বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) ভোটের দামামা বাজছে। শুরু হয়েছে নির্বাচনি তৎপরতা। আগামী অক্টোবরে বিসিবির নির্বাচন হবে। নির্বাচনের আগে তিনটি গ্রুপ ভোটযুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
জাতীয় নির্বাচনের মতো বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনও দুভাগে বিভক্ত থাকে। একদিকে বিএনপি সমর্থিত সংগঠকরা, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শাসনামলে ক্রীড়াঙ্গনকে একতরফা নিয়ন্ত্রণ করেছে আওয়ামী সমর্থকরা। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর ক্রীড়াঙ্গনের পরিস্থিতিও পালটে গেছে।
বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থা ও ফেডারেশনগুলোতে নতুন মুখের ভিড় বেড়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতে অ্যাডহক কমিটি গঠন হতো। ১৯৯৮ সালে প্রথম নির্বাচন শুরু হয় ক্রীড়াঙ্গনে। বিসিবিতেও সেবার প্রথম নির্বাচন হয়েছিল। তবে ২০১২ সাল পর্যন্ত সভাপতিরা সরকার মনোনীত হতেন। পরের বছরের নির্বাচনে নাজমুল হাসান প্রথম নির্বাচিত সভাপতি হন বিসিবির। তারপর থেকে এক যুগ শাসন করেন তিনি।
৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও এসেছে বড় পরিবর্তন। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিবি)। সভাপতি পদে নাজমুল হাসানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ফারুক আহমেদ। আগের বোর্ড পরিচালকদের মধ্যে অনেকেই দেশ ছেড়ে গেছেন। অনেকেই তিন বোর্ড সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণে বাদ পড়েছেন।
ফারুক আহমেদের সঙ্গে বোর্ডে যুক্ত করা হয়েছে নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে। সব মিলিয়ে মোট ১০ জন নিয়ে চলছে বিসিবির পরিচালনা পরিষদ। অক্টোবরে বিসিবির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদ এরই মধ্যে বিসিবির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
পাশাপাশি প্রথিতযশা ক্রীড়া সংগঠক ও রাজনীতিবিদ, ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের নামও বাতাসে ভাসছে। ক্রিকেটার তামিম ইকবালও দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে চমকও আসতে পারে বিসিবির সভাপতি পদে।
পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য যারা মাঠে নেমেছেন বলে শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন-বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম, আম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক পরিচালক শওকত আজিজ রাসেল, সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক পরিচালক আজিজ আল কায়সার টিটো, মাহবুব উল আনাম, ইফতেখার রহমান মিঠু, এমএ আউয়াল চৌধুরী ভুলু, আলী আহসান বাবু, জিএস হাসান তামিম, রফিকুল ইসলাম বাবু, মাসুদুজ্জামান, লুৎফুর রহমান বাদল, লোকমান হোসেন ভুঁইয়া, মো. রাকিবুল ইসলাম, রিজওয়ান বিন ফারুক, ফাহিম সিনহা, মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, ইশতিয়াক সাদেক ও জিয়াউল হাসান তপু।
ঢাকার ৭৬টি ক্লাবের মধ্যে পরিচালক নির্বাচিত হবেন ১২ জন। মূলত ৩৯ ভোট পেলেই যে কেউ পরিচালক নির্বাচিত হতে পারবেন। এখন চলছে এই ৩৯ ভোটের খেলা। ভোটের লড়াইয়ে জোটও বেঁধেছেন সংগঠকরা। একদিকে বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে ঐক্যজোট।
অন্যদিকে মাহবুব আনামের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জোট। এদের বাইরে লুৎফুর রহমান বাদল তৃতীয় জোট গড়ার চেষ্টায় রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ফারুক ও মাহবুব আনামের দুই জোটের আপস হলে বিস্ময়কর কিছুই হবে না। দুপক্ষের সুহৃদরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন। এমনটা হলে সব হিসাব পালটে যাবে।
২০০১ সালে বিসিবির নির্বাচনে ঢাকার ক্লাব কোটায় ২৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাদের মধ্যে মাহমুদুল হক মানু, গাজী গোলাম দস্তগীর (বীরপ্রতীক), সৈয়দ আশরাফুল হক, আজিজ আল কায়সার টিটু, জালাল ইউনুস, আফজালুর রহমান সিনহা, এনায়েত কবির চঞ্চল, এএসএম আলী খবির চাঁন, আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, এনায়েত হোসেন সিরাজ, আ ন ম আলম চৌধুরী, মাহাবুবুল আনাম, জিএস হাসান চৌধুরী তামিম, তানজিব আহসা সাদ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও তানভীর মাজহারুল ইসলাম তান্না নির্বাচিত হয়েছিলেন।
