একই ব্যক্তি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় বাংলাদেশে কখনও বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয় না: আদিব

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফুল ইসলাম আদিব বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে কখনও বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয় না। কারণ যখনই যে দল ক্ষমতায় আসে সেই দলের প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান —এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদই এক ব্যক্তির হাতে থাকে। এতে করে দল ও রাষ্ট্রের মধ্যে নেতৃত্বের ভারসাম্য নষ্ট হয়।

রোববার (২০ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৫তম দিনের আলোচনা শেষে কথা বলেন তিনি।

আদিব বলেন, একই ব্যক্তি রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগেরও প্রধান, দলের প্রধান ও আইন বিভাগে প্রভাবশালী হলে তিনি নিজের দলের আদর্শ অনুযায়ী সংবিধানের মূলনীতিতেও হস্তক্ষেপ করতে পারেন। ফলে বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগ থাকে না। যার ফলে একটা দলে কোনো নেতা সেই দলের প্রধান হবে সেই চিন্তাও করতে পারে না। উদহারণের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন ভাই বলেছেন, যুক্তরাজ্যে একই ব্যক্তি থাকতে পারেন, কিন্তু আপনারা কি দেখেছেন যুক্তরাজ্যে বিকল্প কে আসছেন সেই প্রশ্ন উঠেছে?

তিনি বলেন, আমাদের দেশে পূর্বে ছিল শেখ হাসিনার বিকল্প নাই, খালেদা জিয়ার বিকল্প নাই, কিংবা এখন বলা হবে তারেক রহমানের বিকল্প নাই। রাষ্ট্রকে চালানোর জন্য তিনি একমাত্র যোগ্য। এখন বিকল্প তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটি কি? প্রক্রিয়াটা যেন বন্ধ না হয়, সে জন্য আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে দলের প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা আলাদা হবে।

এনসিপির এই নেতা বলেন, অর্থাৎ দলের প্রধান যখন প্রধানমন্ত্রী হবেন তখন দলের প্রধান আরেকজনকে দেবেন। কিন্তু এখানে যদি দলের সহকর্মীর প্রতি এটুকু বিশ্বাস না থাকে, যে দলের প্রধান হলে তার বিকল্প তৈরি হয়ে যাবে, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা শেষ হওয়ার পরে দলের প্রধানের পদ নিতে পারবে না। তাহলে যেটা হয় বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয় না। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের যেটা হয় আমাদের বাংলাদেশে রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আছে তারা কখনও প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা এমপি হওয়ারও স্বপ্ন দেখতে পারে না, স্বপ্নটা সর্বোচ্চ মনোনয়ন পাওয়ার মধ্যে থাকে। কারণ নমিনেশন যে দিয়ে থাকেন তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকেন, তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে পারেন না, কোনো প্রস্তাবনা দিতে পারেন না।

আদিব বলেন, আগামীর বাংলাদেশে একাধিক বিকল্প যারা নেতৃত্ব দিতে পারবেন, যোগ্য হতে পারবেন, তারা যদি স্বপ্নই দেখতে না পারেন, যে একটা দলের প্রধান হবেন। এটা বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক। আপনি আওয়ামী লীগ বলেন, বিএনপি বলেন, জামায়াত বলেন, সিপিবি বলেন, অধিকাংশ দলের প্রধান ২০ থেকে ৩০ বছর দলীয় প্রধান থাকেন। সিপিবির যে প্রধান ছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম তিনি ৯০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রধান ছিলেন। ঠিক তাদের বিপরীত আদর্শের জামায়াতে ইসলাম তাদের মতিউরহমান নিজামী টানা ১৭ বছর দলের প্রদান ছিলেন। আওয়ামী লীগ বিএনপি তো ১৯৮১ সাল থেকে টানা ৪৫ বছর ধরে একই ব্যক্তি আছে। ফলে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয় না। আর জাতি যখন সংকটে পরে তখন বলে বিকল্প কে, বিকল্পকে প্রশ্নটা আসে।তাই আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলো আগামীর বাংলাদেশের জন্য আমাদের প্রস্তাব মেনে নেবে।

