চলমান যুদ্ধবিরতি ভাঙার আশঙ্কা প্রকাশ করে ভারত নতুন করে হামলা চালাতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তিনি বলেন, যদি ভারতের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উসকানি আসে, তাহলে পাকিস্তান তার জবাব শক্তভাবে দেবে।
বুধবার (১৪ মে) জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ আরও বলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অযৌক্তিক হামলার কারণে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেশের অভ্যন্তরে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি এখন চাপে রয়েছেন এবং নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ফিরে পেতে মরিয়া চেষ্টা করছেন।”
“ফলে এই অবস্থায় তিনি ফের পাকিস্তানে হামলার নির্দেশ দেবেন— এমন আশঙ্কা যথেষ্ট পরিমাণে আছে। তবে ভারত যদি কোনো প্রকার বেপরোয়া পদক্ষেপ নেয়, সেক্ষেত্রে পাকিস্তান তার দৃঢ় জবাব দেবে এবং শুধু তা ই নয়— বৈশ্বিক চাপও সহ্য করতে হবে ভারতকে।”
“এখানে আর একটি কথা আমি বলব— যুদ্ধবিরতির জন্য পাকিস্তানের ওপর কোনো বৈশ্বিক চাপ কাজ করেনি। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মিত্ররাষ্ট্র এই প্রস্তাব দিয়েছে, সমর্থন করেছে এবং এ কারণেই আমরা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছি।”
“এখন ভারতের মিত্রদের উচিত হবে, মোদিকে যে কোনো প্রকার বেপরোয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত রাখা।”
গত ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার একটি শাখা এই টিআরএফ।
অতর্কিত এই হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিলসহ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।
দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের অধিকৃত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন এলাকায় ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে এক সংক্ষিপ্ত সেনা অভিযান পরিচালনা করে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী। নয়াদিল্লির তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে ৭০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানের দাবি, নিহত হয়েছে ৩১ জন এবং আহত হয়েছে ৫৭ জন।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর তিন দিনের মধ্যে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ শুরু করে পাকিস্তান। আরবি ‘বুনিয়ানি উল মারসুস’-এর বাংলা অর্থ সীসার প্রাচীর।
এদিকে পাল্টাপাল্টি এই সংঘাতের মধ্যেই তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্র এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের চাপে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। ১০ মে শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে এই যুদ্ধবিরতি।
যুদ্ধবিরতির ২ দিন পর সোমবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সেই ভাষণে পাকিস্তানের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়ে মোদি বলেন, ভারত শুধু তার অভিযান স্থগিত রেখেছে। যদি এর সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান সীমান্তে কোনো প্রকার উসকানিমূলক তৎপরতা চালায়, তাহলে ফের অভিযান শুরু করবে ভারত। সূত্র : জিও নিউজ, দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন
আরএ/টিএ