আনাড়ি লোকজনকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংটা গঠন করা হয়েছে: মাসুদ কামাল

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল সেটা অনিশ্চিত এবং এটা নিয়ে প্রেস উইংয় মোটামুটি ইউনূস সাহেবের প্রেস উইং লেজেগোবরে পাকিয়ে ফেলেছে। প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে যে প্রেস কনফারেন্সটা হয়েছে সেখানে প্রেসসচিব বলেছেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকের সময় এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। কারণ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী নাকি কানাডা সফরে আছেন। পরে জানা গেল, উনি কানাডা সফরে যান নাই।

তো কি হল ভাই—মানে এতো আনাড়ি লোকজনকে নিয়ে এই প্রেস উইংটা গঠন করা হয়েছে এবং এর মাথায় যিনি শিরোমণি হিসেবে বসে আছেন—এটুকু খবর তিনি সংগ্রহ করতে পারেননি, যে দেশে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদার ব্যক্তিকে গেছেন, সেখানে ওই দেশের প্রধানমন্ত্রী আদৌ সে দেশে আছেন কি নাই? এই খবরটা সংগ্রহ করার সক্ষমতা ওনার নাই।

বুধবার (১১ জুন) একটি ইউটিউব চ্যানেলে তিনি এসব কথা বলেন।

সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, প্রেসসচিব দেশের টেলিভিশনগুলিতে মাঝে মাঝে যান—গিয়ে একদম ফাটিয়ে ফেলেন, পর্দা ফেটে মনে হয় বেরিয়ে যাবে এরকম মনে হয়। কিন্তু ওনার দক্ষতা এবং যোগ্যতার যে দোষ সেটা মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে।

প্রেসসচিবের উদ্দেশে তিনি বলেন, ওনার কর্মতৎপরতা দেখেছি আমরা। এর মধ্যে দেখেছি ভিডিও দেখলাম যে উনি নিজেই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যাচ্ছেন হাতে ব্যাগ নিয়ে ওনার হাতে ব্যাগ নিয়ে। মোবাইলে ছবি তুলছেন, ভিডিও করছেন। উনি যাচ্ছেন এখানে এ পর্যন্ত কি কি হয়েছে সেগুলো আমরা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি কি কি হয়েছে? আমরা দেখেছি উনি ওনারা গ্রুপ নিয়ে যখন বের হয়েছেন এয়ারপোর্টের সামনে, সেখানকার প্রবাসী যারা বাংলাদেশি আছে তাদের বিক্ষোভ, তাদের স্লোগান, তাদের প্ল্যাকার্ড নিয়ে থাকা। আবার দেখলাম গাড়িতেও মানে এরকম মানে নিয়ন আলোতে লেখা হচ্ছে যে—ড. ইউনূস ডেমোক্রেসি কিভাবে বারোটা বাজিয়েছেন?

তিনি বলেন, আমরা এগুলো আগেও দেখেছি। যখন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন, উনি যখন ইংল্যান্ডে অথবা আমেরিকা যেতেন এই দুইটা দেশে বেশি হয়—যখন যেতেন তখন এয়ারপোর্ট এর সামনেই দেখতাম যে বিরোধী দলের লোকজন তারা নানা রকম স্লোগান দেওয়া। আবার এটাও দেখেছি বিপরীত দিকে উনার সমর্থক গোষ্ঠীরাও প্রবল প্রতাপে উপস্থিত থাকত। মাঝে মাঝে এই দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হতো।

মাসুদ কামাল বলেন, এবার যেটা হলো বেশ কয়েকজন লোক ওখানে উপস্থিত ছিলেন অথবা বাইরে থেকে দর্শক হিসেবে দেখতে এসেছেন—এমন একজন লোক আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, এবার নাকি দৃশ্যটা অন্যরকম ছিল।

অন্যরকম মানে, ওনার বিপক্ষে যারা ছিল তাদের মাধ্যমে উনি বলছেন যে আমি বিএসপির লোকজনকে দেখেছি। সবাই তো মোটামুটি সবাইকে চেনে। তারাও নাকি তাকে এরকমভাবে মানে প্রত্যাখ্যান করার মতো কথাবার্তা বলেছেন। আবার শফিক সাহেবকে অনেকে চিৎকার করে ডাকছে। এর পাশাপাশি বিপরীত দিকে ওনাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে উনার প্রতি পজিটিভ প্লেকার্ড নিয়ে যে জায়গাটা ছিল, আমাকে যিনি জানিয়েছেন তিনি বলেছেন, যে মাত্র চারজন লোককে দেখেছেন। তিনজনে মিলে একটা ব্যানার ধরে আছে। আর একজন লোক সেটা ভিডিও করছে। এরকম দৃশ্য তিনি দেখেছেন। আমি জানি না প্রকৃত বাস্তবতা কি? তবে যেটাই হোক এটা আমাদের জন্য আসলে অপ্রত্যাশিত। উনি তো কোন দল করেন না। উনি তো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, উনি কেন রাজনৈতিকভাবে এরকম একটা বিতর্কিত অবস্থানে চলে যাচ্ছেন।