আদিব বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হওয়ার জন্য একটি বাছাই কমিটি হবে, পাঁচ সদস্যের হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় প্রধান, স্পিকার ডেপুটি স্পিকার এবং সংসদে যে দল তৃতীয় অবস্থানে থাকবে সেখান থেকে একজন। মোট পাঁচজনের একটি বাছাই কমিটি হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবনার ক্ষেত্রে সরকার দল বিরোধী দল এবং তৃতীয় দল ৩ থেকে ৫ জন করে নাম প্রস্তাব করবেন। সংখ্যা কমিয়ে সবশেষ যেটা আসছে সরকার দল তিনটি, বিরোধী দল তিনটি এবং তৃতীয় দল তারা ২টি নাম প্রস্তাব করবেন। ৮ জনের মধ্য থেকে বাছাই কমিটি র‍্যাংক চয়েজ পদ্ধতিতে ভোটিংয়ের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা চূড়ান্ত করবেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আরেকটি প্রস্তাব ছিল। কোনোভাবেই বিচার বিভাগকে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত না করা, কারণ আমরা দেখে থাকি বিচার বিভাগ এর মাধ্যমে রাজনীতিকরণ হয়ে থাকে।

এমআর/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশে আপনি খুব একটা ভালো উইকেট পাবেন না : ম্যাচ শেষে পাকিস্তান অধিনায়ক Jul 21, 2025
img
যদি কখনও জেলে যাই, উঁচু কমোড কি পাব: প্রেস সচিব Jul 21, 2025
img
চিকিৎসার খোঁজ নেওয়ায় সেনাপ্রধানকে ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ জামায়াত আমিরের Jul 21, 2025
img
মেজর জিয়া চট্টগ্রাম থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন: নাহিদ Jul 20, 2025
img
রাজবাড়ীতে হেলিকপ্টারে চড়ে ইমামের রাজসিক বিয়ে Jul 20, 2025
img
সাকিবের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে মির্জা ফখরুলের মন্তব্য Jul 20, 2025
img
জিম্বাবুয়ের হ্যাটট্রিক হার, ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড Jul 20, 2025
img
পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়, টাইগারদের অভিনন্দন জানাল আসিফ মাহমুদ Jul 20, 2025
img
‘ডিজিটাল সুবিধা নাগরিক সেবা কেন্দ্রের আওতায় আনা হচ্ছে’ Jul 20, 2025
img
টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক পলিসির খসড়া পর্যালোচনায় কমিটি গঠন Jul 20, 2025
img
ফ্রান্সের তরুণ স্ট্রাইকারকে ৯০ মিলিয়ন ইউরোতে দলে ভেড়াচ্ছে লিভারপুল! Jul 20, 2025
img
লিবিয়া থেকে দেশে ফেরার জন্য নিবন্ধন করেছেন ২ হাজার বাংলাদেশি Jul 20, 2025
img
রাবণের চোখে রামায়ণ, স্বপ্নের ছবির কথা জানালেন মানচু বিষ্ণু Jul 20, 2025
img
স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বলে বিভেদ তৈরি করতে চাই না : সালাহউদ্দিন Jul 20, 2025
img
ডিবি পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ Jul 20, 2025
img
রাজপথে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষ এখন সময়ের অপেক্ষা : গোলাম মাওলা রনি Jul 20, 2025
img
সাধারণ মানুষদের গণহারে গ্রেফতারের প্রতিবাদে কোটালীপাড়ায় বিএনপির সংবাদ সম্মেলন Jul 20, 2025
img
নির্বাচনে এনসিপির কেউ জিততে পারবেন না : ইশরাক Jul 20, 2025
img
'কুলি' সিনেমায় সাহসী চরিত্রে থাকছে শ্রুতি হাসান Jul 20, 2025
img
আ.লীগের হরতাল ভারতে নাকি অনলাইনে, প্রশ্ন জাগপার Jul 20, 2025