আর্জেন্টিনার রোজারিওর ‘নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজ ক্লাব’, ফুটবল বিশ্বে যেটি পরিচিত লিওনেল মেসির সাবেক ক্লাব হিসেবে। সম্প্রতি এক বিতর্কিত কাণ্ড ঘটিয়ে বসেছে ক্লাবটি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের এক তারকার সঙ্গে ছবি তোলার জন্য একাডেমির কয়েকজন ক্ষুদে ফুটবলারকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। আর এ ঘটনায় তোপের মুখে পড়েছে নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজ ক্লাব।
রোজারিও সেন্ট্রাল ক্লাবের উইঙ্গার বিক্তর ইগ্লাসিও মালকোরার সঙ্গে একটি ছবি তোলেন নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজ ক্লাবের একাডেমির কিছু ক্ষুদে ফুটবলার। ক্ষুদে ফুটবলারদের বয়স হবে ৯-১০। পরে এই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ওই বাচ্চাদের অনুশীলন স্থগিত করে দেয় নিওয়েল’স ক্লাব। সেইসঙ্গে তিন মাসের জন্য তাদের বৃত্তি প্রত্যাহার করা হয়।
শহরের দুই ক্লাব নিওয়েল’স ও রোজারিও সেন্ট্রাল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী তো বটেই, তাদের লড়াই ও বৈরিতার নানা ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু প্রতিপক্ষের একজন তারকা ফুটবলারের সঙ্গে ছবি তোলায় ক্ষুদে ফুটবলারদের এমন কড়া শাস্তি পেতে হবে, এটা চমকে দিয়েছে অনেককেই। এ ঘটনা নিয়ে রীতিমতো ঝড় বইছে আর্জেন্টিনার ফুটবলে।
নিওয়েল’স ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আল্ট্রা-সাপোর্টারদের’ হাত থেকে ওই বাচ্চাদের রক্ষা করতেই ক্লাব এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর উগ্র সমর্থকেরা নানা হুমকি দিচ্ছিলো। তারা ওই ক্ষুদে ফুটবলারদের একাডেমি থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানাচ্ছিলো।
যার সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে এত ঘটনা, সেই মালকোরা স্বয়ং তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মাস তিনেক আগে একটি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে ওই ছবি তোলা হয়েছিল। এ ছাড়া প্রতিপক্ষ ক্লাবের একাডেমি ফুটবলারদের জন্য সহানুভূতি জানিয়েছেন তিনি।
‘ওদের জন্য আমার কষ্ট লাগছে। বাচ্চারা তো নিষ্পাপ, এত জটিলতা ওদের স্পর্শ করে না এবং ওরা কী করছে, এসবের কতটুকুই বা ওরা জানে! ওরা স্রেফ শীর্ষ পর্যায়ের একজন ফুটবলারের সঙ্গে একটি ছবি নিতে চেয়েছে, দুনিয়ার সব বাচ্চাই যেমন চায়।’
এ ঘটনা গড়িয়েছে জাতীয় দল পর্যন্তও। চিলির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচের আগে গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনিও এটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ‘কেউ যদি একদিন প্রথম বিভাগে খেলার স্বপ্ন দেখে, তাহলে কার সঙ্গে কোথায় খেললো, সেটা তো কোনো ব্যাপার নয়।’
সমালোচনার মুখে নিওয়েলস ক্লাব কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে জানিয়েছে, ওই ছেলেরা ক্লাবের সদস্য থাকবেই এবং ক্লাবের পরিচালকরা আগামী সপ্তাহে ওই ছেলেদের অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা করে তাদের ‘কথা শুনবেন, পাশে থাকবেন এবং উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’
১৯৯৫ সালে এই নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজ ক্লাবে পা রেখেছিল আট বছরের মেসি। পরে ১৩ বছর বয়সে মেসি পাড়ি জমান স্পেনের বার্সেলোনায়। এ কাহিনি পুরো ফুটবল বিশ্বেরই জানা।
রোজারিও সেন্ট্রাল থেকেও উঠে এসেছেন এক তারকা। চার বছর বয়সে এই ক্লাবে পা রেখেছিলেন আনহেল ডি মারিয়া। ১৭ বছর বয়সে এই ক্লাবের হয়েই তার পেশাদার ফুটবলে অভিষেক। এরপর দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন পুরো ফুটবল দুনিয়া। সবশেষ আবারও তিনি ফিরে গেছেন তার শৈশবের ক্লাবটিতে।
আরআর/টিএ