাই।

প্রসঙ্গত, গতবছরের ৫ আগস্টের পরে মামলা দিয়ে চাঁদাবাজি করার বিষয়ে একটি কল রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর ১৯ অক্টোবর শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আহসান হাবিবকে সাংগঠনিক পদ থেকে এবং কর্মী হাসিবুল ইসলাম হাসিবকে প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

এফপি/ এস এন   

Share this news on:

সর্বশেষ