বলিউডের যেসব কারিগরদের জন্ম পাকিস্তানে!

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক বরাবরই উত্তেজনা, রাজনীতি ও সংঘাতে আচ্ছন্ন। কাশ্মীর ইস্যুতে সম্প্রতি আবারও ভারতে নিষিদ্ধ হয়েছেন পাকিস্তানি শিল্পীরা। এটাই প্রথম নয়—প্রতিবারই উত্তেজনার প্রথম বলি হয় বিনোদন জগত।

তবে এই রাজনৈতিক বিভাজনের মাঝেই ইতিহাস রেখেছে এক পরিহাস। পাকিস্তানের মাটিতে জন্ম নেওয়া এমন অনেক কিংবদন্তি শিল্পী একসময় ভারতীয় চলচ্চিত্রে রেখেছেন অবিস্মরণীয় অবদান। অবিভক্ত ভারতের সেই সন্তানেরা দেশভাগের পর মুম্বাইয়ে এসে গড়েছিলেন বলিউডের ভিত্তি।

নিচে তুলে ধরা হলো এমন পাঁচজন শিল্পীর কথা, যাদের শিকড় পাকিস্তানে হলেও, পরিচিতি তারা পেয়েছেন ভারতের চলচ্চিত্র ভুবনে অমূল্য রত্ন হিসেবে।

দীলিপ কুমার

ভারতীয় সিনেমার ‘ট্র্যাজেডি কিং’ নামে খ্যাত দীলিপ কুমার (আসল নাম মোহাম্মদ ইউসুফ খান) জন্মেছিলেন ১৯২২ সালে, বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ারে। তিনি ছিলেন প্রথম সুপারস্টারদের একজন, যার অভিনয়ে বাস্তবতা আর আবেগের মিল ছিল অসাধারণ।

‘মুঘল-এ-আজম’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘দেবদাস’—এইসব চলচ্চিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় তাকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছে। দেশভাগের পর ভারতেই থেকে যান তিনি এবং হয়ে ওঠেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের চিরন্তন মুখ।

রাজ কাপুর

বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ারের কিসসা খোয়ানি বাজার এলাকায় ১৯২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন রাজ কাপুর। কাপুর পরিবার তখন থেকেই থিয়েটার ও সিনেমার সঙ্গে জড়িত ছিল। রাজ কাপুর শুধু একজন অভিনেতা বা পরিচালকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন ভারতীয় সিনেমার এক ‘শো-ম্যান’।

‘আওয়ারা’, ‘শ্রী ৪২০’, ‘মেরা নাম জোকার’—এসব চলচ্চিত্রে তিনি শুধু বিনোদন দেননি, সামাজিক বার্তা দিয়েছেন। তার সিনেমা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে।

গুলজার

সম্পুরন সিং কালরা, যাকে আমরা গুলজার নামেই চিনি। জন্মেছিলেন ১৯৩৪ সালে বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাবের ডিনা গ্রামে। দেশভাগের সময় পরিবার নিয়ে ভারতে চলে আসেন তিনি। পরবর্তীতে কলকাতায় দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। তার গানে, কবিতায়, চিত্রনাট্যে এবং পরিচালনায় ছড়িয়ে আছে এক গভীর দর্শন ও আবেগ।

‘চুপকে চুপকে’, ‘আন্ধি’, ‘মাচিস’, ‘মৌসম’–এমন অসংখ্য সিনেমায় তিনি নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার লেখা ‘জয় হো’ গানটি অস্কার জিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিও অর্জন করে।

দেব আনন্দ

এই স্টাইলিশ অভিনেতার জন্ম ১৯২৩ সালে বর্তমান পাকিস্তানের গুরদাসপুর জেলায়। দেব আনন্দ ছিলেন একাধারে অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক। তার হাসি, চলাফেরা, সংলাপ বলার ধরন—সবই ছিল অনন্য।

‘গাইড’, ‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’, ‘জুয়েল থিফ’, ‘কালা পানি’—তার ক্যারিয়ারের সেরা কাজগুলোর মধ্যে পড়ে। দেব আনন্দ ভারতীয় নারীদের কাছে রীতিমতো এক স্বপ্নপুরুষ ছিলেন। তার অভিনয় ক্যারিয়ার ছড়িয়ে ছিল ছয় দশকেরও বেশি সময় জুড়ে।

সুনীল দত্ত

১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন সুনীল দত্ত, বর্তমান পাকিস্তানের ঝেলাম জেলায়। তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন, কিন্তু সিনেমার টানে বলিউডে পা রাখেন। তার সাদামাটা অথচ দৃঢ় ব্যক্তিত্ব দর্শকদের হৃদয়ে দাগ কাটে।

‘মাদার ইন্ডিয়া’, ‘সাধনা’, ‘মেরে মেহবুব’, ‘ওয়াক্ত’–এর মতো ছবিতে তিনি সফল অভিনয় করেন। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন দায়িত্ববান, স্ত্রী নার্গিসের অসুস্থতার সময় থেকে ছেলে সঞ্জয় দত্তের কঠিন সময় পর্যন্ত পাশে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রীও ছিলেন।

আরএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দেশের রাজনৈতিক ভূদৃশ্য নিয়ে প্রেস সচিবের ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ May 12, 2025
img
‘সানাম তেরি কাসাম’-এর সিক্যুয়াল থেকে বাদ পড়লেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী May 12, 2025
img
গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে বেলজিয়ামে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ May 12, 2025
img
ডিআর কঙ্গোতে বন্যায় প্রাণ গেল শতাধিক মানুষের May 12, 2025
img
বাহরাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশি দূতের বৈঠক May 12, 2025
img
বাবার চার বিয়ে দেখে অভিনেত্রীর ৬ সম্পর্ক, টেকেনি একটাও! May 12, 2025
img
জামায়াত-শিবিরকে কাজে লাগানো শেষ- রাশেদ খাঁন May 12, 2025
img
৩২ বছরের পুরনো রেকর্ড ভাঙলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে May 12, 2025
img
ফারিণের পোস্টার মিলে গেল কোরিয়ান ছবির পোস্টারের সঙ্গে! May 12, 2025
img
সৌদি আরব পৌঁছেছেন ৩৮ হাজার ৫৭০ বাংলাদেশি May 12, 2025