অনার্স পরীক্ষায় নকল করলে চার বছর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষার শৃঙ্খলা রক্ষায় কড়া নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নকল বা কোনো ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত পরীক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে সতর্ক করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্র ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও।

শনিবার (৫ জুলাই) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. এনামুল করিমের সই করা এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বে অবহেলা, ইনভিজিলেটরদের অসতর্কতা, প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ব্যবস্থাপনায় অনিয়মসহ বেশকিছু গুরুতর সমস্যা পরিলক্ষিত হয়েছে। এ কারণে পরীক্ষার স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে একাধিক কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

পরীক্ষার সময় দূষণীয় কাগজপত্র ব্যবহার, মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে নকল করা, প্রশ্ন বা উত্তরপত্র বিনিময়, রোল নম্বর পাল্টানো কিংবা পরীক্ষা কক্ষের ভেতরে বা বাইরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার ফল বাতিলের পাশাপাশি সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ‘পরীক্ষা শৃঙ্খলাবিধি’ অনুযায়ী, অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী পাঁচটি স্তরে শাস্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে সাধারণ নকল বা অননুমোদিত কাগজপত্র ব্যবহার করলে সেই বছরের পরীক্ষা বাতিলের পাশাপাশি পরবর্তী এক বছর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। অপরদিকে জাল পরিচয় ব্যবহার, উত্তরপত্র পাচার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে অসদাচরণ বা শারীরিক আক্রমণের মতো গুরুতর অপরাধে পরবর্তী চার বছর পর্যন্ত পরীক্ষার সুযোগ হারাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত উত্তরপত্র নিয়ে তা গোপনে বাইরে নিয়ে গিয়ে পরে পরীক্ষায় জমা দিচ্ছে। এ ছাড়া পরীক্ষার হল থেকে মূল উত্তরপত্র লুকিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এসব অনিয়ম ঠেকাতে ইনভিজিলেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে– সকল পরীক্ষার্থী হল ত্যাগ করার আগে উত্তরপত্রের সংখ্যা মিলিয়ে দেখতে হবে।

যদি কোনো পরীক্ষার্থী উত্তরপত্র জমা না দিয়ে বের হয়ে যায়, তাহলে তার কক্ষের উত্তরপত্র এবং ওএমআর ফরম আলাদা করে সংরক্ষণ করতে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাতে হবে।

একইসঙ্গে ভুয়া পরীক্ষার্থী রোধে কেন্দ্রগুলোকে প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড যাচাই করে পরীক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কেউ মোবাইল ফোন বা অন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে হলে প্রবেশ করলে সেটি শান্তিপূর্ণ পরীক্ষার জন্য হুমকি বলে গণ্য হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ইনভিজিলেটরদের (কক্ষ পরিদর্শক) অনেকেই যথাযথভাবে প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড যাচাই না করে উত্তরপত্র ও হাজিরা ফরমে স্বাক্ষর করছেন। এতে রোল, রেজিস্ট্রেশন ও কোর্স কোডে গড়মিল দেখা দিচ্ছে, যা ফলাফলের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করছে। এই গাফিলতির দায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ওপর বর্তাবে এবং প্রয়োজন হলে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আবার বিভিন্ন কেন্দ্রে পরীক্ষার দিন ভুল কোর্সের প্রশ্নপত্র উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রেই প্যাকেট খোলার আগে প্রশ্নপত্র যাচাই না করে তা বিতরণ করা হয়, যা পরীক্ষার স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে। নির্দেশনায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, প্রতিটি প্রশ্নপত্র প্যাকেট খোলার আগে কোর্স কোড মিলিয়ে নিতে হবে।

