বাংলাদেশ প্রতিবছর কাতার থেকে ৪০ থেকে ৫০টি কার্গোর মাধ্যমে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করে। চুক্তি অনুযায়ী ওমান থেকেও নিয়মিত আসে এলএনজিবাহী জাহাজ। তবে ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দেয়ায় বাংলাদেশেও জ্বালানি তেল ও গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কয়েকদিন ধরেই ইরান এবং ইসরাইলের মধ্যে চলছে হামলা-পাল্টা হামলা। আর এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু সংঘাতের মাঝেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পারস্য উপসাগরকে আরব সাগরের সঙ্গে সংযুক্তকারী মাত্র ৩০ মাইল প্রস্থের হরমুজ প্রণালী।
গুরুত্বপূর্ণ এ নৌ-রুট দিয়ে বিশ্বের ৩০ শতাংশ তেল বহনকারী অয়েল ট্যাংকারগুলো চলাচল করে। একইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের পাশাপাশি এলএনজি আনার অন্যতম নৌপথ।
চট্টগ্রাম নৌ বাণিজ্য অধিদফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার (রুটিন চার্জ) ক্যাপ্টেন এসএম জালাল ইউ গাজী বলেন, বাংলাদেশের মেজরিটি ক্রুড অয়েল ও গ্যাস হরমুজ প্রণালী দিয়ে আমদানি করা হয়। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ হবে।
বাংলাদেশ বছরে কাতার থেকে ৪০ থেকে ৫০টি কার্গোর মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করে। চুক্তি অনুযায়ী ওমান থেকেও এলএনজিবাহী কার্গো আসে বাংলাদেশে। এ অবস্থায় যুদ্ধের কারণে হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকির মধ্যে থাকায় জ্বালানি তেল ও এলএনজি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিকল্প হিসেবে লোহিত সাগরের বাবল মান্দেব প্রণালীর কথা বলা হলেও তার কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে ইরানপন্থি হুতি বিদ্রোহীরা।
এমএসসি শিপিংয়ের হেড অব অপারেশন আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, তেল ও গ্যাসের জন্য বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল। তাই হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাহত হবে সরবরাহ ব্যবস্থা। এতে চাপ পড়বে মজুতের ওপর।
হরমুজ প্রণালী এখনো বন্ধ না হলেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। একইসঙ্গে ঝুঁকি বাড়ায়, বাড়ছে জাহাজ ভাড়াও। ফলে অন্যান্য পণ্যেরও আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে বলে দাবি শিপিং ব্যবসায়ীদের। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ইকবাল আলী শিমুল বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় জাহাজ কোম্পানিগুলোও জাহাজ ভাড়া বাড়তে পারে। এতে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে অর্থনীতি।
তবে এখন পর্যন্ত ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের কোনো প্রভাব না পড়লেও সবধনেরর পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ বলেন, বন্দর প্রস্তুত রয়েছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আমদানি-রফতানিকারকদের সাধ্যমতো সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
এ মুহূর্তে বাংলাদেশে জ্বালানি তেল কিংবা এলএনজির কোনো সংকট নেই। তবে ইরান এবং ইসরাইল যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
আরআর/এসএন