ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্রাউন বিয়ার বা বাদামি রঙের বন্য ভালুকের মাংস শিগগিরই স্লোভাকিয়ার বাজারে বিক্রির জন্য উন্মুক্ত হতে পারে। দেশটির জনগণবাদী সরকার সম্প্রতি এই পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে গত মাসে স্লোভাকিয়ার মন্ত্রিসভা দেশজুড়ে প্রায় এক হাজার ৩০০ ভালুকের এক-চতুর্থাংশকে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা অনুমোদন করে। সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের ওপর প্রাণঘাতী হামলার ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে এই সরকারি উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন পরিবেশবিদ ও বিরোধী রাজনীতিকরা, এমনকি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরাও। বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ইউরোপীয় ইউনিয়নে এই প্রজাতিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকাভুক্ত করেছে। তবে তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও স্লোভাকিয়া সরকার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার এই সপ্তাহে ঘোষণা দেয়, হত্যা করা ভালুকের মাংস নষ্ট না করে বিক্রি করা হবে।
আগামী সপ্তাহ থেকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা নির্ধারিত আইনি ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ সাপেক্ষে ভালুকের মাংস বিক্রি করতে পারবে। প্রতিমন্ত্রী ফিলিপ কুফা বলেন, ‘গোলাগুলিতে মারা পড়া ভালুকগুলোর দেহ এত দিন সরাসরি নিঃশেষীকরণ কেন্দ্রে পাঠানো হতো, যা অপচয়। আমরা এখন থেকে শিকার হওয়া প্রতিটি প্রাণীর দেহ, যদি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে, জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেব। কারণ ভালুকের মাংস খাওয়ার উপযোগী।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালুক ও মানুষের মধ্যে সংঘাত স্লোভাকিয়ায় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বনের ভেতর হাঁটার সময় একটি প্রাণঘাতী হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
ইউরোপে ভালুকের আক্রমণের সংখ্যার দিক থেকে রুমানিয়ার পরই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্লোভাকিয়া। ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশটিতে ৫৪টি আক্রমণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিবছর গড় আক্রমণের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০টিতে।
এপ্রিলে এক ব্যক্তি মধ্য স্লোভাকিয়ার একটি জঙ্গলে হাঁটার সময় ভালুকের হামলায় নিহত হন। এর পর পরই প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো ৩৫০টি ভালুক গুলি করে মারার পরিকল্পনার ঘোষণা দেন। এই সংখ্যা স্পেনে বসবাসকারী পুরো ভালুকের সংখ্যার সমান। সরকারের দাবি, ভালুকের অতিরিক্ত সংখ্যাই মানুষের ওপর আক্রমণের জন্য দায়ী।
এদিকে ইইউর আইন অনুযায়ী, বাদামি ভালুক ইউরোপে কঠোরভাবে সংরক্ষিত প্রজাতি। কেবল ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে, যেমন জননিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি তৈরি করলে এবং বিকল্প কোনো পথ না থাকলে এগুলো হত্যা করা যায়। এ ছাড়া ভালুকের মাংস ইউরোপে খুব বেশি খাওয়া হয় না।
কেবল কিছু পূর্ব ইউরোপীয় ও নর্ডিক অঞ্চলে এটি বিলাসবহুল খাদ্য হিসেবে গণ্য হয়।
বেশির ভাগ ইইউ সদস্য রাষ্ট্রেই কঠোর শিকার নিষেধাজ্ঞা ও সংরক্ষিত অবস্থানের কারণে ভালুকের মাংস পাওয়া যায় না। যদি কখনো পাওয়া যায়, তা হয় সরকার অনুমোদিত নিয়ন্ত্রিত শিকারের মাধ্যমে এবং খুবই সীমিত আকারে। যেসব অঞ্চলে ভালুকের মাংস খাওয়া হয়, সেখানে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ ট্রাইকিনেলা নামের এক ধরনের পরজীবীর ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক করে। এটি মানুষের শরীরে গুরুতর রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের খাদ্য নিরাপত্তা বিধিমালা অনুযায়ী, বিক্রির আগে ভালুকের প্রতিটি মাংস নমুনা থেকে ট্রাইকিনেলার উপস্থিতি পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) বলছে, এই পরজীবী ধ্বংসে মাংসের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমপক্ষে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রান্না করতে হবে। শুধু ফ্রিজে রাখা, ধোঁয়ায় শুকানো বা মাংস শুকিয়ে সংরক্ষণ করলেও এই পরজীবী নষ্ট হয় না।
আরএম/এসএন