পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পাশে প্রায় ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সি-বিচ সড়ক উদ্বোধনের আগেই ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের জলোচ্ছ্বাসে সড়কটির বড় একটি অংশ ভেঙে গেছে।
ঘটনার পর পরই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল ইসলাম এই কমিটি গঠন করেন। এতে কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ ইয়াসীন সাদেককে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
কমিটিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, এলজিইডি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন দফতরের কর্মকর্তারা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে কমিটিকে মতামত দিতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত অস্বাভাবিক জোয়ারে সৈকতজুড়ে প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ে। এতে সদ্য নির্মিত সড়কের দুই-তৃতীয়াংশ অংশ ভেঙে পড়ে সাগরে তলিয়ে যায়। পরে ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
তদন্ত কমিটি গঠনের চিঠিতে বলা হয়েছে, সড়কটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে ভেঙে পড়েছে। কাজের মান ছিল অত্যন্ত নিম্ন। স্থানীয় বালু এবং পাতলা সিসি ঢালাই দিয়ে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। নির্মাণের আগে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই হয়নি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করেছেন, এটি সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ‘ব্যক্তিগত প্রকল্প’ ছিল। তাদের অভিযোগ, প্রকল্পের কাজ শুরু হয় টেন্ডার ছাড়াই, আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে। কেউ কেউ বলছেন, এটি ‘চার কোটি টাকার বাণিজ্যিক উদ্যোগ’ ছাড়া কিছু নয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি যথাযথ প্রক্রিয়াতেই অনুমোদিত। কাজের কিছু অংশ এখনও চলমান। আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ বাকি আছে। ঢেউ ঠেকাতে গাইডওয়ালেরও ডিজাইন ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিল কত উঠেছে বা কী অবস্থা, সেটা প্রকৌশলীরাই ভালো জানেন।’ তবে একটি প্রকৌশল সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৩ লাখ টাকার বিল পরিশোধ করা হয়েছে।
এদিকে, কুয়াকাটা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী নিয়াজুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পর্যটন ও পরিবেশ বিষয়ক সংগঠনের একজন কর্মী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ব্যর্থ উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি। দায়ীদের দ্রুত চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জানা গেছে, কুয়াকাটা সৈকতের শূন্য পয়েন্ট থেকে ট্যুরিজম পার্কের পূর্বদিকে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক তিনটি প্যাকেজে নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। প্রথম ধাপে ১৩০০ মিটার কাজের কিছু অংশ শেষ হলেও বাকি ৭০০ মিটারের কাজ শুরুই হয়নি।
আরএ/এসএন