মানুষের কাছে পরিষ্কার করতে হবে আমরা কীভাবে আগামীর বাংলাদেশ গড়বো: আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জুলাই আগস্টের আন্দোলনের মূল নায়ক ছিলেন তো তারেক রহমান এবং যার সবচেয়ে বেশি দিন আত্মত্যাগ, তিনি হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বক্তৃতা এটা দিয়ে শুরু করতে হবে। যাদের কারণে আজ শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছে। জুলাই আগস্টের আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই, কিন্তু সে আন্দোলনেও সবচেয়ে বেশি ভূমিকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের।

আজ শনিবার (২৬ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে জিইসি কনভেনশন সেন্টারে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও পেশাজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট হাসান আলী চৌধুরী এবং মহানগর ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. ইফতেখার ইসলাম লিটনের পরিচালনায় এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এসএম ফজলুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আলোচনা সভা শুরুর আগে আওয়ামী দুঃশাসন ও জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের উপর নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

আমীর খসরু বলেন, ১৬ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে, আমাদের (বিএনপি) এত মানুষের যে আত্মত্যাগ, সেটা এখন আবার অনেকে ভুলে যেতে বসেছে। এখন জুলাই-আগস্ট নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, তাতে ১৬ বছর ধরে যে মানুষগুলো একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে, সেটা কিন্তু আলোচনায় আসছে না। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে গেছে, পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে, চাকরিচ্যুত হয়েছে, বাড়িঘরে থাকতে পারেনি, বেশিরভাগ সময় কোর্ট-কাচারিতে কাটিয়েছে। বলতে কষ্ট হচ্ছে- এমন অনেকে আছে, স্ত্রী স্বামীকে ত্যাগ করে চলে গেছে, বছরের পর বছর স্বামী ঘরে না থাকার কারণে, এরকম ঘটনা আছে। সেগুলো কিন্তু আলোচনায় আসছে না।

আগামী নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রথম ১৮ মাসে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করার কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশের তরুণদের ভবিষ্যৎ কী হবে, সেই চিন্তা আমরা করে রেখেছি। আমরা এক কোটি তরুণের কর্মসংস্থানের কথা বলছি প্রথম ১৮ মাসে। আমরা কিন্তু এই কথাটা পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট হিসেবে বলছি না, অঙ্কের হিসাব-কিতাব করে, কোন সেক্টরে কত চাকরি হবে, দেশে কত হবে, বিদেশে কত হবে, আর্ত্মকমসংস্থান কত হবে, আমরা হিসাব-কিতাব করে বের করেছি। এগুলোর জন্য রাষ্ট্রীয় নীতিমালায় পরিবর্তন আনবো, সেটাও আমরা রেডি করেছি।  

আমীর খসরু বলেন, সুতরাং আমরা যা বলছি সেগুলো পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট না, এগুলো তারেক রহমান সাহেব নীতিনির্ধারকদের নিয়ে এ কাজগুলো প্রায় সমাপ্ত করে ফেলেছেন। স্বাস্থ্যখাতে কী হবে, শিক্ষাখাতে কী হবে, আইটি সেক্টর, ইন্ডাস্ট্রিতে, কৃষিখাতে কী হবে- সব আমরা হোমওয়ার্ক করে রেখেছি। এক কোটি চাকরির কথাও আমরা হোমওয়ার্ক করেই বলেছি। এজন্য যেসব এক্সপার্টিজ আছেন, তারাও আমাদের সাথে কাজ করছেন। আমাদের তো দেশ গড়তে হবে। পলিটিক্যাল স্লোগান দিয়ে তো দেশ গড়া যাবে না। এখন আমাদের মানুষের কাছে পরিষ্কার করতে হবে যে আমরা কীভাবে আগামীর বাংলাদেশ গড়বো।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছি। দেশের ইতিহাসে প্রত্যেকটি আন্দোলনের পেছনে নানা ইতিহাস ছিল। এখন কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছে, জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থান একমাসে শেষ হয়েছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে, ৪৭ না হলে ৫২ হতো না, ৭১ না হলে ৭৫ এর সিপাহী জনতার বিপ্লব হতো না। এগুলো অস্বীকার করা যাবে না। এখন সকলেই কৃতিত্ব দাবি করে। ৭১ এ জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল। কিন্তু তিনি কৃতিত্ব চাননি।

