বিশ্বব্যাপী যখন জলবায়ু পরিবর্তন ও জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে চলছে এক অভূতপূর্ব সচেতনতা, তখন বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা নিয়ে।
বিদ্যুৎ, খনিজ ও জ্বালানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক এবং পাওয়ার এনার্জি ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুর-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার এডভোকেট মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাসেল বলেছেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নয়, এটি বর্তমান সময়ের জরুরি দাবি।”
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন মাত্র ৪৫০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট হলেও, ২০৪১ সালের মধ্যে এই উৎপাদন ৪০ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, সূর্যালোকের প্রাচুর্য, বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও উপকূলীয় অঞ্চল নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।
তিনি বলেন, “সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (PPP) এখন ইউটিলিটি স্কেল সৌর প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
পাওয়ার এনার্জি ইন্টারন্যাশনাল সিঙ্গাপুর ইতোমধ্যে একটি ১০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যেখানে ১৫ ঘণ্টার ব্যাটারি সংরক্ষণ ব্যবস্থা সংযুক্ত থাকবে। এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সৌর ও শক্তি সংরক্ষণ প্রকল্প।
ইঞ্জিনিয়ার রাসেল আরও বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব নয়, বরং এটি দেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপক অবদান রাখতে পারে।
এর মাধ্যমে:
কার্বন নিঃসরণ কমবে,বিদেশি জ্বালানি আমদানির উপর নির্ভরতা কমবে,গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছাবে,বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
তিনি পরামর্শ দেন, "নবায়নযোগ্য জ্বালানি পলিসি-২০০৮"-এর পাশাপাশি নতুন, সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি, যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।
ভবিষ্যতের রূপরেখা হিসেবে তিনি বলেন,একটি জাতীয় নবায়নযোগ্য শক্তি কর্তৃপক্ষ গঠন,স্মার্ট গ্রিড ও শক্তি সংরক্ষণ প্রযুক্তি চালু,আন্তর্জাতিক গবেষণা ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের সুযোগ এবং সবশেষে উন্নত ব্যাংকিং সাপোর্ট ও গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা কামাল রাসেলের মতে, সঠিক পরিকল্পনা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার নবায়নযোগ্য শক্তির কেন্দ্রবিন্দু।
ইঞ্জিনিয়ার এডভোকেট মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাসেল তার লেখায় তুলে ধরেছেন যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাংলাদেশের সামনে এক বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
বাংলাদেশ যদি সঠিকভাবে এ খাতকে কাজে লাগাতে পারে, তবে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভরতা অর্জন, পরিবেশ রক্ষা এবং গ্রামীণ উন্নয়ন একসাথে নিশ্চিত করা সম্ভব।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, দেশের জ্বালানি খাতে এক ‘সবুজ বিপ্লব’ ঘটানোর সময় এখনই।
এফপি/এসএন