বুধবার লন্ডনের প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউজে রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে ড. ইউনূস একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ টেনে মাসুদ কামাল বলেন, সে সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেছেন ১৭ বছর পর আমরা সত্যিকারের একটি নির্বাচন করতে যাচ্ছি, যা আমাদের ইতিহাসই সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচনটা উনি উপহার দিতে যাচ্ছেন। উনার এই বক্তব্য নিয়ে আমার বিশাল আপত্তি। উনি এখানে আরেকটা জিনিস জানিয়েছেন যে নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকারের কোনও দায়িত্বে আমার থাকার কোন ইচ্ছে নেই।

মাসুদ কামাল বলেন, উনি বলেছেন যে ইলেকশন হলে নতুন যে সরকার আসবে তাদের কোন দায়িত্বে উনার থাকার ইচ্ছা নেই। এই কথাটা আমি মোটামুটি অবিশ্বাস করি। উনি এর আগেও বলেছিলেন কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার উনার সরকারের কোন ইচ্ছা নেই, সেই যে ইচ্ছা নেই, সেই ইচ্ছার চেহারাটা আমরা এর মধ্যে দেখেছি। উনি যখন বলেন যে ইচ্ছা নেই তখন বোঝা যায় যে ইচ্ছা আসলে আছে। নাহলে এরকম হতো না।

তিনি বলেন, যাইহোক এটা আমার ধারণা উনি থেকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। কীভাবে পারবেন আমি জানি না। কেউ কেউ আমাকে একথাও বলেছেন। তারেক রহমানের সঙ্গে যে মিটিংটা হচ্ছে সেই মিটিংটা ব্যাসিক্যালি এই আলোকে হচ্ছে। যেকোনভাবে অ্যাকমোডেট করা যায় কি না। দেখা যাক কী হয় এবং উনি আরেকটা কথা বলেছেন যে নতুন বাংলাদেশ তৈরির জন্য একটা সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক কমিশন গঠন করেছেন। তাদের সুপারিশ থেকে উনি তাকিয়ে আছেন। এটা হচ্ছে আমার বিবেচনা একটা বিশাল অশ্বডিম্ব। উনি যে সংস্কার কমিশন গুলি গঠন করেছেন, এই একটা কমিশনও কোন কাজের কমিশন হয়নি, আমার বিবেচনায়। আমি মনে করি সবগুলো আপাতত মার্ক হয়নি। এই কমিশনগুলো খুবই বিদেশি লোকজনকে ভাড়াটে লোকজনকে এনে কিছু ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীদের এনে উনারা সংস্কার করছেন। আমাদের দেশের সংস্কার যে লোকগুলি সংস্কারের মূল নায়ক ওরাতে দেশে থাকেই না। ওরা বিদেশের নাগরিক, ওরা আমাদের কি সংস্কার করে দেবে? আর যদি তারা করে সেটা আমরা মানবো কেন আমাদেরকে লোকজন নেই? আমরা কি এতই মূর্খ হয়ে গেছি, যে আমেরিকার নাগরিক আছে আমাদের সংস্কার করে দেবে। এটা আমরা মানবো না তো, আমি তো মানবোই না, আমার মতো অনেক লোক আছে আমার মতো পলিটিকাল পার্টি গুলো মানবে এটা আমি মনে করি না। তারপরেও উনি করতে যাচ্ছেন উনি খুব আশাবাদী আসলে আমার বিবেচনায় সংস্থা-টঙ্কস্কার কিছু না। সংস্কারের কথা বলে উনি সময়ক্ষেপণ করতেছেন।

