"১৬ জুলাই ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ছিল, আমরা এটাই চাই"

চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের আইকনিক শহীদ আবু সাঈদের জন্য ৩৬৫ দিনের মধ্যে সরকারকে ‘একটা দিন নির্ধারণ’ করতে আবারও আহ্বান জানিয়েছেন আবু সাঈদের বড়ভাই আবু হোসেন।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামের বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বড়ভাই আবু হোসেন এ দাবি জানান। এদিন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মাসব্যাপী কর্মসূচি ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ পীরগঞ্জ থেকে শুরু হয়।

আবু হোসেন বলেন, ১৬ জুলাই নিয়ে নাটক করা হয়েছে। তারা (সরকার) যদি আগেই ঘোষণা দিতেন, ১৬ জুলাই “জুলাই শহীদ দিবস”। তাহলে আমাদের আপত্তির জায়গাটা কম থাকত। কিন্তু ঘোষণা দিয়ে আবার পরিবর্তন করা একজন আইকনিক শহীদের প্রতি এক ধরনের অপমান। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা এবং ধিক্কার জানাই। যার অনুপ্রেরণা যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে, তার জন্য তারা একটা দিন রাখতে পারলেন না।

আবু সাঈদের ভাই আক্ষেপ করে বলেন, আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি, অনেক দিবস পালন করা হয়েছে, অনেক মানুষের নামে। যাদের জাতির জন্য এক পয়সারও উপকার ছিল না। তাদের নামে দিবস পালন করা হয়েছে। কিন্তু শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর দিনটা “আবু সাঈদ শহীদ দিবস” ঘোষণাতে সমস্যাটা কোথায় ছিল? আমরা যুগে যুগে তো দেখে আসছি বিভিন্ন বিপ্লবের শহীদের বিভিন্নভাবে স্মরণ করা হয়।

১৬ জুলাই “শহীদ আবু সাঈদ দিবস” রাখার দাবি জানিয়ে আবু হোসেন বলেন, আমাদের দাবি ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস ছিল, আমরা এটা শহীদ আবু সাঈদ দিবসই চাই। জুলাই শহীদ দিবস যেটা আছে, জুলাইয়ের যে কোনো দিন সেটা সরকার এটা পালন করতে পারে। ১৬ জুলাই যার আত্মত্যাগ এত বড় বিপ্লব সংঘটিত হলো। তাকে এভাবে অবহেলা করা আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে মেনে নিতে পারছি না।

আবু হোসেন আরও বলেন, ১৬ জুলাই যে আবু সাঈদের শহীদের মধ্যে দিয়ে কোটা সংস্কার একটা গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। লোকজন আর ঘরে বসে থাকেনি, রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, জীবনের মায়া ত্যাগ করে। এটার যে অনুপ্রেরণা সেটা হচ্ছে আবু সাঈদ। ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে সেটা শহীদ জুলাই দিবস করা হলো। তারা (সরকার) জুলাই শহীদ দিবস পালন করার আরও দিন পেতেন। এই রকম একজন বৈপ্লবিক শহীদ, যার আত্মত্যাগ যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। তার জন্য কি ৩৬৫ দিন থেকে ১৬ জুলাই তার স্মরণে নির্ধারণ করা যেত না। তাকে স্মরণ করলে কি অন্য শহীদদের অপমান করা হতো। তার আত্মত্যাগ তো তাদের অনুপ্রাণিত করছে রাজপথে নামার জন্য।

শহীদ পরিবারের এই সদস্য বলেন, বৈষম্যের জন্য সবাই লড়াই করল, আদৌ রাষ্ট্রে কতটুকু বৈষম্য দূর হলো আমরা জানি না। আমাদের কাছে বোধগম্য নয় এখনো। বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্য রয়ে গেছে। সরকারে উপদেষ্টা পরিষদে শুধু নির্দিষ্ট একটা অঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নেওয়া হয়েছে। রংপুর অঞ্চল থেকে আবু সাঈদ শহীদ হয়ে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। রংপুর বিভাগ থেকে একজনও উপদেষ্টা নেই। এখানে কি কোনো যোগ্য লোক ছিলেন না। শুধু কি দক্ষিণ অঞ্চলের লোকযোগ্য, উত্তরাঞ্চলে যোগ্য লোক নেই? আমরা চাই, এই দেশ বৈষম্যমুক্ত হিসেবেগড়ে উঠুক।

আবু সাঈদের ভাই আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবে যারা আন্দোলনকারী ছিলেন, যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারাই উপদেষ্টা হলেন। কিন্তু শহীদ পরিবার থেকে কোনো প্রতিনিধি নেওয়া হলো না। শহীদ পরিবার সাড়ে ৮০০। তাদের মধ্যে কি কোনো যোগ্য লোক ছিল না। মনে হচ্ছে, এখনো বৈষম্য পুরোপুরি দূর হচ্ছে না।

