ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ (১৯৮৭) একটি মাইলফলক। সুপারহিরো ঘরানায় বলিউডে এটাই ছিল অন্যতম প্রথম সফল প্রয়াস, যেখানে এক সাধারণ মানুষ এক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের সাহায্যে অদৃশ্য হয়ে সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। অনিল কাপুরের অদ্ভুত রসিকতা, শ্রীদেবীর রোমহর্ষক উপস্থিতি এবং মোগাম্বো চরিত্রে অমরীশ পুরীর অমর অভিনয়—সব মিলিয়ে ছবিটি রূপকথার মতো সফলতা পায়। তবে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রকাশ পেল এমন এক চমকপ্রদ তথ্য, যা জানলে বলিউডপ্রেমীদের চোখ কপালে উঠবে—এই চরিত্রটির মূল ভাবনা কিন্তু প্রথমে ঘুরপাক খাচ্ছিল অমিতাভ বচ্চনের চারপাশে!
সাক্ষাৎকারে ছবির অন্যতম চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার জানান, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবির ধারণাটি তাঁর মাথায় এসেছিল এক আশ্চর্য পরিস্থিতিতে। প্রমোদ চক্রবর্তী নামক এক নির্মাতা একটি ছবির পরিকল্পনা করছিলেন, যেখানে অমিতাভ বচ্চন মূল চরিত্রে থাকার কথা ছিল। ছবির কাজ তেমন একটা এগোয়নি, কিন্তু মহরতের সময় ইউরোপে থাকা অমিতাভের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করে প্লেব্যাক করা হয়। আর সেই মুহূর্তেই জাভেদের মনে এক অভিনব ধারণার জন্ম নেয়।
তিনি বলেন, “অমিতাভের কণ্ঠস্বর এতটাই শক্তিশালী এবং অনন্য, যে তাঁকে না দেখিয়েও শুধু সেই ভয়েসেই একটা চরিত্র তৈরি করা যেতে পারে। সেখান থেকেই মাথায় আসে—অদৃশ্য কোনো চরিত্র, যার ভয়েসই তাঁর উপস্থিতির একমাত্র পরিচায়ক। এভাবেই ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র জন্ম।”
জাভেদ আখতার তখন সেলিম খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করতেন। কিন্তু এই সময়ই তাঁদের মধ্যে সৃজনশীল বিচ্ছেদ ঘটে। অন্যদিকে বনি কাপুর ছবির চিত্রনাট্য অধিগ্রহণ করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন অনিল কাপুর ও শ্রীদেবীকে নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করবেন। সেই সিদ্ধান্তেই অমিতাভকে ছবিতে নেওয়ার পরিকল্পনার সমাপ্তি ঘটে।
কল্পনা করুন, অদৃশ্য ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ যদি কথা বলতেন অমিতাভ বচ্চনের গম্ভীর, ব্যারিটোন কণ্ঠে—পুরো অভিজ্ঞতাটাই হতো সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর ভয়েসই হয়ে উঠতে পারত ছবির অন্যতম আকর্ষণ।
তবে যাকে বলে ‘everything happens for a reason’—পরবর্তীকালে ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ঠিক যেমনটা তৈরি হয়েছিল, তাতেই সিনেমা ইতিহাসে অনন্য হয়ে ওঠে। শিশুশিল্পীদের দারুণ উপস্থিতি, অনিল-শ্রীদেবীর রসায়ন এবং অদৃশ্য হিরোর প্রযুক্তিনির্ভর দুর্ধর্ষ অভিযান দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। মোগাম্বোর ডায়লগ “মোগাম্বো খুশ হুয়া!” আজও সমান জনপ্রিয়।
এই ঐতিহাসিক তথ্যের মাধ্যমে পরিষ্কার—একজন শিল্পীর গলার স্বরও হয়ে উঠতে পারে কাহিনিচিত্রের অনুপ্রেরণা। অমিতাভ হয়তো ছিলেন না ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র স্ক্রিনে, কিন্তু তাঁর ব্যারিটোন ভয়েস থেকেই যে এই কাল্ট ক্লাসিকের বীজ বোনা হয়েছিল, তা নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ।
এফপি/এস এন