দ্বিকক্ষ সংসদ নিয়ে অধিকাংশ দলই নীতিগতভাবে একমত : আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, দ্বিকক্ষ সংসদ নিয়ে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। কিছু কিছু দল সামান্য কারণে আপত্তি জানিয়েছে। 

রোববার (২৯ জুন) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐক্যমত কমিশনের দ্বিতীয় অধিবেশনের বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।  

আলী রীয়াজ বলেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে, প্রাপ্ত ভোটের মাধ্যমে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট করার জন্য অধিকাংশ দল মতামত দিয়েছে। কিছু কিছু দল এই বিষয়ে সুস্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যেহেতু দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট গঠনে আগ্রহী আছে সেক্ষেত্রে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একমত হতে পারবো। যে সমস্ত দলগুলোর এই বিষয়ে আপত্তি আছে তারা জানিয়েছে আবারও এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় ঐক্যমত্য কমিশন থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল- জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন করার জন্য। প্রস্তাবের পর অনেক রাজনৈতিকদল এই প্রস্তাবটি সমর্থন করছে না। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি নামে নতুন কমিটির করার প্রস্তাব করেছিলাম। সেখানে এনসিসির যে সমস্ত দায়দায়িত্ব ছিলো, তা সীমিত করে কাঠামোগত দিক পরিবর্তন করা হয়। যেসব রাজনৈতিক দল কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছিল তারা এর বিস্তারিত জানতে চেয়েছিল আমরা তার পরিপ্রেক্ষিতে আজকে নতুন কাঠামোগত দিকের প্রস্তাব তুলে ধরেছি।  

আমরা বলেছি এই নিয়োগ কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে ৬ কমিশনের প্রধান ও সদস্য নিয়োগ ও এছাড়া আইনের দ্বারা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করবে। এগুলো হচ্ছে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্ম-কমিশন, মহা-হিসাব নিরক্ষক ও নিয়ন্ত্রণতক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং তথ্য কমিশন। জাতীয় ঐক্যবদ্ধ কমিশন মনে করে এই কমিশনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 

তিনি বলেন, কাঠামোগত দিক থেকে চিন্তা করে বলেছি- যখন সংসদ বহাল থাকবে তখন কমিটি কিভাবে কাজ করবে সেটা বলেছিলাম। তার মধ্য প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার যদি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়-উচ্চকক্ষের স্পিকার, বিরোধীদলের নেতা ও অন্য বিরোধী দলগুলোর নির্বাচিত একজন প্রতিনিধি।  

জাতীয় ঐক্যমত কমিশনে সহ-সভাপতি বলেন, এনসিসিতে আমাদের প্রস্তাব ছিলো- রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির অন্তর্ভুক্তি। সেটা যেহেতু অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। সেই জন্য জাতীয় ঐক্যমত কমিশন সেখান থেকে সরে এসে প্রস্তাব দিয়েছিলাম রাষ্ট্রপতি একজন প্রতিনিধি আমরা সুনির্দিষ্ট করেছি। আমরা বলেছি সংসদের সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতাসম্পূর্ণ্য কোনও ব্যাক্তি ও প্রজাতন্তের কর্মে লিপ্ত এমন ব্যাক্তি নয় মনোনয়নের পূর্বে ১০ বছর কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নয় বা কোনও সংগঠনের সদস্য নয় এমন ব্যাক্তি রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি পাঠাতে পারবেন। প্রধান বিচারপ্রতির প্রতিনিধির ক্ষেত্রে আমরা বলেছি তার মনোনিত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি কাঠামোটগত দিক থেকে এটাই আমরা প্রস্তাব করেছি। নিন্মকক্ষের স্পিকার এটাই সভাপতিত্ব করবে।  

এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরমধ্য একটি বিষয় আসছে- যখন সংসদ বহল থাকবে না তার মানে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে তখন কি হবে। আমাদের দিক থেকে প্রস্তাব ছিলো এটা অব্যাহত রাখার। এই কমিটি অন্য পরিবর্তন করে বিরোধী দলের যেসব সদস্য ছিলো তাদের পরিবর্তে উপদেষ্টা পরিষদের একজন করে প্রতিনিধি দেওয়া। আরো আলোচনা যেটা স্পষ্ট হয়েছে, অধিকাংশ রাজনৈতিকদল যারা এই কমিটিকে সমর্থন করে তারা মনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে এই কমিটি বহাল রাখার প্রয়োজন নেই। প্রশ্ন ওঠে ওই সময় নির্বাচন কমিশনে কিভাবে নিয়োগ হবে- আলোচনা করে অনেকে প্রস্তাব করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে সীমিতভাবে দেওয়া যায়। অন্য কমিশনে নিয়োগের ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়কের হাতে ক্ষমতা থাকবে না।

