কেমন জীবনযাপন করছেন মিয়ানমারের মুসলিমরা

মিয়ানমার মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের দেশ। তবে সেখানে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টানদের সংখ্যাও কম নয়। দেশটিতে প্রায়ই সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় সহিংসতার ঘটনা ঘটে থাকে। দেশটি রাখাইন প্রদেশে মুসলিম রোহিঙ্গাদের খবর কম বেশি সবাই জানে। দেশটির অন্যান্য অঞ্চলে বা শহরে মুসলিমরা কেমন আছেন?

বৃহস্পতিবার এ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে বিবিসি অনলাইন। প্রতিবেদনটিতে ইয়াঙ্গুন শহরের তিনজন মুসলিম বিবিসির সংবাদদাতা নিক বিকের কাছে বর্ণনা করেছেন মুসলিম হওয়াতে তাদের কি পরিমাণ ভয়াবহ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

ইয়াঙ্গুনের ফটোসাংবাদিক অং নাইং সোয়ে

২০১৬ সালের দিকে হঠাৎ করেই আমাকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। ফেসবুকে আমার ছবি ছড়িয়ে পড়ে। একদল উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ এ কাজ করে।

ঘটনা হচ্ছে- সন্ত্রাসীদের কোনো একটি ভিডিওচিত্রে একজনের চেহারার সঙ্গে আমার মিল ছিল। সেই ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট নিয়ে আমার মুখের ছবির সঙ্গে তা পাশাপাশি রেখে সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হলো। তারপর থেকে অনলাইনে লক্ষ্যবস্তু হয়ে গেলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ কিছু না বুঝেই, না জেনেই আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা উগরে দিতে শুরু করলেন।

যখন ভিন্ন একটি ঘটনায় পুলিশ তাকে আটক করে, তখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও খারাপ হয়ে উঠল। টানা ১১ দিন ধরে আমাকে জেরা করা হয়। তারপর পুলিশ ২০১৬ সালে ফেসবুকে পোস্ট করা সন্ত্রাসী ভিডিও দেখিয়ে বলে আমিই নাকি সেই ব্যক্তি। এই ঘৃণার কারণ আমি ঠিক বুঝতে পারি না। সরকারি কর্মকর্তাদের মনে মুসলিমদের সম্পর্কে চরম এক ঘৃণা জমে রয়েছে। তারা মুসলিমদের পছন্দ করে না।

মিয়ানমারের মুসলিম অধিকারকর্মী টিন অং মিন্ট

প্রতিদিন আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুসলিমদের নিয়ে মনগড়া সব খবর দেখতে পাবেন। ফটোশপে বানিয়ে ছবি পোস্ট করা দেখতে পাবেন। কিন্তু এগুলোর বিরুদ্ধে কিছু করার কোনো উদ্যোগ কারও মধ্যেই নেই।

এ ধরনের কোনো একটি বিষয় পোস্ট করা হলেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমি তখন বুঝতে পারি, এ নিয়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

প্রধানত সে কারণে টিন অং মিন্ট ফেসবুকে একটি পর্যবেক্ষণ গ্রুপে নাম লিখিয়েছেন। এ গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। সোশ্যাল মিডিয়াতে মুসলিম বিদ্বেষী বিভিন্ন পোস্টের দিকে তারা নজরদারি করেন।

আমরা নিজেদের এ দেশের নাগরিক মনে করলেও তারা আমাদের ভিন্ন কিছু ভাবে। এ রকম বৈষম্য চলতে থাকলে মুসলমানরা আরও বেশি করে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

বিবিসির নিক বিক বলছেন, সত্যি কথা বলতে কী- রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যে নির্যাতন, যে অপরাধ হয়েছে, তা নিয়ে মিয়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের বিন্দুমাত্র কোনো মাথাব্যথা নেই। আর তাতেই মুসলমান এবং অন্য সংখ্যালঘুরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

