সারা দেশে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০০৩ কি.মি মহাসড়ক

বন্যায় সারা দেশে ১০০৩ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারমধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ১৯৫ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ১৬৭ কিলোমিটার এবং জেলা মহাসড়ক রয়েছে ৬৪১ কিলোমিটার। সোমবার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এক জরিপ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংস্থাটির জরিপে বলা হয়, এবারের বন্যায় ৩০ জেলায় ২০৫ কিলোমিটার মহাসড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আর এসব মহাসড়ক মেরামতে খরচ ধরা হয়েছে ৪৮০ কোটি টাকা।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জরিপ বলছে, ৩০ জেলার মধ্যে বন্যায় জাতীয় মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রংপুরে। সেখানে ৪৪ কিলোমিটার মহাসড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। এরপরে সিরাজগঞ্জে ৩৩.৭৪ কিলোমিটার মহাসড়ক নষ্ট হয়েছে।

আর আঞ্চলিক মহাসড়কের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে পাবনা। সেখানে প্রায় ৬১ কিলোমিটার রাস্তা নষ্ট হয়েছে। এরপরের অবস্থানে রয়েছে নওগাঁ। এই অঞ্চলে ২০.১৭ কিলোমিটার পথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া জেলা মহাসড়কগুলোর মধ্যে সিরাজগঞ্জ ১৫২ কিলোমিটার এবং নওগাঁয় প্রায় ৫৯ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই জরিপের আগে বন্যায়  সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছিল গাইবান্ধা। তবে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সেখানকার মহাসড়ক সংস্কার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, '১০৩ কিলোমিটার পথ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা সেই সড়ক মেরামতের কাজ করে শেষ করেছি।'

তবে সড়ক ও জনপথের সর্বশেষ জরিপে বলা হয়েছে, গাইবান্ধায় ৩২ কিলোমিটার রাস্তা এখনো ক্ষতিগ্রস্ত। আর এসব রাস্তা মেরামতে সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ১৩৫ কোটি টাকা।

সিরাজগঞ্জের সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে মহাসড়ক মেরামতের কাজ আমরা প্রায় শেষ করে এনেছি। জোড়াতালি দিয়ে হলেও সড়কপথটি আর আগের মত ভাঙা নেই।’

সওজের নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হামিদুল হক বলেন, ‘আমাদের জেলার মহাসড়কে কোনো সমস্যা নেই। তবে বগুড়া জেলায় অনেক সমস্যা। আর আপনি নওঁগা জেলার মাতাজীহাট থেকে বালুডাঙ্গা পর্যন্ত যে পথের ভাঙা অংশ নিয়ে কথা বলছেন, তা তো আমাদের নয়, এই সড়কটি এলজিইডির।’

লালমনিহাটের মহাসড়কের অবস্থা সম্পর্কে জেলার সড়ক ও জনপথের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. বখতিয়ার আলম বলেন, ‘লালমনিহাট উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার মতো এত নিচু নয়। আমাদের সড়ক পথটি একটু উঁচু। তবে পূর্বালী নামের এক জায়গায় ১২০ ফুট রাস্তাটিতে বন্যার পানি উঠে গিয়েছিল। তা আমরা এই সময়েই ঠিক করে ফেলেছি।’

কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, ‘আমাদের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কের পরিমাণ প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। তবে এই পথগুলো আমরা ঠিক করে ফেলেছি। তবে স্থায়ীভাবে ঠিক করতে হলে আরো টাকা দরকার।’

সওজ বিভাগের জামালপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, 'জামালপুরে ৫০ কিলোমিটার পথের চারটি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। এখন বন্যার পানি নেই।'

সড়ক ও জনপথের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সবুর জানান, বন্যার পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব রাস্তা মেরামতের জন্য সব জেলার সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর প্রায় সব রাস্তার কাজও সম্পন্ন হচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ (রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেল) বলেন, ‘আমরা সোমবার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আমাদের দীর্ঘ মেয়াদী সম্ভাব্য মেরামত ব্যয় প্রস্তাব দেব। আর অতিদ্রুত কাজ শেষ করব বলে আশা রাখি।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সওজের বড় প্রকল্পে মনোযোগ বেশি। তাই মেরামতে তাদের মনোযোগ একটু কম। আর মেরামত কাজটাও হয় অর্থবছরের শেষ দিকে, বর্ষা মৌসুমে। বর্ষা মৌসুমে মেরামত টিকবে না- এটাই স্বাভাবিক।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, ‘সড়কে সারা বছরই মেরামত দেখা যায়। কিন্তু এগুলো টিকছে না কেন, সেটাই বড় প্রশ্ন। হয় মেরামত মানসম্মত হয় না, নতুবা এতে দুর্নীতি আছে। ফলে ঈদ এলেই মানুষের মনে ভয় জন্ম নেয়। এটা দূর হওয়া দরকার।’

 

টাইমস/টিআর/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে, হাসিনার ভয় এখনও সবার ভেতরে : নিপুণ Dec 20, 2025
img
বাংলাদেশের গানে বিশেষ আকর্ষণ ৮ জাপানি মডেল Dec 20, 2025
img
হাদির জানাজা পড়াবেন বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক Dec 20, 2025
img
সুদানে নিহত ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ দেশে পৌঁছেছে Dec 20, 2025
img
শাহরুখ খানের মান্নাতে ঢোকার আগে কেমন পোশাক পরতে হবে জানালেন করণ জোহর Dec 20, 2025
img
ময়মনসিংহে যুবককে হত্যার ঘটনায় আটক ৭ Dec 20, 2025
img
আফসানা মিমির অভিনয় থেকে নির্মাতা হওয়ার যাত্রা Dec 20, 2025
img
বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, পঞ্চম অবস্থানে ঢাকা Dec 20, 2025
img
একের পর এক মিছিল মানিক মিয়া এভিনিউয়ে Dec 20, 2025
img
ঈদে আসছে নাবিলার ‘বনলতা সেন’ Dec 20, 2025
img
হাদির জানাজা ঘিরে ১ হাজার বডি ওর্ন ক্যামেরাসহ পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা Dec 20, 2025
img
গার্দিওলার সম্ভাব্য উত্তরসূরির খোঁজে ম্যানসিটি Dec 20, 2025
img
মাধুরীর 'তেজাব' সিনামা মুক্তির সময় ঘটে যাওয়া একটি ভীতিকর ঘটনা! Dec 20, 2025
img
ওসমান হাদি হত্যার মাস্টারমাইন্ড ‘শাহীন চেয়ারম্যান’ Dec 20, 2025
img
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়ানোর তাগিদ গণশিক্ষা উপদেষ্টার Dec 20, 2025
img
বিদেশে গানের শুটিংয়ের কারণ জানালেন ঐন্দ্রিলা Dec 20, 2025
সেমিফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের Dec 20, 2025
আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গির জেরে কেড়ে নেওয়া হলো ফিনিশ সুন্দরীর মুকুট Dec 20, 2025
img

মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য

পুরো ইউক্রেন ও ইউরোপের কিছু অঞ্চল দখল করার পরিকল্পনা পুতিনের Dec 20, 2025
img
হোয়াইট হাউসের ঐতিহ্যবাহী 'ক্রিসমাস ডিনারে' অভিনেত্রী মল্লিকা Dec 20, 2025