২০১৬ সালের আলোচিত রোমান্টিক ছবি সানাম তেরি কাসাম যখন সম্প্রতি রি-রিলিজ হয়ে আবার দর্শকদের মন জয় করে নেয়, তখনই শুরু হয় এর সিক্যুয়েল নিয়ে আলোচনা। সিনেমার দুই মূল চরিত্র বলিউড অভিনেতা হর্ষবর্ধন রানে এবং পাকিস্তানি তারকা মাওরা হোসেন।প্রথমে আগ্রহ দেখালেও, হঠাৎ করেই সেই সম্ভাবনায় ছেদ পড়ে। আর এর কারণ রাজনীতি ও যুদ্ধ!
যুদ্ধ নিয়ে মন্তব্যে রানে ক্ষুব্ধ
সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনায় মাওরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতকে কঠোর ভাষায় দোষারোপ করেন। তিনি লেখেন, ভারত ড্রোন, মিসাইল ও শেল হামলা চালিয়ে নিরীহ পাকিস্তানি নাগরিকদের হত্যা করছে। মাওরার এই বক্তব্য রানে নিতে পারেননি।
রানে ইনস্টাগ্রামে জানান, “এই সিনেমায় কাজ করাটা ছিল দারুণ একটা অভিজ্ঞতা। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এবং আমার দেশের বিরুদ্ধে যেভাবে সরাসরি মন্তব্য করা হয়েছে, সেটা পড়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি—আগামীতে যদি সিক্যুয়েল হয় এবং পুরনো কাস্ট ফেরত আনার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে আমি তাতে অংশ নেব না।”
মাওরার কড়া জবাব: “এটা যুদ্ধ, সিনেমা নয়”
রানের এই স্টেটমেন্ট দেখে চুপ থাকেননি মাওরা। ইনস্টাগ্রামেই তিনি বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়া জানান-
“আমি জানি না এটাকে দুর্ভাগ্য বলব, দুঃখজনক বলব, না হাস্যকর যে মানুষটার থেকে অন্তত সাধারণ বোধশক্তির আশা করেছিলাম, সে হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে একটা PR স্ট্র্যাটেজি নিয়ে হাজির!”
তিনি লেখেন, “তুমি চারদিকে তাকাও, কী হচ্ছে দেখো! আমার দেশের শিশুরা মারা গেছে একটা অন্যায্য, কাপুরুষোচিত হামলায়। আমরা বহুবার শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি, এরপরও যখন জবাব দিতে হয়েছে, তখন সেটা দেখে তোমাদের দেশে হইচই পড়ে গেছে। আর এই অবস্থায় তুমি এমন একটা নাটকীয় স্টেটমেন্ট দাও? এত দুঃখজনক!”
মাওরা আরও জানান, “আমি সবসময় আমার সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা দেখিয়েছি। এবারও দেখিয়েছি। কিন্তু তুমি যেমন ঘৃণা ছড়ালে, আমি তা করব না।”
“যুদ্ধের সময় সিনেমা নিয়ে কথা বলা লজ্জার”
তিনি রানের উদ্দেশে লেখেন, “এটা এমন সময়, যখন দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন সময়ে সিনেমা নিয়ে কথা বলাটা শুধু অশোভনই নয়, লজ্জাজনকও। একজন অভিনেতা হিসেবে এতটা অসচেতনতা সত্যিই দুঃখজনক।”
তিনি রানে’র উদ্দেশে কঠোর ভাষায় বলেন, “তুমি যদি আমার নাম ব্যবহার করে নয় বছর পর আবার হেডলাইন পাও, তাহলে বোঝা যাচ্ছে তুমি ভুল লোক দিয়ে ঘেরা আছো। তুমি যুদ্ধকে নিজের জনপ্রিয়তার জন্য ব্যবহার করছো। এটা দুঃখজনক ও অমানবিক!”
“আমার দেশ সবার আগে”
সবশেষে আবেগী কণ্ঠে মাওরা লেখেন, “আমি আমার দেশের নিরীহ নাগরিকদের জন্য প্রার্থনা করছি। আমাদের সাহসী সেনাদের জন্য প্রার্থনা করছি। এই সময়ে বসে ভাবছি না আমার পরের সিনেমা কী হবে। আমার দেশ আগে, সবকিছুর আগে। পাকিস্তান জিন্দাবাদ!”
সিক্যুয়েলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া সানাম তেরি কাসাম দর্শকদের হৃদয়ে দাগ কেটেছিল। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে রি-রিলিজের পর আবারও বক্স অফিসে আলোচনায় উঠে আসে সিনেমাটি। এরপর থেকেই সিক্যুয়েল নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। কিন্তু মাওরা-রানে’র এই প্রকাশ্য বাকযুদ্ধের পর সেই সম্ভাবনা আপাতত অনিশ্চয়তার মুখে।
তাদের ব্যক্তিগত মতবিরোধ এখন শুধু সিনেমার ভবিষ্যৎকেই নয়, দুই দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্কের স্পর্শকাতর বাস্তবতাকেও সামনে নিয়ে এসেছে।
এফপি/এস এন