বিচারপতি সিনহাকে অপসারণের সেই ঘটনা আপিল বিভাগে তুলে ধরলেন শিশির মনির

বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ ও বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি সংক্রান্ত ঐতিহাসিক মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ শুনানিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে অসুস্থ বানিয়ে দেশ থেকে তাড়ানোর ঘটনা আপিল বিভাগে তুলে ধরেছেন সংবিধান ও ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ শুনানি শুরু হয়।

শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি ও বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ মামলার রায়কে কেন্দ্র করেই সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে অসুস্থ বানিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর পর হেভিয়ার্স কপার্স মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তখন আমার সিনিয়র মরহুম অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, আমাদের প্রধান বিচারপতি কোথায়? তার জবাব ওই সময়ের রাষ্ট্রপক্ষ দিতে পারিনি। বিচারপতি সিনহাকে সরিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আদালতকে ব্যবহার করে তাদের মনের মতো করে বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন করেছিলেন। বিচারপতি সিনহা তার ব্রোকেন ড্রিম বইতে সব ঘটনা তুলে ধরেছেন। আইনজীবী শিশির মনির বলেন, মাসদার হোসেন মামলার নির্দেশনা বাস্তবায়নের মধ্যেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিহিত। এ সময় আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। 

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। 

১২ দফা নির্দেশনার মধ্যে ১. সংবিধানের ১৫২ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় সব বিভাগের কাজ সার্ভিস অব রিপাবলিকের ভেতরে পড়বে। তবে বিচার বিভাগের কাজ ও অবকাঠামোর সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের সিভিল সার্ভিসের অনেক ভিন্নতা রয়েছে। বিচার বিভাগকে অন্যান্য সিভিল সার্ভিসের সঙ্গে একত্রিত করা যাবে না; ২. বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করা এবং নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারিক কাজ করতে পারবেন না; ৩. সিভিল সার্ভিস অর্ডার ১৯৮০ অনুযায়ী সব ম্যাজিস্ট্রেটকে পিএসসির অধীনে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া হয়। একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া সংবিধান পরিপন্থি; ৪. এই রায় পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন বিধিমালা এবং কমিশন গঠন করতে হবে; ৫. সংবিধানের ১১৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়ারির সবার চাকরির বিধিমালা (নিয়োগ, পদায়ন, বদলি পদোন্নতি ও ছুটিসহ অন্যান্য) প্রণয়ন করবেন; ৬. রাষ্ট্রপতি জুডিশিয়াল সার্ভিস পে-কমিশন বিধিমালা প্রণয়ন করবে; ৭. সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের থাকবে; ৮. বিচার বিভাগ জাতীয় সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের অধীনে থাকবে না এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সব বিচারক স্বাধীনভাবে কাজ করবেন; ৯. জুডিশিয়ারির (নিম্ন আদালত) বার্ষিক বাজেট প্রণয়নের ওপর নির্বাহী বিভাগের কোনো হাত থাকবে না। এই বাজেট সুপ্রিম কোর্ট প্রণয়ন এবং বরাদ্দ করবে; ১০. জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যরা প্রশাসনিক আদালতের আওতাভুক্ত থাকবেন; ১১. এই রায় অনুযায়ী বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের জন্য সংবিধানে কোনো সংশোধন করার প্রয়োজন নেই। তবে পৃথককরণ আরও অর্থবহ করতে যদি সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়, তবে তা করা যাবে; ১২. জুডিশিয়াল পে-কমিশন: জুডিশিয়াল পে-কমিশন জুডিশিয়ারির সদস্যদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ না করবে, ততদিন পর্যন্ত বর্তমান অবকাঠামো অনুযায়ী তার সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। ২০০৫ সালে এই রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।



ইউটি/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস পর্যায়ে আছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Jun 26, 2025
img
ছুটি নিয়ে সুখবর পেলেন সরকারি চাকরিজীবীরা Jun 26, 2025
img
নির্বাচনসামগ্রী কেনা শেষ হবে সেপ্টেম্বরের মধ্যে, জানাল ইসি Jun 26, 2025
img
শেখ হাসিনার পতন ন্যায়ের কাছে অন্যায়ের পতন : কাদের সিদ্দিকী Jun 26, 2025
img
বৈশ্বিক শান্তি সূচকে ৩৩ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ Jun 26, 2025
img
গণঅভ্যুত্থান দিবসসমূহ পালনের লক্ষ্যে গঠিত ৩৬ সদস্যের জাতীয় কমিটি নিয়ে প্রজ্ঞাপন Jun 26, 2025
img
সাবেক মেয়র আইভী রিমান্ড শেষে কারাগারে Jun 26, 2025
img
‘ভারতীয় কম, পাকিস্তানি বেশি’—জোহরানকে নিয়ে মন্তব্য কঙ্গনার Jun 26, 2025
img
এনসিপি সব আসনে প্রার্থীই দিতে পারবে না : মান্না Jun 26, 2025
img
যুবলীগ নেতা পেলেন জুলাই যোদ্ধার স্বাস্থ্য কার্ড Jun 26, 2025
img
আল্লাহর রহমতে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে : কাদের সিদ্দিকী Jun 26, 2025
img
শাহরুখ খানের পাসপোর্ট দেখে চমকে যান অনেকেই! Jun 26, 2025
img
৩ নির্বাচনের অভিযোগ তদন্তে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে Jun 26, 2025
img
কিছু হওয়ার আগেই হার্দিকের সঙ্গে সম্পর্কটা ভেঙে যায় : এষা Jun 26, 2025
img
ঋণ নবায়নের আগে সীমাতিরিক্ত অর্থ শোধ বাধ্যতামূলক Jun 26, 2025
img
খুলনায় পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করে কেএমপি ঘেরাও Jun 26, 2025
img
অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ফল উৎসব ২০২৫ Jun 26, 2025
img
চট্টগ্রামে করোনা আইসোলেশন সেন্টার ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা কেন্দ্র চালু Jun 26, 2025
img
রংপুর মেডিকেলে ১ জনের করোনা শনাক্ত Jun 26, 2025
img
মিরপুরে চালু হলো অনার্স বোর্ড Jun 26, 2025