জেলা ও বিভাগীয় কোটা থেকে আলহাজ এসএম মোর্তজা রশিদী দারা, সেলিম আবেদিন চৌধুরী, রেজাউল হক হারুন, মাহমুদ জামাল, দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, শেখ নিজাম উদ্দিন, এহতেশামুল আলম, ডা. মাহফুজার রহমান মজনু, মো. আবদুল গফুর, ইফতেখার হোসেন শামীম, সয়লাব হোসেন টুটুল ও অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ নির্বাচিত হন। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোটায় অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ পরিচালক মনোনীত হন।
২০০৩ সালে আলী আজগর লবিকে সভাপতি ও মাহবুব উল আনামকে সাধারণ সম্পাদক করে বিসিবির অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। পরিচালক ফরম্যাট বাদ দিয়ে পুরোনো পদ্ধতিকেই ফিরিয়ে আনা হয়। দুবছর বাদে বিসিবির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মাহবুব উল আনাম। সভাপতি থাকেন আলী আজগর লবি। সহসভাপতি নির্বাচিত হন আজিজ আল কায়সার টিটো, আলহাজ শাহ নরুল কবির শাহিন, গাজী গোলাম দস্তগীর ও অধ্যাপক গোলাম রসূল মোল্লা। খন্দকার জামিল উদ্দিন এবং শফিকুর রহমান মুন্না নির্বাচনে হেরে যান।
দুই যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন রফিকুল ইসলাম বাবু ও রিয়াজ উদ্দিন আল মামুন। সদস্যরা হলেন—সয়লাব হোসেন টুটুল, আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান, এএসএম ফারুক, আসাদুজ্জামান খসরু, আহমেদ ইকবাল হাসান, মিজানুর রহমান, মির্জা সালমান ইস্পাহানী, অ্যাডভোকেট শাহিন আফতাবুর রেজা চৌধুরী, সৈয়দ জাহিদ হোসেন, সৈয়দ ফারহাদ আহমেদ, সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর, শামীম কবির, লুৎফর রহমান বাদল, শহিদুজ্জামান শহিদ, মাহমুদ জামাল, কাজী মহিউদ্দিন বুলবুল, কবির আহমেদ, এমআর সিদ্দিক লেমন, আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও কবির আহমেদ ভূঁইয়া।
ওই নির্বাচনে অর্থনৈতিক কেলেংকারির কারণে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ তাদের দপ্তর সম্পাদক শামসুল আরেফিনকে বহিষ্কার করেছিল।
২০০৭ সালের ২৯ জুলাই বিসিবির নির্বাচিত কমিটি পদত্যাগ করায় একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। মেজর জেনারেল সিনহা ইবনে জামালিকে সভাপতি করে গঠিত ১১ সদস্যের ওই কমিটির অন্যরা ছিলেন—সৈয়দ ফাহিম মুনায়েম, আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, শফিকুর রহমান মুন্না, ইশতিয়াক আহমেদ, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, মো. আবদুল মোমেন, মনোয়ারা আনিস খান, সালমান ইস্পাহানী, ফিরোজ আহমেদ, লে. কর্নেল মো. আবদুল লতিফ খান (অব.) ও মো. সেলিম ভুঁইয়া।
২০০৮ সালে আবার সেই পরিচালক ফরম্যাট ফিরে আসে বিসিবিতে। ওই নির্বাচনে জেলা ও বিভাগ ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত পরিচালকরা ছিলেন-দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, মো. সয়লাব হোসেন টুটুল, সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর, মঈন উদ্দিন চৌধুরী, মাহমুদ জামাল, ইমতিয়াজ আহমেদ শামসুল হুদা, সৈয়দ জাহেদ হোসেন, শহিদুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান খসরু ও মো. ইমরান চৌধুরী।
ঢাকার ক্লাব কোটার পরিচালকরা ছিলেন-মাহবুবুল আনাম, আজিজ আল কায়সার টিটো, মির্জা সালমান ইস্পাহানী, আহমেদ ইকবাল হাসান, মো. জামাল ইউনুস, আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, এনায়েত হোসেন সিরাজ, আমিনুল হক মনি, শফিকুর রহমান মুন্না, মিজানুর রহমান, গাজী গোলাম দস্তগীর (বীরপ্রতীক), জিএস হাসান চৌধুরী তামিম। পরিচালক ক্যাটাগরি-৩ এর নির্বাচিত হন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। সেই সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় পরিচালক হন ফিরোজ আহমেদ।
