রাতের আঁধারে বিএসএফের পুশইন,সীমান্তে আতঙ্ক

সীমান্ত পথে আবারও বাংলাদেশে পুশইন করছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে এবার কৌশল আরও ভয়ঙ্কর। রাতের আঁধারে সীমান্ত বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়, এরপর চলে বাংলাদেশে পুশইন। এ নিয়ে সীমান্তে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান স্থানীয়রা।

শুক্রবার (১৬ মে) গভীর রাতে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নীলফামারী-৫৬ বিজিবির অধীনস্ত ডানাকাটা সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছে, রাতে শব্দ পেয়ে ঘুম থেকে উঠলে কয়েকজনকে অন্ধকারে দেখতে পেয়ে ধরে ফেলেন তারা। এ সময় সীমান্তের কাঁটাতারের ওপর থাকা লাইট বন্ধ ছিল। এরপর খবর দেয়া হয় বিজিবিকে।

এ দিকে স্থানীয়দের দাবি, বিএসএফ পরিকল্পিতভাবে সীমান্তে বাতি বন্ধ করে দিয়ে নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। তবে বিজিবির পাশাপাশি নিজেরা সতর্ক রয়েছেন বলে জানান বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা আরও বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের ওপর ভারতের লাইট আমরা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা জ্বলে থাকতে দেখি। কিন্তু শনিবার রাতে হঠাৎ লাইট অফ হয়ে যায়। যার পর মানুষ পার করার ঘটনাটি ঘটে।
 
সীমান্তের পাটোয়ারী পাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব ইসলাম বলেন, ‘রাত ১২টা থেকে ১টার দিকে যখন আমরা সবাই ঘুমাচ্ছিলাম। ঠিক সে সময়ে সীমান্তে একটা শব্দ পাওয়া যায়। আমরা বের হয়ে দেখি সীমান্তের সব লাইট বন্ধ। অন্ধকারে কয়েকজনকে দেখে আমরা আটক করে বিজিবিকে খবর দেই। তবে লাইট বন্ধ করে এমন করে মানুষ পাঠানো; আসলে এবার নতুন দেখলাম আমরা।’

এ দিকে অলিয়র নামে আরেকজন বলেন, ‘রাতের আঁধারে সীমান্তের লাইট বন্ধ করে মানুষ পার করার নতুন পদ্ধতি শুরু করেছে বিএসএফ। সীমান্ত এলাকায় বসবাস করায় আমরা সর্বদা সতর্ক আছি। আমরা বিজিবিকে সহায়তার চেষ্টা করছি; যাতে বিএসএফ কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে না পারে।’

এর আগে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার (১৬ ও ১৭ মে) দুপুর পর্যন্ত নীলফামারী-৫৬ বিজিবির অধীনস্ত পৃথক সীমান্তে (উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের মালকাডাঙ্গা সীমান্ত) শিশুসহ আটক ১১ জনকে বোদা থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

বিজিবির জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে অবস্থান করে কাজ করে আসছিলেন। গত ২ মে ভারতীয় পুলিশ তাদের ভারতের মুম্বাই থেকে আটক করে। ১৭ মে পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রেখে বিমানে বাংলাদেশি মোট ১২৫ জনকে শিলিগুড়ি বিমান বন্দরে পৌঁছে দেয়। এদের মধ্যে ১১ জনকে পঞ্চগড় সীমান্তে পুশইন করা হয়।
 