অর্থাৎ আন্দোলন সংগ্রাম ও দেশ পরিচালনা একদিনে হয় না। এগুলো ধীরে ধীরে হয়। একইভাবে ওয়াসিম আকরাম ও আবু সাইদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মানুষের ক্ষোভ ফুটে উঠেছে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. নসরুল কদির, এ্যাবের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিম, সিএমইউজে'র সাবেক সভাপতি শামসুল হক হায়দরী, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহকারী মহাসচিব মুস্তাফা নঈম, বার কাউন্সিলের সদস্য এড. এ এস এম বদরুল আনোয়ার, সিএমইউজে'র সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, জেলা ড্যাবের সাবেক সভাপতি ডা. আশরাফুল কবির ভূঁইয়া, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. আবদুল সাত্তার, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক এড. তারিক আহমেদ, মহানগর পিপি এড. মুফিজুল হক ভূইয়া, ড্যাব নেতা ডা. ঈসা চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মেজবাউল আলম, সিটি করপোরেশন কলেজ শিক্ষক সমিতির আহবায়ক আবদুল হক, ব্যাংকার মেহরাব হোসেন খান, ইঞ্জিনিয়ার মো. ওসমান, সিদ্দিক আল মামুন প্রমুখ।

এমআর 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা আবেদনে চীনের নতুন নিয়ম Sep 14, 2025
img
ইউরোপীয় ৩ দেশকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি Sep 14, 2025
img
রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ১৬৯৬ মামলা Sep 14, 2025
img
লালনের গানে বিপ্লব এনেছিলেন ফরিদা পারভীন Sep 14, 2025
img
সাদাপাথর লুটকাণ্ডে গ্রেপ্তার সাহাব উদ্দিন কারাগারে Sep 14, 2025
img
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাবর, আলোচনায় তারেক রহমানের নিরাপত্তা Sep 14, 2025
img
প্রকৌশল খাতে লেনদেন শীর্ষে, জীবনবিমায় পতন Sep 14, 2025
img
গণতন্ত্র ও ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য বিপজ্জনক শক্তির উত্থান ঘটছে : রিজভী Sep 14, 2025
img
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে ড্রেসিংরুমে উত্তাপ! Sep 14, 2025
img
ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে মস্কোর বার্তা Sep 14, 2025
img
তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন : বাবর Sep 14, 2025
img
নির্ধারিত টাইমলাইনে নির্বাচন হতেই হবে : সালাহউদ্দিন আহমেদ Sep 14, 2025
img
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে সহযোগিতা করবেন এনবিআর চেয়ারম্যান Sep 14, 2025
img
রাজস্ব আয়ে রেকর্ড শাহ আমানত বিমানবন্দরে Sep 14, 2025
img
জুলাই সনদ নিয়ে সমঝোতায় আসতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা Sep 14, 2025
img
'লোকাহ' চ্যাপ্টার ১ -এ চন্দ্রা-র সাফল্যের কারণে কান্তা মুক্তির তারিখ পিছিয়ে Sep 14, 2025
img
অভিনয় ছেড়ে এবার প্রযোজনায় স্বীকৃতি মজুমদার Sep 14, 2025
img

যুক্তরাষ্ট্রের বাজার নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা

বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারলে শুল্কহ্রাসের আরো সম্ভাবনা রয়েছে Sep 14, 2025
img
কোহলি না থাকায় স্বস্তিতে পাকিস্তানের বোলাররা: গাভাস্কার Sep 14, 2025
img
স্বরা-ফাহাদের প্রেমে কিউপিড হয়ে এল এক বিড়ালছানা Sep 14, 2025