অন্তর্বর্তী সরকার আদালত অবমাননা করছে : ইশরাক

অন্তর্বর্তী সরকার আদালত অবমাননা করছে দাবি করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, শপথ পড়ানোর শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, অন্যথায় কাল থেকে কঠোর আন্দোলন।

টানা ১৬ দিন ধরে আন্দোলনে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুরের পর নগর ভবনের সামনে আন্দোলনে যোগ দেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। সেসময় তিনি এ ঘোষণা দেন।

১৪ মে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে সংগঠিত হয়ে আন্দোলনে নামেন সিটি করপোরেশনের কর্মচারী, ইশরাকের সমর্থকসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা। মাঝে ৪৮ ঘণ্টার বিরতির পর আবার কর্মসূচি চলছে।

এ সময় ইশরাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে বৈধতা দেওয়া হয়েছে, যারা আপিল করেছিল সেই আপিলকে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল। সেই গেজেটকে বহাল রাখা হয়েছে।

 আজ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে আমরা যে শুরু থেকে আইনের শাসনে বিশ্বাসী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

বাংলাদেশে আইনের শাসনকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আদালতে যে মামলা করেছিলাম পূর্ণাঙ্গ আস্থা আমরা রেখেছিলাম, সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতাকর্মীরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

অন্তর্বর্তী সরকার শপথ না পড়িয়ে আদালত অবমাননার শামিল কাজ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটাও প্রমাণিত হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কতিপয় উপদেষ্টা আমার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে এবং নির্বাচন কমিশন বিচার ব্যবস্থা এবং প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ করে আমাকে মেয়র হিসেবে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, আমাকে শপথ পড়ানোর যে দায়িত্ব ছিল সেই দায়িত্বটুকু পালনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

তারা যদি অনতিবিলম্বে আমার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার পদক্ষেপ না নেয় তাহলে এটাই প্রমাণিত হবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের প্রতি, তারা আদালত অবমাননায় শামিল হচ্ছেন। অবমাননা করার মতই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে ইশরাক বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শেষবারের মত আহ্বান জানাবো, আপনারা অবিলম্বে আমার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিন, অন্যথায় আগামীকাল (৩০ মে) থেকে ঢাকার নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করা হবে, আরও চুড়ান্তকর হবে।

অন্যথায়, জাতীয় নির্বাচনের আগে যাতে একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়; যার অধীনে জনগণ ভোট দিতে পারবে, যেই ভোট দানের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করবে সেই পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করবো।

তিনি বলেন, একজন মেয়রকে শপথ গ্রহণ করাতে ব্যর্থ হয়েছে, তাহলে আগামীতে ৩০০ এমপিকে শপথ গ্রহণ করাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে জনগণের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অতএব অন্তর্বর্তী সরকারকে শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, নিজেদের সংশোধন করুন, আদালতের রায়কে মেনে নিন, জনগণের রায়কে মেনে নিন, কার্যকর পদক্ষেপ নিন।'

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হয়। সেসময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।

এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।

অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওইদিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে দুই সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবন।

আইনি জটিলতার কথা বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখনো ইশরাককে শপথ পড়ানোর আয়োজন করেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক।

আরএম/এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কাজটা ঠিক হয়নি, এটা আমি বিনাবাক্যে স্বীকার করছি : ফয়েজ আহমদ May 31, 2025
img
আগে বিচার,তারপর সংস্কার এবং সর্বশেষ নির্বাচন:জামায়াতের নায়েবে আমির May 31, 2025
img
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিন: জয়নুল আবেদীন May 31, 2025
img
দুর্নীতিবাজদের জব্দ অর্থ বাজেটে যুক্ত হলে তা হবে অভিনব অর্থের উৎস: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য May 31, 2025
img
চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে পারফর্ম করবে লিনকিন পার্ক May 31, 2025
img
ডিসেম্বরে নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সঙ্গে চলে যান : অন্তর্বর্তী সরকারকে জয়নুল আবেদীন May 31, 2025
img
সাতক্ষীরায় খামারিদের উদ্বেগ, চাহিদার তুলনায় বেশি পশু May 31, 2025
img
ডিসেম্বর থেকেই পৃথক থাকছেন যশ-নুসরাত May 31, 2025
img
‘সংকট থেকে মুক্ত হওয়ার পথ একটাই, নির্বাচিত সরকার ও সংসদ’ May 31, 2025
img
আবারও রহস্যময় পুলিশ অফিসার চরিত্রে ভারালক্ষ্মী May 31, 2025
img
আমি সাধারণত আমার কাজকেই আমার পক্ষে কথা বলতে দেই: হাথুরু May 31, 2025
img
শীঘ্রই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান : ওয়াহাব আকন্দ May 31, 2025
img
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে নজরুল কনসার্ট, গাইবে শিরোনামহীনসহ ১০টি ব্যান্ড May 31, 2025
img
ক্রেতার অপেক্ষায় ৩০০ ফিটের গরুর হাট, জমে ওঠেনি বেচাকেনা May 31, 2025
img
আজ ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে মাঠে বাংলাদেশ May 31, 2025
img
আর্জেন্টিনার দল ঘোষণা: চমক ১৭ বছরের মাস্তানতুয়োনো May 31, 2025
img
টি-টোয়েন্টিতেও আফগানিস্তানের নিচে বাংলাদেশ May 31, 2025
img
তামাক কোম্পানির বোর্ডে সচিবদের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার May 31, 2025
img
সাম্য হত্যাকাণ্ড, ঢাবি প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে সরব ছাত্রদল May 31, 2025
img
বাজেট যত কম,ততবেশি সাফল্য : ফারাহ খান May 31, 2025