মিয়ানমারের মানবাধিকারকর্মী খিন সান্দার

আপনি যদি চাকরির জন্য আবেদন করেন, আর আপনি যদি মুসলিম হন, তাহলে ওই চাকরি হয়তো আপনি পাবেন না। পরিচয়পত্র বা নাগরিক কার্ড নবায়ন করা এখন মুসলমানদের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি নিজেও এ নিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছি।

পরিচয়পত্র নবায়ন করতে গিয়ে আমার দুই বছর লেগেছে। অথচ বৌদ্ধরা দুই সপ্তাহ বা সর্বোচ্চ ২৮ দিনের ভেতরে তা পেয়ে যায়।

যখন নবায়ন করার ফরম পূরণ করে জমা দেই। তখন একজন নারী অভিবাসী কর্মকর্তা আমাকে বললেন, তুমি কালার(মুসলিম)। এটা তুমি করতে পারবে না।

কালার শব্দটি খুবই বৈষম্যমূলক শব্দ। যা দিয়ে মুসলমানদের বুঝানো হয়।

ওই নারীর কর্মকর্তার কথা শুনে আমি অবাক হই এবং খুব খেপে যাই। এই ধরনের কথা আমি একদমই আশা করিনি। রাখাইনে রোহিঙ্গা সংকটের পর থেকে মুসলিমদের ওপর বৈষম্য তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রত্যেকেরই নিজস্ব ধর্মীয় পরিচয় থাকে।

আমি বৌদ্ধ হতে পারি, খ্রিষ্টান হতে পারি, মুসলিম হতে পারি। রাজনৈতিক নেতাদের নৈতিক মূল্যবোধ প্রদর্শন করা উচিত। তাহলেই জনগণ নানা ধর্মের সম্প্রতির বিষয়টি মেনে নেবে। ধর্মের বৈচিত্র্যই সুন্দর।

 

টাইমস/এসআই

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সিরিয়ার ওপর থেকে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প Jul 01, 2025
img
হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হলো ডকুমেন্ট স্ক্যানের নতুন ফিচার! Jul 01, 2025
img
ছাত্রদল নেতার হাতে প্রাণ গেল কৃষকের Jul 01, 2025
img
আমিরের দিকেও হাত বাড়িয়েছিল মাফিয়া চক্র! Jul 01, 2025
img
১৯ বছর পর আবারও অ্যাওয়ার্ড নাইট চালু করার ঘোষণা দিল বিসিবি Jul 01, 2025
img
ইন্টার মিলানকে হারিয়ে শেষ আটে ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্স Jul 01, 2025
img
জামায়াত ক্ষমতায় এলে হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে : রফিকুল ইসলাম Jul 01, 2025
img
গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার ৯ বছর আজ Jul 01, 2025
img
বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষ শহর বাগদাদ, ঢাকার অবস্থান ১৪তম Jul 01, 2025
img
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস Jul 01, 2025
img
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় প্রাণ গেল ৯৫ জনের Jul 01, 2025
img
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩১.৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার Jul 01, 2025
img
এনবিআর আন্দোলন: উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে প্রজ্ঞাপনের মিল নেই Jul 01, 2025
img
দেশের ৮ জেলায় ৬০ কি.মি. বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস Jul 01, 2025
img
মুন্সীগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ১ জনের Jul 01, 2025
img
বাংলাদেশের মানুষ এখনো ভোটের অধিকার ফেরত পায়নি : অমিত Jul 01, 2025
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে স্মৃতি চারণ করলেন রুহুল কবির রিজভী Jul 01, 2025
জুলাই কর্মসূচিতে থাকবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বার্তা, জানালেন রিজভী Jul 01, 2025
১০ মিনিটে সারা বিশ্বের সর্বশেষ খবর Jul 01, 2025
শান্তর ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে যা বললেন বিসিবি সভাপতি Jul 01, 2025