এর আগে, গত ২৯ জুন আবু হোসেন তার ফেসবুকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ প্রসঙ্গ তুলে ধরে একটি পোস্ট দেন। সেখানেও তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে লিখেছেন, ২৭ জুন সরকার কর্তৃক ‘১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে জানতে পারলাম শহীদ আবু সাঈদ দিবস পরিবর্তন করে ১৬ জুলাইকে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ ঘোষণা করেছে। জুলাই বিপ্লবের আইকনিক শহীদ আবু সাঈদ। প্রতিটা মানুষের জীবন মূল্যবান। কোনো শহীদকে ছোট করছি না। তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি। আকাশে হাজার হাজার নক্ষত্র থাকে তার মধ্যে কিন্তু চাঁদ একটা। চাঁদ কিন্তু অন্য কোনো নক্ষত্র হতে পারবে না। ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণা করলে নাকি অন্য শহীদদেরকে অপমান করা হবে।

আবু হোসেন আরও লিখেছেন, আমার সঙ্গে এ পর্যন্ত যত শহীদ পরিবারের দেখা হয়েছে, যত আহতের সঙ্গে দেখা হয়েছে, যত বিপ্লবীর সঙ্গে দেখা হয়েছে তার শতকরা আশি শতাংশ আমাকে বলেছেন, আপনার ভাইয়ের কারণে আমার ছেলে-মেয়েদেরকে আমাদের ভাই-বোনদের আমরা নিজেকে আর ঘরে রাখতে পারিনি। আমরা রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণঅভুত্থানে রূপ নেয়। ঢাকা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা এসে বলেছিলেন, কিভাবে বুলেটের সামনে বুক পেতে লড়াই করতে হয় তা আবু সাঈদ আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছে। আর আজকে কত চক্রান্ত। আপনারা দেবেন না তাহলে আগে ঘোষণা দিয়ে আমাদেরকে আশা দেখালেন কেন?

সেই পোস্টে তিনি আরও বলেন, ৩৬৫ দিনের মধ্যে এরকম বিপ্লবের একজন আইকনিক ব্যক্তির জন্য সরকার কি একটা দিন নির্ধারণ করতে পারেন না। এর আগে কত ফাও দিবস পালন করতে দেখলাম। অন্যায়ের সঙ্গে লড়াই করার জন্য যারা মানুষকে পথ দেখায় তার জন্য একটা দিন নির্ধারণ করা যায় না। ১৯৬৯ সালে ডা. শামসুজজোহা স্যারের অনুপ্রেরণা নিয়ে আবু সাঈদ রাজপথে এগিয়ে এসেছিল। এরকম আইকনিক শহীদদেরকে ধরে রাখার জন্য সরকার কি কোনো পদক্ষেপ নেবে না। মানুষ কিভাবে অনুপ্রাণিত হবে এ সমস্ত ব্যক্তিদের স্মরণীয় রাখার জন্য যদি একটা দিন নির্ধারণ করতে না পারে। জুলাই শহীদ দিবস তো আপনারা অন্যদিনও পালন করতে পারতেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়ে গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক। তিনি এই আন্দোলনের প্রথম শহীদ। আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর সারা দেশে আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কোটা সংস্কারের দাবি থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এখানে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই: পরিবেশ উপদেষ্টা Oct 08, 2025
img
শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ সম্পর্কে আর কথা বলতে দেবে না ভারত : মোস্তফা ফিরোজ Oct 08, 2025
img
আমার একটা ছোট অস্ত্রোপচার হবে : দিতিপ্রিয়া রায় Oct 08, 2025
img
সেফ এক্সিট খুঁজতে উপদেষ্টাদের খুব কষ্ট করতে হবে না : রুমিন ফারহানা Oct 08, 2025
img
ইসির কাছে গঠনতন্ত্র ও ব্যাংক হিসাব নম্বর জমা দিল জামায়াত Oct 08, 2025
img
গাজা শান্তি আলোচনায় মিসরে যাচ্ছেন ট্রাম্পের জামাতা Oct 08, 2025
img
দুই বছর পর ওয়ানডে একাদশে ফিরলেন সোহান, অভিষেক সাইফের Oct 08, 2025
img
ভবিষ্যতে কর অব্যাহতির ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকবে: এনবিআর চেয়ারম্যান Oct 08, 2025
img
নতুন ২০ জিপ পেল ডিএমপি Oct 08, 2025
img
নবী শব্দের অর্থ সংবাদবাহক তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) সাংবাদিক ছিলেন: মুফতি আমির হামজা Oct 08, 2025
img

সন্দেহজনক লেনদেন ৯৬৯ কোটি

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের এমডি ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের দুটি মামলা Oct 08, 2025
img
আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবাসী: তৈয়্যব Oct 08, 2025
img
ফুটবল জগতের প্রথম বিলিয়নিয়ার ফুটবলার রোনালদো Oct 08, 2025
img

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বিদেশি মিশন থেকে ছবি সরানো নিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপতি Oct 08, 2025
img
‘আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হচ্ছে’ শুনেই সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিলেন উপদেষ্টা Oct 08, 2025
img
দাম বাড়ল জেট ফুয়েলের Oct 08, 2025
img
নৌপরিবহন উপদেষ্টার সঙ্গে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ Oct 08, 2025
img
মাদ্রিদে ভবনধসে প্রাণহানি, ৪ জন নিহত Oct 08, 2025
img
ভিসা জটিলতা নিয়ে ঘর গোছানোর কথা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Oct 08, 2025
img
শেখ হাসিনার মামলায় শেষ হলো সাক্ষ্য-জেরা, যুক্তিতর্ক শুরু রোববার Oct 08, 2025