রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের বারবাকপুর গ্রামে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে থাকতে শুরু করেন প্রতারক রহিম প্রামাণিক ওরফে আকাশ মোল্লা। ওই গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের যুবকদের ফাঁদে ফেলে তুরস্ক নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তিনি হাতিয়ে নেন প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। এরপর সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান তিনি।
প্রতারণার শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পুলিশের।
জানা গেছে, চার মাস আগে নিজেকে তুরস্ক প্রবাসী পরিচয় দিয়ে বারবাকপুর গ্রামের আলতাফ শেখের মেয়ে তাসলিমা বেগমকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস শুরু করেন প্রতারক রহিম প্রামাণিক ওরফে আকাশ মোল্লা।
পরে ওই এলাকার যুবকদের মিষ্টি কথার ফাঁদে ফেলে তুরস্ক নেওয়ার প্রলোভন দেখান তিনি। তুরস্ক যাওয়ার আশায় বারোবাকপুর, পশ্চিম মুলঘর ও লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের ১০ যুবক তার হাতে তুলে দেন প্রায় ৩৫ লাখ টাকা।
কথা ছিল ১৭ জুন তাদের তুরস্ক নিয়ে যাওয়া হবে। তবে গত ১ জুন সকাল থেকেই লাপাত্তা ওই প্রতারক। বন্ধ রয়েছে তার মোবাইল নম্বরটিও।
ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ঢাকার একটি জেনারেটর কোম্পানিতে মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করি। দুই মাস আগে আকাশ মোল্লার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। সে আমাকে বলে যে, সে তুরস্কে ভালো বেতনে চাকরি করে।
১০ লাখ টাকা দিলে সে আমাকেও তুরস্কে ভালো বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে। তবে প্রথমেই পুরো টাকা দিতে হবে না। প্রথমে ৪ লাখ টাকা দিলেই সে আমাকে তুরস্কে নিয়ে যাবে। বাকি টাকা তুরস্কে গিয়ে দিলেই হবে। আমি তার কথায় বিশ্বাস করে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তাকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা দিয়েছি। এরমধ্যে সে ফরিদপুর নিয়ে আমার মেডিকেল করেছে। আগামী ১৭ জুন আমাকে তুরস্কে নেওয়ার কথা ছিল। কিন্ত ১ জুন সকালে সে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়েছে। তার মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে। এখন বুঝতে পারছি সে আমাকে নিয়ে ভুয়া মেডিকেল করিয়েছিল।
অটোচালক জুলহাস বলেন, আকাশ মোল্লা আমাকে তুরস্ক নেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছে। আমি একেবারে পথে বসে গেছি।
রাজমিস্ত্রীর সহযোগী রুহুল আমিন বলেন, আমার কষ্ট করে উপার্জন করা ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা আমি আকাশ মোল্লাকে দিয়েছি। ঈদের পর ১৭ জুন আমাকে তুরস্কে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১ জুন সে পালিয়ে চলে গেছে। আমার মতো আরো অনেকেরই টাকা নিয়ে সে পালিয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমরা রাজবাড়ী সদর থানায় অভিযোগ দিয়েছি। আমরা এই প্রতারকের বিচার চাই এবং আমাদের টাকা ফেরত চাই।
অভিযুক্ত রহিম প্রামাণিকের শ্বশুর আলতাফ শেখ বলেন, চার মাস আগে আমাদের গ্রামেরই ঘটক মোমিন কাজীর মাধ্যমে আকাশ মোল্লার সঙ্গে আমার মেয়ে তাসলিমার বিয়ে দেই। সে বলেছিল তার বাড়ি ঢাকার আমিন বাজার। নিজেকে সে তুরস্ক প্রবাসী পরিচয় দিয়েছিল। সে আমার ছেলেকে তুরস্কে পাঠানোর কথা বলে আমার কাছ থেকেও ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। এছাড়া আমার আরেক মেয়ের জামাইয়ের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়েছে।
১ জুন সকালে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে পালিয়েছে। পরে দেখি ঘরের ট্রাঙ্ক ভেঙে সে আমার মেয়ের গহনাও নিয়ে গেছে। যাদের কাছ থেকে সে টাকা নিয়েছে সেসব লোকজন এখন আমার বাড়ির ওপরে আসছে। আমি খুব বিপদের ভেতরে আছি।
প্রতারকের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, ওই প্রতারক আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে আমার গহনা নিয়ে পালিয়েছে। আমি তার বিচার চাই।
ঘটক মোমিন কাজী বলেন, ওই প্রতারক বারবাকপুর গ্রামের শহিদ বেপারীকে ধর্ম বাপ ডাকতো। শহিদের বাড়িতেই সে থাকতো। আমাকে সে একদিন বলে যে বিয়ে করবে। শহিদও বলে যে বিয়ে দিলে কোনো সমস্যা নেই।
পরে আমি তাসলিমার সঙ্গে তার বিয়ে দিয়ে দেই। এখন শুনছি সে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। শহিদ এখন দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। পালানোর পর আমি ওই প্রতারকের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জেনেছি তার প্রকৃত বাড়ি বারোবাকপুরের পাশের এলাকা মনোসার বটতলায়। তার প্রকৃত নাম রহিম প্রামাণিক। তবে সে এনআইডি কার্ডে আকাশ মোল্লা নাম ব্যবহার করে। এনআইডি কার্ডটি ভুয়া কিনা তা আমি জানি না। সে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এরকম প্রতারণা করে বিয়ে করে এবং টাকা হাতিয়ে নেয় বলে এখন শুনতে পাচ্ছি। সে প্রতারনা করে বলে তার বাবা ও পরিবারের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, এই ঘটনায় ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএম/এসএন