বিসিবির পরিচালক পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় তা বাতিল করে ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর ১৩ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। নাজমুল হাসানকে সভাপতি করে গঠিত কমিটির অন্যরা হলেন-আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, মাহবুব আনাম, কায়সার সিনহা, এনায়েত হোসেন সিরাজ, জালাল ইউনুস, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ড. আইএইচ মল্লিক, খালেদ মাহমুদ সুজন, আ জ ম নাছির উদ্দিন, নাঈমুর রহমান দুর্জয় ও গাজী গোলাম মুর্তজা।
২০১৩ সালে ক্যাটাগরি-১ এ পরিচালক ছিলেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়, মঞ্জুর কাদের, আ জ ম নাছির উদ্দিন, আকরাম খান, কাজী ইনাম আহমেদ, শেখ সোহেল, রফিউস শামস প্যাডি, সাইফুল আলম স্বপন, অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, এমএ আউয়াল চৌধুরী ভুলু ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। ক্যাটাগরি-২ (ক্লাব) থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১২ জন পরিচালক হলেন-এনায়েত হোসেন সিরাজ, আফজালুর রহমান সিনহা, আহমেদ ইকবাল হাসান, মাহাবুব উল আনাম, জালাল ইউনুস, লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, গাজী গোলাম মর্তুজা, মো. হানিফ ভূঁইয়া, তানজিল চৌধুরী, নাজমুল করিম টিংকু, নজিব আহমেদ ও শওকত আজিজ রাসেল।
ক্যাটাগরি-৩ (সার্ভিস) থেকে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে হারিয়ে নির্বাচিত হন খালেদ মাহমুদ সুজন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় পরিচালক মনোনীত হন নাজমুল হাসান পাপন ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি।
২০১৭ সালে ক্যাটাগরি-১ এ পরিচালক ছিলেন নাঈমুর রহমান দুর্জয়, তানভীর আহমেদ টিটু, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আ জ ম নাছির উদ্দিন, আকরাম খান, কাজী ইনাম আহমেদ, শেখ সোহেল, সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, আলমগীর খান আলো। ক্যাটাগরি-২ (ক্লাব) থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১২ জন পরিচালক হলেন-গাজী গোলাম মর্তুজা, তানজিল চৌধুরী, শওকত আজিজ রাসেল, এনায়েত হোসেন সিরাজ, মাহবুব উল আনাম, মঞ্জুর কাদের, আফজালুর রহমান সিনহা, জালাল ইউনুস, নাজিব আহমেদ, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, হানিফ ভূঁইয়া। ক্যাটাগরি-৩ (সার্ভিস) থেকে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুকে হারিয়ে নির্বাচিত হন খালেদ মাহমুদ সুজন।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত দুই পরিচালক ছিলেন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ও নাজমুল হাসান পাপন। ২০২১ সালে জেলা ও বিভাগ ক্যাটাগরিতে পরিচালক নির্বাচিত হন নাঈমুর রহমান দুর্জয়, তানভীর আহমেদ টিটো, কাজী ইনাম, শেখ সোহেল, আকরাম খান, আ জ ম নাসির, অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, সাইফুল আলম স্বপন, আলমগীর খান আলো ও শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্লাব ক্যাটাগরির পরিচালকরা হলেন-নাজমুল হাসান পাপন, মাহবুব আনাম, এনায়েত হোসেন সিরাজ, মঞ্জুর কাদের, মনজুরুল আলম, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, গাজী গোলাম মর্তুজা, নজীব আহমেদ, ওবেদ রশিদ নিজাম, সালাহউদ্দিন চৌধুরী, ইফতেখার রহমান মিঠু ও ফাহিম সিনহা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত পরিচালক ছিলেন জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি। সাবেক ক্রিকেটার, বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থা ক্যাটাগরির পরিচালক নির্বাচিত হন খালেদ মাহমুদ সুজন।
বিসিবির সভাপতিরা
প্রফেসর মো. ইউসুফ আলী
এসএস হুদা
কমোডর মুজিবুর রহমান
কে জেড ইসলাম
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
কাজী বাহাউদ্দিন
লে. কর্নেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান
সাবের হোসেন চৌধুরী
এম আকমল হোসেন
আলী আসগর লবি
এম আবদুল আজিজ
লে. জে. (অব.) সিনা ইবনে জামালি
আ হ ম মুস্তফা কামাল
নাজমুল হাসান
ফারুক আহমেদ
এসএন