চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না: ১২ দলীয় জোট

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনাকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।

তারা বলেন, জাতীয় অর্থনীতির প্রধান লাইফ লাইন চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। যে কোনো মূল্যে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দেশি প্রতিষ্ঠানের অধীনে রাখতে হবে। নিরাপত্তা ও অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানির তত্ত্বাবধানে দেওয়া জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি। অন্তর্বর্তী সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) এক যৌথ বিবৃতিতে ১২ দলীয় নেতারা অভিযোগ করেন, দেশের অর্থে নির্মিত ও পরিচালিত চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালকে বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালনার সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করছে।

জোটের শীর্ষ নেতারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দেশের টাকায় নির্মিত হয়েছে। দেশের টাকায় কেনা হয়েছে যন্ত্রপাতি। বন্দর ও দেশীয় প্রতিষ্ঠান মিলে ইতোমধ্যে সক্রিয়ভাবে পরিচালিত এই টার্মিনালকে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এখনও অব্যাহত আছে। নির্মাণের ১৭ বছর পর কেন একটি সফল টার্মিনালকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে হবে? এর পেছনে রহস্য কী? কেন জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সরকার ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে?

বিবৃতিতে নেতারা প্রশ্ন তোলেন, ইতোমধ্যে দেশীয় শ্রমিকদের বেকারত্বের প্রশ্ন উঠেছে। টার্মিনালটিতে জাহাজ থেকে বার্ষিক ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো–নামানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে। সেখানে দেশীয় অপারেটর গত বছর এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো–নামানোর কাজ করেছে। তাহলে কাকে খুশি করতে বা কী চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলছে সরকার?

বিবৃতিতে নেতারা অভিযোগ করেন, জি টু জি ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) প্রকল্পে ন্যূনতম এক হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। যন্ত্রপাতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ এই টার্মিনালে বিনিয়োগ কোথায় হবে, তা নিয়ে ইতোমধ্যে গণমাধ্যমেও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। মূলত দেশের স্টেকহোল্ডারদের বাদ দিয়ে কোনও পক্ষ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে এই বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

জোটের নেতারা বলেন, টার্মিনালটি বিদেশি অপারেটরকে দিয়ে পরিচালনা করালে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয় অর্ধেকের চেয়ে কমে যাবে। এতে করে ভবিষ্যৎ উন্নয়নমূলক কাজও থেমে যাবে, বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্লেখযোগ্য আরও যে-সব ক্ষতি হবে, এরমধ্যে রয়েছে— ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে নিয়োজিত শ্রমশক্তি কর্মসংস্থান হারাবে; বিদেশি অপারেটররা লাভের অংশ বিদেশি মুদ্রায় বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাবে; নতুনভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগের কোনও সুযোগ নেই। ফলশ্রুতিতে এটি একেবারে আত্মঘাতী একটি সিদ্ধান্ত, যার পেছনে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বাইরে কিছু দেখা যাচ্ছে না।

অবিলম্বে সরকারকে দেশবিরোধী এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসর আহ্বান জানান ১২ দলীয় জোটের নেতারা।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপার) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, লেবার পার্টি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিব, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিএনপির) চেয়ারম্যান ফিরোজ মুহাম্মদ লিটন ও নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি এম এ মান্নান।

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সচিবদের সঙ্গে বৈঠক শেষে নতুন পে স্কেলের সুপারিশ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত Nov 25, 2025
img
৮১ পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ আজ Nov 25, 2025
img

প্রধান উপদেষ্টা

আসন্ন নির্বাচনে কমনওয়েলথের পূর্ণ সমর্থন চাই Nov 25, 2025
img
আজ থেকে ঘরে বসেই করা যাবে মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ Nov 25, 2025
img
লটারিতে চূড়ান্ত হলো ৬৪ জেলার এসপি, দ্রুতই পদায়ন Nov 25, 2025
img
৭৫ হাজার মেট্রিক টন সার ক্রয় করবে সরকার Nov 25, 2025
img
নির্বাচনি প্রচারে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নয়: জামায়াত আমির Nov 25, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত ১ লাখ মানুষ, বলছে জার্মান গবেষণা Nov 25, 2025
img
কুমিল্লা বিভাগের দাবিতে ঢাকায় সমাবেশ ও মানববন্ধন Nov 25, 2025
img
‘পরিমার্জিত’ শান্তি পরিকল্পনায় একমত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন Nov 25, 2025
img
নেসকোর প্রিপেইড মিটার বাতিলের দাবিতে নাটোরে সড়ক অবরোধ Nov 25, 2025
img
১০ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকার জ্বালানি তেল কিনবে সরকার Nov 25, 2025
img
আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে ঢাকার আকাশ Nov 25, 2025
img
এভারটনের কাছে ১-০ গোলে হারল ম্যানইউ Nov 25, 2025
img
সিন্ধু অঞ্চলকে ঘিরে ভারত-পাকিস্তানে নতুন উত্তেজনা Nov 25, 2025
img

চট্টগ্রাম বন্দর প্রসঙ্গে তারেক রহমান

দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকারের দ্বারা নির্ধারিত হওয়া উচিত Nov 25, 2025
img
রপ্তানি সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালা Nov 25, 2025
img
কুয়ালালামপুরে শপিং সেন্টারে অভিযান, বাংলাদেশিসহ আটক ১২৪ Nov 25, 2025
img
দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান চতুর্থ Nov 25, 2025
img
হঠাৎ শি চিনপিং ও ট্রাম্পের ফোনালাপ Nov 25, 2025