আটকরা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক; তারা হলেন: সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার বাগবাটী গ্রামের তাসলিমা খাতুন (৪০), কলারোয়া উপজেলার চিতলা গ্রামের মর্জিনা (৪০), নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শুক্র গ্রামের নীরুফা বেগম (৪০), যশোরের শার্শা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের সাজিদা খাতুন (৪০), ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আটরশি গ্রামের জাহিদুল ইসলাম (৪০), একই গ্রামের ফাইজান শেখ (১০), নোয়াখালীর শ্যামবাগ উপজেলার ডোমনাকান্তি গ্রামের ওমর ফারুক (৩৭), নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর গ্রামের মীম আক্তার (২২), সোনারগাঁও উপজেলার চৌরাপাড়া গ্রামের শাহনাজ (৩৪), নরসিংদীর মাদবদী উপজেলার বালাপুরেরচর গ্রামের তানিয়া (৩৫) ও খুলনার তেরখাদা উপজেলার বাউনডাংগা গ্রামের আলেয়া (৭০)।

এ বিষয়ে নীলফামারী-৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর রিয়াদ মোর্শেদ বলেন, ‘সীমান্তে আটক ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতেন বলে জানা গেছে। আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’

বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দীন বলেন, ‘শনিবার রাত ১০টার দিকে আদালতের মাধ্যমে আটকদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে প্রবেশ করায় পাসপোর্ট আইনে মামলা দায়ের হয়েছে।’

এ দিকে একই ঘটনায় আটক ১০ বছর বয়সী শিশুটিকে বিজিবি ও সমাজসেবা অধিদফতরের প্রবেশন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রকৃত অভিভাবকের কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

এমআর/টিএ


Share this news on:

সর্বশেষ

img
১০ সপ্তাহ পর গাজায় সামান্য খাদ্য প্রবেশের অনুমতির ঘোষণা May 19, 2025
img
আজ রাজধানীর বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’, বিশ্বে অবস্থান পঞ্চম May 19, 2025
img
ক্লাস পরীক্ষায় ফিরলেন জবি শিক্ষার্থীরা, প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু ২২ জুন May 19, 2025
img
সিন্ধুর পানি নিয়ে ভারতকে কড়া বার্তা পাকিস্তানের May 19, 2025
img
একটা নোংরা ব্যবসা ছিল, আমি আর এর মধ্যে নেই: অনু আগরওয়াল May 19, 2025
img
বহির্বিশ্বে যারা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবে রাষ্ট্র তাদের দায়িত্ব নেবে: তারেক রহমান May 19, 2025
img
বীরগ‌ঞ্জে ট্রাক-মাই‌ক্রোবা‌সের মু‌খোমু‌খি সংঘর্ষে প্রাণ গেল ৩ ‌জনের May 19, 2025
img
আখতার হোসেনকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে এনসিপির বিক্ষোভ May 19, 2025
img
জমিদার ঘরের সন্তান হয়েও ধনেপাতা বিক্রি করতেন নওয়াজউদ্দিন May 19, 2025
আব্দুল্লাহ কে জ-ই করার কাহিনী | প্রতিদিনের ইসলামিক কার্টুন May 19, 2025
img
আগস্ট-অক্টোবরেই ভোট হতে পারে, ডিসেম্বরে কেন যেতে হবে : আমীর খসরু May 19, 2025
img
ডিজিটাল চালান বাধ্যতামূলক ২৭ ধরনের ব্যবসায় May 19, 2025
img
টিউবওয়েল চাপতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ গেল শ্রমিকের May 19, 2025
img
‘হেরা ফেরি থ্রি’ ছাড়ার কারণ জানালেন পরেশ রাওয়াল May 19, 2025
img
কিয়েভে একসঙ্গে ২৭৩ ড্রোনের হামলা May 19, 2025
একাদশে না থেকেও যে বিরল রেকর্ড গড়েছেন শান্ত May 19, 2025
img
দুপুরের মধ্যে ১৮ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস May 19, 2025
img
ভেজাল কসমেটিকস তৈরি, শেরপুরে কারখানা সিলগালা May 19, 2025
img
রোনালদো জুনিয়রের জোড়া গোল, উদ্‌যাপন বাবা ও নেইমারের মতো May 19, 2025
img
কক্সবাজারে মিনি ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল মোটরসাইকেল আরোহীর May 19, 2025