মাসুদ কামাল আরো বলেন, আর একটা বড় বিতর্কিত কাজ উনি করতে যাচ্ছে। সেটা হলো উনি জুলাই সনদের জন্য অপেক্ষা করছেন। এই জুলাইয়ের সনদ জিনিসটা আসলে কি হবে? সেটা নিয়েও কিন্তু একটা বড় বিতর্ক সামনে আছে। এখন যে আলোচনা শেষ করি ওই যে বলছেন যে ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন উনি উপহার দেবেন জাতিকে কীভাবে দেবেন? আমি এটাতে মোটেই আস্থা রাখি না। কারণ আমি বলি, উনি এমন একটা নির্বাচন করতে যাচ্ছেন যে, নির্বাচনে এ দেশের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ব্যালট পেপারে পাবে না। আওয়ামী লীগের নির্বাচন অংশ নিতে পারবে না, যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচন অংশ নিতে না পারে, আওয়ামী লীগ যে বিশাল জনগোষ্ঠী আছে, আওয়ামী লীগের সমর্থক, আওয়ামী লীগের কর্মী অথবা আওয়ামী লীগ জাস্ট ভোট দেন নৌকা মার্কায়। সেই লোকগুলো তো তাদের জন্য পছন্দের প্রার্থীকে তারা পাবে না। এটা কিভাকে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নির্বাচন হয়, আমি বুঝতে পারি না। একটা বড় জনগোষ্ঠীকে নির্বাচনে বাইরে রেখে আপনি কিভাবে নির্বাচন করবেন?

তিনি বলেন, দুই নম্বর পয়েন্ট হচ্ছে আপনি কি এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন করবেন। ইনি নিয়ে এরই মধ্যে আপনার পালিত দল এনসিপি বিতর্ক তৈরি করছে। তারা তো বলছে তারা এই ইসি মানে না, এই ইলেকশন কমিশন মানে না। তারা বলেছে এই ইলেকশন কমিশন বিএনপি ইলেকশন কমিশন হয়েছে। তাই যদি হয় তাহলে বিএনপি এই ইসি মানে। আর এটা যদি আপনি ভেঙে দিতে চান, বিএনপি আপত্তি করতে পারে। আমি জানি না এনসিপির কথা যদি সত্য হয়, আর আপনারা ভেঙে না দেন তাহলে এনসিপি ইলেকশন কমিশন নিয়ে আপত্তি করবে। যে ইলেকশন কমিশন নিয়ে নতুন কোনও আপত্তির প্রশ্ন রাখলেও আপনি কিভাবে ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবেন?

আরআর/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রিতে Nov 27, 2025
img
কপিল শর্মাকে ঘিরে ফের তুমুল আলোচনা Nov 27, 2025
img
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভুয়া শিক্ষার্থী আটক Nov 27, 2025
img
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি আজ Nov 27, 2025
img
সৌন্দর্য নিয়ে নীরবতা ভাঙলেন শ্রুতি হাসান Nov 27, 2025
img
হংকংয়ের অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি বেড়ে ৪৪, এখনো নিখোঁজ ২৭৯ Nov 27, 2025
img
উপকারী হলেও মেথি ভেজানো পানি কাদের জন্য বিপজ্জনক Nov 27, 2025
img
খুলনায় বিএনপির ১০ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার Nov 27, 2025
img
মধু কি চিনির ভালো বিকল্প? জেনে নিন Nov 27, 2025
হাসিনাকে ফেরতের অনুরোধ খতিয়ে দেখছে দিল্লি: রণধীর জয়সওয়াল Nov 27, 2025
হাসিনা, জয় ও পুতুলের প্লট দুর্নীতি মামলার রায় কাল Nov 27, 2025
খুলনায় প্রস্তুত জামায়াতের সম্ভাব্য হিন্দু প্রার্থী Nov 27, 2025
৩০০ বছরের রেকর্ড বৃষ্টি, মানুষের জীবন বিপন্ন Nov 27, 2025
নতুন জোটে এনসিপি, এবি পার্টি, আপ বাংলাদেশ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, Nov 27, 2025
অনলাইন হেনস্তা ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সরব হুমা কুরেশি Nov 27, 2025
প্রযোজকের অভিযোগের বিরুদ্ধে তিশার স্পষ্ট অবস্থান Nov 27, 2025
টলিউডের তারকা জুটি দেব–রুক্মিণীর বিয়ে নিয়ে নতুন আলোচনা Nov 27, 2025
গান ও অভিনয়ে হতাশা প্রকাশ করলেন জেফার রহমান Nov 27, 2025
img
হোয়াইট হাউসের কাছে ন্যাশনাল গার্ডের ২ সদস্যকে গুলি, আটক ১ Nov 27, 2025
img
বায়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে অন্য ক্লাবে যেতে আগ্রহী নন হ্যারি কেইন Nov 27, 2025