আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলছে 'ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য'

ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য জানিয়েছে, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করা, এবং জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র জারি করার দাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক আমলে নেওয়ার ঘটনাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।

আজ ১১ মে (রবিবার) একটি বিবৃতিতে এসব কথা জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আমরা আরো দেখছি- আওয়ামী গণহত্যাকারী এবং তাদের ফ্যাসিবাদের প্রতি সমর্থন উৎপাদনকারী সাংস্কৃতিক, মিডিয়া, এবং অর্থনৈতিক ফ্রন্টগুলো এখনো তাদের স্ব-স্ব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থান ও চলমান আন্দোলনকে ভিলিফাই করতে এবং ‘দেশি-বিদেশি শক্তির চক্রান্ত’ হিসাবে উপস্থাপন করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। যা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভুক্তভোগী এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য শাহাদাত বরণকারী সকল নাগরিকদের মানবিক মর্যাদার প্রতি চরম অপমান। আমরা আরো উদ্বেগের সাথে দেখছি, আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং পলাতক গণহত্যাকারীদের অর্থনৈতিক যোগান এখনো অটুট রয়েছে। যার মাধ্যমে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা এই বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুস্পষ্ট নীতিমালা জানতে চাই। আওয়ামী লীগের সকল অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থাকে অর্ডিন্যান্স জারি করে রাষ্ট্রায়াত্ত ঘোষণা করে নাগরিকদের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।

তবে আমরা মনে করি এতটুকুই যথেষ্ট নয়। বিগত সময়েও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের টালবাহানা আমরা লক্ষ করেছি। এছাড়াও, আওয়ামী গণহত্যাকারীদের বিচারের দীর্ঘসূত্রিতাও আমরা দেখেছি। পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা গণহত্যা, গুম-বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড-ধর্ষণ, ও জুলাই গণহত্যার পর যেখানে তড়িৎ গতিতে খুনি লীগের বিচার হওয়ার কথা ছিল, সেখানে আমরা দেখেছি অনেক জুলাই বিপ্লবী ও আহতযোদ্ধাদের মামলা নিচ্ছে না বিভিন্ন থানা। অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূলে; এমনকি রাজধানী শহরেও জুলাই যোদ্ধারা আওয়ামী গণহত্যাকারীদের দ্বারা হামলার শিকার হচ্ছে। উপর্যুক্ত বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান এবং পদক্ষেপ আমরা জানতে চাই।

পাশাপাশি, আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যকরী সংস্কার চাই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে জনতার পক্ষ থেকে যে-সব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তা আমলে নিয়ে সংস্কার কার্যক্রমে সরকারকে হাত দিতে হবে। দেশের প্রতিটি বিভাগে ট্রাইব্যুনালের অফিস স্থাপন করতে হবে; যাতে করে তৃণমূলে ফ্যাসিবাদের ভুক্তভোগী নাগরিকদের আইনি সেবা পেতে কোনো বেগ পেতে না হয়।

আরো উদ্বেগের সাথে আমরা লক্ষ করছি- গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও এর ১৪ দলীয় অংশীদাররা; যারা বিগত ১৫ বছরে ভোটডাকাতির মাধ্যমে নাগরিকদের অধিকার হরণ এবং ফ্যাসিবাদ কায়েমের পক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন যুগিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের সরকার হিসাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে চাই।

আজ ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রণয়ন ও জারি করতে সরকার ৩০ কার্যদিবস সময় চেয়েছে। কিন্তু ইতিপূর্বে ঘোষণাপত্র প্রণয়নে সরকারের টালবাহানা ও রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আমাদের মনে উদ্বেগ ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই- ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসাবে আমাদের ঐতিহাসিক সংগ্রামের বিবরণ, জুলাই গণহত্যাসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের শিকার ভুক্তভোগীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠাকরণ, জুলাই যোদ্ধাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের কথা আবশ্যিকভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। আমরা আরো দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছি- অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক নির্বাচনের ঘোষণার পূর্বে আবশ্যিকভাবে বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

চলমান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে জুলাই অভ্যুত্থানে তৈরি হওয়া জাতীয় ঐক্য নবায়নের সুবর্ণ সুযোগ আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল, পক্ষ, ও মত এবং সরকারকে উপরিউক্ত তিনটি দাবি পরিপূর্ণ ও যথাযথভাবে বাস্তয়নে এবং জুলাই ঘোষণাপত্রে উপরিউক্ত তিনটি দাবির যথাযথ প্রতিফলন রাখতে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই আমরা।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলার অভিযোগপত্র দাখিল আজ Jul 02, 2025
img
ঢাকায় দায়িত্ব নিলেন সৌদির নতুন রাষ্ট্রদূত জাফর আবিয়াহ Jul 02, 2025
img
সমুদ্রগামী জাহাজ মালিকের দেশের তালিকায় ৩৫তম স্থানে বাংলাদেশ Jul 02, 2025
img
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ওয়েবসাইটে বড় ধরনের সাইবার হামলা Jul 02, 2025
img
নতুন গানের খবর দিয়ে কথা রাখলেন কনা Jul 02, 2025
img
ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ আটে কে কার মুখোমুখি Jul 02, 2025
img
ইরানে মোসাদ সংশ্লিষ্ট ৫০ এজেন্ট আটক Jul 02, 2025
ইসরায়েল কে টার্গেট করে হামলা, দায় নিল হুতিরা Jul 02, 2025
img
দেশের বাজারে বাড়লো স্বর্ণের দাম, আজ থেকে বিক্রি হবে নতুন দামে! Jul 02, 2025
img
আমার খুবই পছন্দ বরিশালের পেয়ারা বাগান : সাফা কবির Jul 02, 2025
img
হজযাত্রা শেষে দেশে ফিরেছেন ৬৩ হাজার ১৮৮ হাজি Jul 02, 2025
img
কাশ্মীর ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদকে সক্রিয় হতে বলল পাকিস্তান Jul 02, 2025
img
সামরিক ট্যাঙ্কের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলল চীন Jul 02, 2025
img
বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ, জাপানকে দোষারোপ ট্রাম্পের Jul 02, 2025
img
ঢাকায় আংশিক মেঘলা আকাশ, স্বস্তির আশা Jul 02, 2025
img
পদ্মার পানি বাড়ছে! Jul 02, 2025
img
রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করলেই ৫০০ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রে Jul 02, 2025
img
আহত হয়েও শুটিং শেষ করলেন আদা শর্মা Jul 02, 2025
img
সাত অঞ্চলে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতির ঝড়ের আভাস Jul 02, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃত্যুর মিছিল, নিহত ১০৯ Jul 02, 2025