এই কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিকদলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বুঝা যায়, এ ধরনের একটি কাঠামোর ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সমর্থন আছে জানিয়ে তিনি বলেন, কাঠামোগত ক্ষেত্রে আরেকটু আলোচনা ও সুস্পষ্ট হওয়া দরকার। যে সমস্ত দল এখনো এই প্রস্তাবে সম্মত হয়নি আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে তাদেরকে অনুরোধ করেছি- পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ আছে কিনা। আশা করছি যে সমস্ত দল এখন পর্যন্ত একমত হতে পারছেন না তারা এগুলো পুর্নবিবেচনা করবে।  

দেশের স্বার্থে সংস্কার আলোচনার অগ্রগতি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, আমরা কেউ পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে চাই না৷ তাই দেশের স্বার্থে আপনারা বিষয়টি বিবেচনা করুন৷ যে অঙ্গীকার নিয়ে আমরা গত জুলাইয়ে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, তার কতটা অর্জিত হয়েছে? আমরা কি শুধু নিজের ও দলের স্বার্থ চাইব, নাকি দেশের স্বার্থও দেখব? আমরা আশাকরি বেশিরভাগ বিষয়ে রাজনৈতিকদলগুলোকে একমতে নিয়ে আসতে পারবো। কমিশন হতে আগামী ২ জুলাই পরবর্তী আলোচনার দিন ধার্য করা হয়েছে৷

ইউটি/এসএন


Share this news on:

সর্বশেষ

img
শেষ বিদায়ে শেফালীর অস্থি বুকে নিয়ে স্বামীর আবেগঘন কান্না Jun 30, 2025
img
শান্তিপূর্ণ আচরণ করলে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হতে পারে: ট্রাম্প Jun 30, 2025
img
দুর্নীতির মামলায় নির্ধারিত নেতানিয়াহুর সাক্ষ্যগ্রহণ বাতিল করল জেরুজালেম আদালত Jun 30, 2025
img
বিএনপি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে আজ Jun 30, 2025
img
রোমান্টিক সিক্যুয়েলে নজর কাড়ছেন অভয় ও নিতাংশী Jun 30, 2025
img
আজ ঢাকার বাতাসের মান ‘সহনীয়’ Jun 30, 2025
img
হজ শেষে দেশে ফিরেছেন ৬০ হাজার ৫১৩ জন হাজি Jun 30, 2025
img
সুদানে স্বর্ণের খনি ধসে প্রাণ গেল ১১ শ্রমিকের Jun 30, 2025
img
ব্র্যাড পিটের প্রেমে মুগ্ধ দীপিকা, দিলেন খোলা বার্তা! Jun 30, 2025
img
‘হাই’ না বলায় বুমরাহকে বিবাহিত ভেবেছিলেন সানজানা Jun 30, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ফলাফল অতিরঞ্জিত দাবি করেছেন ট্রাম্প: খামেনি Jun 30, 2025
img
‘জুলাই শহিদ স্মৃতি’ নামে শিক্ষাবৃত্তি চালু করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় Jun 30, 2025
img
মা হচ্ছেন সোনাক্ষী? এবার মুখ খুললেন অভিনেত্রী নিজেই Jun 30, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেল আরও ৭২ জনের Jun 30, 2025
img
বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষ শহর কামপালা, ঢাকার অবস্থান ১৮তম Jun 30, 2025
img
'সিতারে জমিন পার' এর পর দক্ষিণী নির্মাতাদের সঙ্গে আমিরের নতুন অধ্যায়! Jun 30, 2025
img
নতুন নাটক নিয়ে আবারও পর্দায় মেহজাবীনের বোন মালাইকা Jun 30, 2025
img
রাজধানীতে হালকা বৃষ্টির পূর্বাভাস, দিনভর আকাশ মেঘলা থাকার সম্ভাবনা Jun 30, 2025
img
দুপুরের মধ্যে দেশের ৮ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস Jun 30, 2025
img
পাকিস্তানের ‘সাহসী অবস্থানের’ প্রশংসা করেছেন ইরানের সেনাপ্রধান Jun 30, 2025