বাসস্থান ছেড়ে স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন ইরানিরা

ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ায় বেসামরিক মানুষ হতাহতের আশঙ্কা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটছেন ইরানিরা। বাড়ির শেষ মুহূর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন তারা।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানিদের মধ্যে যারা নিজেদের বাড়িতে তালা লাগিয়ে শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তারা খালি পড়ে থাকা একটা সোফা, তার সামনে স্যুটকেসে জিনিসপত্র ভরে রাখা আছে।

জানালাগুলোর পর্দা নামানো আর তার পাশেই রাখা ঘরোয়া গাছের টব, কিছু ঘর সাজানোর জিনিস আর সোফার কুশন যত্ন করে সাজিয়ে রাখা এমন ছবি তারা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন। শিরোনামে লেখা থাকছে, ‘দ্য লাস্ট ফটো অব হোম’, অর্থাৎ বাড়ির শেষ ছবি।

গত শুক্রবার ভোররাতে ইরানে ইসরায়েলের আচমকা হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়া তেহরানের বাসিন্দারা এখনো ভয় আর বিভ্রান্তির ঘোর থেকে বের হতে পারছেন না। তাদের সঙ্গে কথায় উঠে আসছে অসহায়ত্ব আর মনোজাগতিক নানা টানাপড়েনের দিক।

‘বেশ কয়েক রাত ঘুমাইনি আমরা। সবাই (শহর) ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমি যাব না। আমার বাবা বলেছেন, পালিয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজের বাড়িতে মৃত্যু বেশি সম্মানের,’ এনক্রিপটেড সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপে বিবিসির এক প্রতিবেদককে এমনটাই বলেছেন সংগীত নিয়ে পড়া ২১ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী।

একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘প্রিয়জনদের কাছ থেকে পাওয়া ছোটখাটো উপহার আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছি। গাছগুলোতে জল দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্ট সহ্য করাটা খুব কঠিন, বিশেষ করে আপনি যখন নিশ্চিত নন যে কখনো ফিরতে পারবেন কি না।’

আরেকজনের কথায়, ‘কখনো এত দুঃখ হয়নি। জানি না আর কোনো দিন ফিরতে পারব কি না।

আরেকজন সামাজিক মাধ্যমে তার কাজ করার টেবিল, কম্পিউটার আর একজোড়া হেডফোনের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘যেসব জিনিস পেতে এত পরিশ্রম করেছি, সেগুলোকে বিদায় জানালাম। এগুলো পেতে কত রাত জাগতে হয়েছে, মাথার চুল সাদা হয়ে গেছে। আশা করি, যখন আমি ফিরে আসব, এগুলো এখানেই থাকবে।’

প্রায় এক কোটি মানুষের শহরটির আরেক বাসিন্দা লিখেছেন যে ‘বিশ্ববিদ্যালয় আর কাজ করার’ অনেক স্বপ্ন নিয়ে তিনি রাজধানী শহরটায় এসেছিলেন।

অনেকে লিখছেন, ‘কত স্নেহ দিয়ে আর পরিশ্রম করে বাড়ির জন্য কত কিছু কিনে ঘরটা সাজিয়ে তুলেছিলাম। একদিনে আমার এই সুন্দর নিরাপদ আশ্রয়টায় ফিরে আসব, এই আশা নিয়েই আমি নীরবে বিদায় জানালাম।’

ইসরায়েল সোমবার শহর খালি করার নির্দেশ জারি করার অনেক আগেই এই মানুষেরা সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন।

তেহরানের উত্তরাঞ্চলের একটা বড় এলাকার মানচিত্রে জায়গা চিহ্নিত করে দিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে যে সেখানকার বাসিন্দাদের উচিত ‘অবিলম্বে’ এলাকা ত্যাগ করা।

ইসরায়েলের বিমান হামলার প্রথম চারদিনেই ইরানে অন্তত ২২৮ জন মারা গেছেন। আবার ইসরায়েলি শহরগুলোতে তেহরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইরানি বন্ধুরা এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো সাহায্য চায়নি : পুতিন Jun 19, 2025
img
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিলেন ট্রাম্প Jun 19, 2025
img
শপথ না পড়ানোটা তাদের পলিটিক্যাল ডিসিশন, তা আগেই নেওয়া : ইশরাক Jun 19, 2025
img
খাগড়াছড়ি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি গ্রেফতার Jun 19, 2025
img
ইরানকে সমর্থন করে বিবৃতি দিল উত্তর কোরিয়া Jun 19, 2025
img
ইসরায়েলে ৪০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১ হাজার ড্রোন নিক্ষেপ করল ইরান Jun 19, 2025
img
বিএনপি ম্যাজিক্যালি সেনাবাহিনীর সমর্থন পেয়েছে : গোলাম মাওলা রনি Jun 19, 2025
img
শত্রু সাপেক্ষে রাষ্ট্রের রাজনীতি ধারণ করেছেন জিয়াউর রহমান : ব্যারিস্টার ফুয়াদ Jun 19, 2025
img
বিএনপি অন্যায় করে না, অন্যায়কারীকে প্রশ্রয়ও দেয় না : আমিনুল হক Jun 19, 2025
img
‘ইসরায়েলের নেতৃত্বের একটি অংশ ক্রিমিনাল’, বললেন ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোরান মিলানোভিচ Jun 19, 2025
img
ইরানের ভূগর্ভস্থ ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি ট্রাম্প Jun 19, 2025
img
মোবাইল-ইন্টারনেট ছেড়ে নিজেকে গড়ছে বৈভব! দ্রাবিড়-মন্ত্রে ‘দীক্ষা’ বিস্ময়-কিশোরের Jun 19, 2025
img
মেলেনি পারিশ্রমিকের কানাকড়িও! অক্ষয়কে অস্বস্তিতে রেখে থমকে ‘ওয়েলকাম টু দ্য জঙ্গল’ Jun 19, 2025
img
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ Jun 19, 2025
img
দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নতুন রাডার উদ্বোধন Jun 19, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য সামরিক ক্ষমতা সংরক্ষিত রাখছে তেহরান Jun 19, 2025
img
যুদ্ধে জড়ালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি! ইরানকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই যুক্তরাষ্ট্রের Jun 19, 2025
img
ইসরায়েলকে সমর্থন করায় ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন নেতানিয়াহু Jun 19, 2025
img
কুড়িগ্রামে ট্রাক্টরের চাপায় নিহত ২ Jun 19, 2025
img
স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া Jun 19, 2025