ইউরোপের ভিসা না পাওয়ায় ২০২৪ সালে ভারতের ক্ষতি ১৩৬ কোটি টাকা

বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল চোখে। কিন্তু ইউরোপের দরজায় পৌঁছেও ফিরে আসতে হয়েছে বহু ভারতীয়কে—শুধু ভিসা না পাওয়ার কারণে। ২০২৪ সালে শেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন প্রায় ১.৬৫ লাখ ভারতীয়, আর এতে ১৩৬ কোটি টাকার বেশি নষ্ট হয়েছে শুধুই আবেদন ফি বাবদ, যেটি ফেরতযোগ্য নয়।

এই আর্থিক ক্ষতির দিক থেকে ভারত এখন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ দেশ, আলজেরিয়া ও তুরস্কের পরে।

ইউরোপীয় কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারত থেকে প্রায় ১১ লাখের বেশি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ৫.৯১ লাখ আবেদন মঞ্জুর হয়েছে, কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হয়েছে ১.৬৫ লাখ, যা মোট আবেদন সংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি ভিসা বাতিল করেছে ফ্রান্স (৩১,৩১৪টি)। এরপর রয়েছে সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, স্পেন ও নেদারল্যান্ডস—এরা প্রত্যাখ্যান করেছে কয়েক হাজার করে আবেদন।

শুধু ভারতই নয়, একই অবস্থা তুরস্ক, মরক্কো ও চীনের মত দেশগুলোরও। ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে ১৭ লাখেরও বেশি শেনজেন ভিসা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, যার মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলো উপার্জন করেছে ১৪৫ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১,৪১০ কোটি টাকা)। এর মধ্যে ভারতীয়রাই দিয়েছেন ১৪ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ১৩৬.৬ কোটি টাকা)।

এদিকে, ২০২৫ সালের জুন থেকে ১২ বছরের বেশি বয়সী ভারতীয়দের জন্য শেনজেন ভিসার আবেদন ফি ৮০ ইউরো থেকে বেড়ে হয়েছে ৯০ ইউরো। যদিও ১২ বছরের কম বয়সী শিশু, শিক্ষার্থী এবং কিছু বিশেষ শ্রেণির আবেদনকারীদের জন্য ফি বাড়েনি।

ভিসা প্রত্যাখ্যানের এই হার ও ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ভ্রমণপ্রেমী, ছাত্রছাত্রী ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে শুধু ব্যক্তিগত ভ্রমণ নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা, ব্যবসা এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগও।

অনেকে মনে করছেন, এত ভিসা প্রত্যাখ্যান আসলে ইউরোপীয় দেশগুলোর কঠিন নীতিমালার ফল। তাই এখন দরকার সহজ, স্বচ্ছ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ভিসা প্রক্রিয়া—যেটা সাধারণ মানুষকে হয়রানির বদলে স্বপ্নপূরণে সাহায্য করবে।

ইউরোপ ভ্রমণের স্বপ্ন যেন শুধু ধনী, কর্পোরেট বা প্রিভিলেজডদের জন্য না হয়। লাখ লাখ সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের আশাভঙ্গ যেন ভবিষ্যতে আর না হয়—এই প্রত্যাশাই এখন সবার।

আরএম/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রথম চালানে ভারতে গেল ৩৭.৪৬ টন পদ্মার ইলিশ Sep 17, 2025
img
ট্রাম্পের কাছ থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পরিষ্কার অবস্থান জানতে চান জেলেনস্কি Sep 17, 2025
img

এশিয়া কাপ

সুপার ফোরে যেতে শ্রীলঙ্কার দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ Sep 17, 2025
img
রোজার আগে নির্বাচন দিয়ে পুরোনো কাজে ফিরে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা Sep 17, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা করলেন আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা Sep 17, 2025
img
নাসুম ও রিশাদরা দারুণ বোলিং করেছে, ওপেনিং জুটি দরকার ছিল: লিটন দাস Sep 17, 2025
img
রংপুরে পদ্মরাগ ট্রেনের পাঁচ বগি লাইনচ্যুত, ১১ ঘণ্টা পর উদ্ধার Sep 17, 2025
img
আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন সম্ভব, প্রমাণ ডাকসু : আসাদুজ্জামান ফুয়াদ Sep 17, 2025
img

এশিয়া কাপ

আফগানিস্তানকে ৮ রানে হারিয়ে সুপার ফোরের আশা বাঁচিয়ে রাখলো টাইগাররা Sep 17, 2025
img
গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগ নেত্রী সুইটি গ্রেপ্তার Sep 17, 2025
img
রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুরের বিরুদ্ধে মামলা দুদকের Sep 16, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৬৬১ Sep 16, 2025
img
কারাবন্দিদের মধ্যে ডোপ টেস্ট কার্যক্রম শুরু Sep 16, 2025
img
ভর্তি বাতিল গোলাম রাব্বানীর, অবৈধ হচ্ছে ডাকসুর জিএস পদও Sep 16, 2025
img
বিএনপি ছাড়া নারীবান্ধব দল বাংলাদেশে আর একটিও নেই : ফারজানা শারমিন Sep 16, 2025
img
বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখিয়েও হতাশ করলেন লিটনরা Sep 16, 2025
img
সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ডে আগুন, ৮ শ্রমিক দগ্ধ Sep 16, 2025
img
তামিমের ছক্কার রেকর্ড, এক বছরে সর্বাধিক ছয় বাংলাদেশের Sep 16, 2025
img
নারীদের ক্ষমতায়ন ছাড়া উন্নয়ন অসম্পূর্ণ : উপদেষ্টা Sep 16, 2025
img
দিল্লিতে বৈঠকে নতুন অধ্যায় খুলছে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের Sep 16, 2025