ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন হলে কী ঘটতে পারে?

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আঁচ যখন ক্রমেই বাড়ছে, তখন ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের সম্ভাবনা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পরোক্ষভাবে সেই বার্তা দিলেও, বাস্তব চিত্র এতটা সরল নয়—বরং তা গভীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও সামরিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’ মানেই যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলপন্থি সরকার প্রতিষ্ঠা হবে—এমনটি ধরে নেওয়া বড় ধরনের ভ্রান্তি হতে পারে। বরং বিপরীত চিত্রই সামনে আসার সম্ভাবনা বেশি। নতুন কোনো সরকার আরও কট্টরপন্থী হতে পারে, যারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দিকেই ঝুঁকবে, বিশেষ করে যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল একযোগে সামরিক হামলা চালায়।

সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনির মৃত্যু হলে তাকে বদলানো সম্ভব হলেও গোটা শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়লে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে, তা গোটা অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। ওয়াশিংটনের বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন একটি পরিস্থিতি ইরানকে বিচ্ছিন্নতাবাদ, গৃহযুদ্ধ ও অন্তর্দ্বন্দ্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

কুইন্সি ইনস্টিটিউটের নির্বাহী সহ-সভাপতি ত্রিতা পারসি বলেন, "শুধু শাসনব্যবস্থা ভেঙে দিলেই সমাধান হয় না। অনেক সময় রাষ্ট্র নিজেই ভেঙে পড়ে, আর এরপর যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়, তা সহজে থামে না।"

ইরানে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আন্দোলন—যাদের মধ্যে অনেকেই ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ পুষে রেখেছে। শাসনব্যবস্থার পতন হলে এই গোষ্ঠীগুলো সুযোগ হিসেবে তা কাজে লাগাতে পারে এবং স্বাধীনতার দাবিতে নতুন করে সংঘাত তৈরি করতে পারে।

বর্তমানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ‘অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টস’-এর ৮৮ সদস্যের ভোটে আজীবনের জন্য নির্বাচিত হন। তবে উত্তরসূরি নির্ধারণে কোনো আনুষ্ঠানিক নিয়ম নেই। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খামেনি গোপনে তিনজন প্রভাবশালী আলেমকে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

সব মিলিয়ে, ইরানে সরকার পরিবর্তনের চিন্তা যতটা রোমাঞ্চকর শোনাতে পারে, বাস্তবে তার পরিণতি হতে পারে বহুস্তরীয় জটিলতায় ভরা। এটি শুধু একটি শাসকের পতন নয়, বরং গোটা রাষ্ট্র কাঠামোর ভাঙন, যার অভিঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে।

আরআর/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ঋত্বিক-আবীর আঙ্কেল সিনেমার বাবা, ওদের সঙ্গে শুটিং করি! ওরা তো সত্যিকারের বাবা নয়: অনুমেঘা Nov 13, 2025
img
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ বিরোধী যুবদলের মিছিলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা! Nov 13, 2025
img
রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান থেকে ১০ ককটেল-পেট্রোল বোমা জব্দ Nov 13, 2025
img
ঢাবিতে ককটেল বিস্ফোরণ, আহত মাদ্রাসা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা Nov 13, 2025
img
‘দুই মাস ফোন ব্যবহার করিনি, মানুষের মন্তব্য পড়ি না’ Nov 13, 2025
img
মাদারীপুরে বাস টার্মিনালে ২ টি ককটেল বিস্ফোরণ Nov 13, 2025
img
রাজধানীর পল্লবীর সাগুপ্তা সড়কে বাসে আগুন দিল দুর্বৃত্তরা Nov 13, 2025
img
১ জানুয়ারি নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করবেন জোহরান মামদানি? Nov 13, 2025
img
৮ দলের কর্মসূচি নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ফেসবুক পোস্ট Nov 13, 2025
img
পাকিস্তান ছেড়ে দেশে ফিরতে চান ক্রিকেটাররা, সতর্ক করলো লঙ্কান বোর্ড Nov 13, 2025
img
সারা দেশে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে এনসিপির মশাল মিছিল Nov 13, 2025
img
পিরোজপুরে আওয়ামী লীগের লকডাউন ঠেকাতে জামায়াতের মোটরসাইকেল মহড়া Nov 13, 2025
img
নারায়ণগঞ্জে এনসিপির মশাল মিছিলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান Nov 13, 2025
img
'স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বন্ধুত্বের ব্যাপারটা খুব কঠিন তা কিন্তু নয়' Nov 13, 2025
img
আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচির প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ Nov 13, 2025
মিমি উদযাপন করলেন সহকারী বুল্টির জন্মদিন Nov 13, 2025
img
ইডেন টেস্টের আগে গম্ভীরের কঠোর সিদ্ধান্ত, অনুশীলনের মাঝেই বাদ এক ক্রিকেটার! Nov 13, 2025
img
এশিয়ান আর্চারির ফাইনালে বাংলাদেশের বন্যা ও হিমু Nov 13, 2025
img
বিশ্বকাপ জয় কেড়ে নিয়েছে দীপ্তির স্বাধীনতা! Nov 13, 2025
img
তেজগাঁও রেলস্টেশনে থেমে থাকা ট্রেনে আগুন দিয়ে পালানোর সময় আটক ২ Nov 13, 2025