একইভাবে উত্তরপত্র বান্ডেল তৈরির সময়ও ভুলভ্রান্তি হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বান্ডেলের লেভেলে যে কোর্স কোড দেওয়া থাকে, তার সঙ্গে ভেতরের উত্তরপত্রের বিষয় না মিললে তা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে এবং ফলাফল প্রকাশে সমস্যা সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষা কক্ষের শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অপরাধের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে– হলে পারস্পরিক কথাবার্তা বলা, নিষিদ্ধ কাগজপত্র ব্যবহার, প্রশ্ন থেকে দেখে লেখা, উত্তরপত্রে অযৌক্তিক কিছু লেখা বা টাকা রাখা, রোল নম্বর পাল্টানো, ভুয়া পরিচয় ব্যবহার, উত্তরপত্র পাচার করা, ইনভিজিলেটরকে হুমকি দেওয়া, কক্ষ ভাঙচুর ও পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিবেশ নষ্ট করার মতো অপরাধ। এসব অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তির পরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে।

শাস্তির বিধান অনুযায়ী, পরীক্ষা কক্ষে কথা বলা বা নিষিদ্ধ কাগজপত্র বহনের মতো অপেক্ষাকৃত হালকা অপরাধে চলতি বছরের ফল বাতিল হবে। তবে যদি কেউ ভুয়া পরিচয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়, উত্তরপত্র পাচার করে বা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করে, তাহলে ওই পরীক্ষার্থীকে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত পরীক্ষা দেওয়া থেকে বিরত রাখা হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শৃঙ্খলা কমিটি এবং অপরাধ গুরুতর হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

এফপি/ টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মাস্কের শতকোটি ডলার বিনিয়োগে লাফিয়ে বাড়ছে টেসলারের দাম Sep 17, 2025
img
চাকসু নির্বাচনে ২৭ হাজার ভোটারের বিপরীতে প্রার্থী ১০৮৮ Sep 17, 2025
img
সালমান-আমিরের উচ্চতা প্রসঙ্গে হৃতিকের কটাক্ষ Sep 17, 2025
img
এনসিপির জন্য প্রতিদিনই হতাশার খবর আসছে : মোস্তফা ফিরোজ Sep 17, 2025
img
জয়ে নির্ণায়ক ভূমিকা রাখা বোলারের প্রশংসায় তামিম Sep 17, 2025
img
বন্ধ মিটারেও বিদ্যুৎ বিল ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা! Sep 17, 2025
img
খুলনায় ভোক্তা অধিকারের অভিযানে ১৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা Sep 17, 2025
img
এই প্রথমবোরের মতো ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর অনুমতি দিলেন ট্রাম্প Sep 17, 2025
img
একীভূত হচ্ছে পাঁচটি ব্যাংক, অনুমোদন চূড়ান্ত Sep 17, 2025
img
সহকারী শিক্ষকদের কার্যক্রমে মাউশির নতুন নির্দেশনা Sep 17, 2025
img
জামালপুরের ইউএনও’র ছবি ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক আইডি, থানায় জিডি Sep 17, 2025
img
অস্কারের দৌড়ে ইরানের নতুন চলচ্চিত্র Sep 17, 2025
img
ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস, বাড়বে তাপমাত্রা Sep 17, 2025
img

শিক্ষা উপদেষ্টা

ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ Sep 17, 2025
img
বাংলাদেশ-কুয়েত বাণিজ্যিক সহযোগিতা বাড়াতে বৈঠক অনুষ্ঠিত Sep 17, 2025
img
গাজায় ভয়াবহ হামলা, আশ্রয়ের খোঁজে শহর ছাড়ছে হাজারো ফিলিস্তিনি Sep 17, 2025
img
বায়ুদূষণের শীর্ষে জাকার্তা, ঢাকার অবস্থান ২৫তম Sep 17, 2025
পাকিস্তান ছাড়িয়ে বাংলাদেশেও জনপ্রিয় - কে এই হানিয়া আমির? Sep 17, 2025
img
এআই ট্রেন্ডে গা ভাসালেন আলিয়া Sep 17, 2025
img
মেসির গোলে স্বস্তির জয় ইন্টার মায়ামির Sep 17, 2025