ক্যারিবীয় অঞ্চল এজবাস্টনে টেস্ট ম্যাচ খেলছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া। যেখানে রীতিমতো আগুন ঝরাচ্ছেন উভয় দলের পেসাররা। ফলে দু’দিনেই তারা ২৪ উইকেট হারিয়েছে। কিন্তু এজবাস্টনের পিচ নিয়ে আলোচনা ছাপিয়ে গেছে আম্পায়ারের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। প্যাডে লাগার আগে বল ব্যাট স্পর্শ করা সত্ত্বেও এলবিডব্লিউ এবং বল মাটি ছুঁয়ে গেলেও ক্যাচ আউটের সিদ্ধান্তের মতো ঘটনা ঘটেছে।
আম্পায়ারের এসব সিদ্ধান্ত গেছে স্বাগতিক ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে। যেসব আউটের দৃশ্য ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর থেকেই চলছে আম্পায়ারের সমালোচনা। এমনকি উইন্ডিজ কোচ ড্যারেন সামি তো বিতর্ক সৃষ্টি করা আম্পায়ারকে নিয়েই সন্দেহ করছেন। সন্দেহ ও সমালোচনার তিরে বিদ্ধ হচ্ছেন ম্যাচটিতে টিভি আম্পায়ারের দায়িত্বে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাড্রিয়ান হোল্ডস্টক।
বেশি বিতর্ক চলছে মূলত ক্যারিবীয় অধিনায়ক রোস্টন চেজকে দেওয়া আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে। স্বাগতিকরা তখন ৫০তম ওভারে ব্যাট করছিল, প্যাট কামিন্সের করা একটি বল চেজের পায়ে লাগলে এলবিডব্লিউ’র সিদ্ধান্ত দেন অনফিল্ড আম্পায়ার। তবে আগে ব্যাটে লাগার দ্বিধা থাকায় উইন্ডিজ অধিনায়ক এর বিরুদ্ধে রিভিউ নেন। এরপর আল্ট্রা এজে দেখা যায় বল আগে চেজের ব্যাট স্পর্শ করেছে এবং অডিও বেজেছে ওই সময়। তবে টিভি আম্পায়ার হোল্ডস্টকের ধারণা, বল–ব্যাটের মাঝে ফাঁকা ছিল, ফলে তিনি আউটের সিদ্ধান্তই বহাল রাখেন।
চেজের ইনিংস থামে ১০৮ বলে ৪৪ রানে। যা উইন্ডিজদের ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। এ নিয়ে ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি, প্রযুক্তির দেওয়া রায়ের বিরোধিতা করছি, আমার মতে সে বলটি ব্যাটে লাগিয়েছে, তবুও সিদ্ধান্ত তার বিপক্ষেই গেল। ম্যাচ পরিচালনকারী দলের প্রতি আমি দুঃখিত, আমার দৃষ্টিতে এটি নট-আউট ছিল। আউটের সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তি তৈরি করেছে, যেখানে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে বলের দিক পরিবর্তন হয়ে অন্যদিকে চলে গেছে। তার মানে ব্যাটে লেগেছে। দীর্ঘ সময় ম্যাচ দেখার অভিজ্ঞতা থাকলে এটি পরিষ্কার, নতুন কারও কাছে হয়তো পার্থক্যটা ধরা পড়বে না।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেছেন শাই হোপ। ব্যু ওয়েবস্টারের বলে হওয়া তার ক্যাচ আউট নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। হোপ উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন অ্যালেক্স ক্যারির হাতে। কিন্তু টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ক্যারির গ্লাভসে আটকানোর আগমুহূর্তেই মাটিতে স্পর্শ করছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এবারও টিভি আম্পায়ার রায় দেন অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে। অর্থাৎ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উইকেটই পড়েছে বিতর্কিতভাবে। যা নিয়ে খুবই ক্ষুব্ধ ক্যারিবীয় শিবির।
তাই সাবেক ক্যারিবীয় তারকা ও বর্তমান কোচ ড্যারেন সামি খোলাখুলিই বলে বসলেন, ‘এই নির্দিষ্ট আম্পায়ারকে (হোল্ডস্টক) ঘিরে বিষয়টা আমার মনে প্রথম আসে ইংল্যান্ড সফর থেকেই। এটি হতাশাজনক। আমি শুধু চাই সিদ্ধান্তে যেন ধারাবাহিকতা থাকে। আমরা শুধু প্রক্রিয়াটি বোঝার চেষ্টা করছি। আমরা শুধু চাই সিদ্ধান্তগুলো যেন ধারাবাহিক হয়। যখন কোনো কিছুতে সন্দেহ থাকে, তখন সেটি যেন সবার ক্ষেত্রেই একইভাবে প্রযোজ্য হয়। আপনি এমন অবস্থায় যেতে চান না, যেখানে নির্দিষ্ট কোনো আম্পায়ারকে নিয়ে সন্দেহ জন্মায়। তবে যখন একের পর এক সিদ্ধান্ত একই দলের বিপক্ষে যায়, তখন প্রশ্ন ওঠেই।’
টিভি আম্পায়ার হোল্ডস্টককে সরাসরি তিরের নিশানা বানিয়েছেন সামি। একইসঙ্গে তার দল অন্যায়ের শিকার হয়েছে বলেও দাবি করেন। বিতর্কিত এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে চুপ নেই অজি তারকা পেসার মিচেল স্টার্কও। তার মতে, ‘আগ্রহ জাগানোর মতো কিছু সিদ্ধান্ত ছিল। অবশ্য বেশি গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আমাদের বিপক্ষেও একটি গেছে (চেজের বিপক্ষে) যেখানে মনে হয়েছিল ব্যাট আর বলের মধ্যে ফাঁক ছিল। এর কারণে আমাদের ৪০ রানের মতো ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু পরে এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তে তার উইকেট মিলেছে।’
পিএ/টিকে