আজ টেলর সুইফট মানেই বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তার আলো, যেখানে প্রতিটি কনসার্টে লক্ষ লক্ষ ভক্তের কণ্ঠে তাঁর গান, টিকিট বিক্রি থেকে সিনেমা—সর্বত্রই রেকর্ড গড়া সাফল্য। কিন্তু এই উজ্জ্বলতার পেছনে লুকিয়ে ছিল এক ভিন্ন গল্প, যা সামনে এনেছেন তাঁর এক প্রাক্তন সহপাঠী।
জেসিকা ম্যাকলেইন নামে এক নারী, যিনি টেলরের সঙ্গে একই শহরে বড় হয়েছেন এবং একই হাই স্কুলে পড়েছেন, সম্প্রতি একটি টিকটক ভিডিওতে জানান—স্কুলজীবনে টেলর সুইফট তেমন জনপ্রিয় ছিলেন না। বরং অনেকেই তাঁকে অপছন্দ করতেন। জেসিকার মতে, “সেই সময় টেলরের গানগুলো খুব সাধারণ মনে হতো আমাদের কাছে। আমি তখন চার্চে নিয়মিত যেতাম, ওর গান শুনতাম না। তবে এখন কিছু কিছু গান শুনছি।”
২০০৬ সালে, যখন জেসিকা ফ্রেশম্যান, টেলর তখন জুনিয়র। সেই গ্রীষ্মে ‘Teardrops on My Guitar’ গানটি মুক্তি পেয়েছিল, যা এক ঝটকায় জনপ্রিয়তা এনে দেয় টেলরকে। “সেই বছর টেলর তার স্কুল ছেড়ে বাড়িতে পড়াশোনা শুরু করে,” স্মৃতিচারণা করলেন জেসিকা। কিন্তু গান হিট হওয়ার পরও, এবং টেলর স্কুল ছেড়ে যাওয়ার পরও, তার সহপাঠীরা তাকে পছন্দ করত না।
“হেন্ডারসন হাই স্কুলে, যখন সে প্রথম বড় সাফল্য পায়, তখন বেশিরভাগ মানুষ তাকে ঘৃণা করত। এসব মানুষ তার সমবয়সী, একেবারে তার সহপাঠী,” তিনি বলেন।
তাদের ক্ষোভের বড় কারণ ছিল টেলরের গানের কথাগুলো। সে যে পুরনো প্রেমিকদের নিয়ে গান করত, তাদের অনেকেই তখনো একই স্কুলে পড়ত এবং এই গানগুলোতে তাদের নেতিবাচক ভাবে দেখা যেত। “সে যে ছেলেদের নিয়ে গান করত, তারা তখনো স্কুলে, আর এখন সবার মুখে একটাই কথা তারা কী কত খারাপ প্রেমিক ছিল,” বললেন জেসিকা।
২০০৯ সালে, যখন জেসিকা সিনিয়র, টেলর তার ক্লাসকে ২০০৯ সালের CMA অ্যাওয়ার্ডসে আমন্ত্রণ জানান, যেখানে সে তার ‘Fifteen’ গান পরিবেশন করছিল। “সেটা শুনে আমরা খুবই আনন্দিত ছিলাম, এমন আমন্ত্রণ পাওয়া বড় ব্যাপার,” তিনি স্মরণ করেন। কিন্তু যেহেতু সহপাঠীদের বেশিরভাগ টেলরকে পছন্দ করত না, তাই জেসিকা মনে করতেন আমন্ত্রণটা বেশ অপ্রত্যাশিত ছিল।
২০০৯ সাল টেলরের জন্য এক স্মরণীয় বছর ছিল। সে সময় সে জিতেছে সঙ্গীত জগতের অনেক বড় পুরস্কার, যেমন Entertainer of the Year ও Female Vocalist of the Year। “তার পারফরম্যান্স ছিল একেবারে দুর্দান্ত,” মন্তব্য করেন জেসিকা।
কিন্তু এ বছরই টেলরের প্রকাশিত ‘Midnights’ অ্যালবাম, যা কিম কার্দাশিয়ানের জন্মদিনে মুক্তি পায়—যার সঙ্গে তার সম্পর্ক আগে থেকে ভালো নয়—জেসিকা বুঝতে পারেন যে টেলরও কখনো কখনো ‘ছোটখাটো’ হয়ে ওঠে এবং তার সব কাজের পেছনে গভীর উদ্দেশ্য থাকে। “টেলর আমাদের CMA-তে আমন্ত্রণ দিয়েছিল যেন বলতে পারে ‘তোমরা যা করেছিলে তার ফল পেলেই তো,’ আর আমরা সেটা পাবলেই ছিলাম,” হাসতে হাসতে জানালেন তিনি।
ফ্যানরা অবশ্য টেলরের এই ছোটখাটো ছলনাকে সাপোর্ট করেছেন। এক ভক্ত লিখেছেন, “সফলতা ছাড়া বড় কোনো প্রতিশোধ হয় না।” আরেকজন বলেছেন, “যারা বড় কিছু করছে, তাদের ঘৃণা করার দরকার নেই, তারা শুধু হিংসা করছে।”
জেসিকা পরবর্তী ভিডিওতে বলেন, হিংসা ছিল অনেকের অপছন্দের মূল কারণ। “১৬-১৭ বছর বয়সী অনেক তরুণ হেন্ডারসনভিলে ছোট ছোট জায়গায় বাজাতো, পুরস্কার জেতেনা, আর টেলর বড় হয়ে যাওয়ায় সবাই হিংসা করত,” তিনি জানান। কেউ কেউ গুজবও ছড়াতো যে টেলর “কঠোর” বা “অমায়িক,” যা সবই ছিল হিংসাত্মক কল্পনা।
টেলরের স্কুলজীবন সহজ ছিল না, এটা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে টেলর বলেন, সহপাঠীরা তাকে ‘অদ্ভুত’ ও ‘বিভিন্ন’ ভাবত, তাই সে একাকী অনুভব করত। সেসব সময় কাটানোর জন্য গান লেখা তার একমাত্র আশ্রয় হয়। “আমার জন্য সব অনুভূতি একটা তিন মিনিট ত্রিশ সেকেন্ডের গানে বেঁধে ফেলাই ছিল একমাত্র উপায়,” টেলর বলেছিলেন। গান লেখা ছিল তার থেরাপি, কারণ স্কুলে তার বলার মতো কেউ ছিল না।
স্টপবুলিয়িং-এর জরিপ অনুযায়ী, দেশে ১৯ শতাংশ হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রী হয়রানির শিকার হয় এবং তারা তাদের সহপাঠীদের থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করে। অনেক সময় মনে হয় এই কষ্ট সারাজীবনের জন্য, কিন্তু টেলরের গল্প প্রমাণ করে এটা স্থায়ী নয়।
এক সময় নির্যাতিত ও একাকী টেলর সুইফট আজ বিশ্বের অন্যতম সফল গায়িকা। আর যারা তাকে অপছন্দ করেছিল, তারা এখন শুধু অতীতের কঠোর স্মৃতি।
টেলরের জীবন আমাদের শেখায়, কঠিন সময়গুলোই হয় জীবনের বড় সাফল্যের প্রথম ধাপ।
আরএ/এসএন