গাজায় ক্ষুধা-হামলায় আরও ফিলিস্তিনির ৭১ মৃত্যু

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার ভেতরে তীব্র ক্ষুধা সংকট ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগের মধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৭১ জন।

একাধিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে অপুষ্টিজনিত কারণে। রোববার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

শনিবার আল-জাজিরাকে দেওয়া তথ্যে চিকিৎসা সূত্রগুলো জানায়, শনিবার একদিনেই গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪২ জনই ছিলেন ত্রাণ সহায়তা পেতে মরিয়া মানুষ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ইসরায়েলের অবরোধজনিত ক্ষুধায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৭ জনে, যাদের মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।

এই মানবিক বিপর্যয় ঘিরে বিশ্বব্যাপী তীব্র নিন্দার মুখে ইসরায়েল শনিবার রাতে ঘোষণা দেয়, রোববার থেকে তারা বেসামরিক এলাকাগুলো এবং ত্রাণ সরবরাহের করিডোরে ‘সাময়িক হামলা বিরতি’ দেবে।

তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে বলেনি, কোন কোন এলাকায় এই বিরতি কার্যকর হবে।

ইসরায়েল বরাবরের মতো আবারও জাতিসংঘকে ত্রাণ বিতরণে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেছে। তবে জাতিসংঘ এবং একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও সাহায্য সংস্থা এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, ইসরায়েলই যথাযথ অনুমতি না দেওয়ায় তারা নিরাপদে ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না।

ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা আকাশপথে ত্রাণ ফেলেছে। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতও জানিয়েছে, তারা গাজায় অবিলম্বে আকাশপথে ত্রাণ পাঠাবে। কিন্তু মানবিক সহায়তা বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই বলে আসছেন, আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছাতে সড়কপথের বিকল্প হতে পারে না।

শনিবার জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহকে “মূল সমস্যা থেকে মনোযোগ সরানো ব্যয়বহুল ও অকার্যকর উপায়” বলে আখ্যায়িত করেন। তার মতে, এটি দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মোড় ঘোরাতে পারবে না।

তিনি বলেন, “ইসরায়েলকে অবশ্যই অবরোধ তুলে নিতে হবে, রাস্তাগুলো খুলে দিতে হবে এবং মানুষের চলাচলের নিরাপত্তা ও মর্যাদাপূর্ণ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”

গাজা শহর থেকে আল-জাজিরার হানি মাহমুদ জানান, ইসরায়েলের ঘোষিত পদক্ষেপগুলোর কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত মাত্র সাতটি প্যালেটজাত ত্রাণ দেওয়া হয়েছে, যা মূলত একটি ট্রাক বা তারও কম পরিমাণে। এটি বাস্তবে কোনো সহায়তা নয়।”

তিনি জানান, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, এসব ত্রাণ উত্তর গাজার একটি সামরিক নিষিদ্ধ এলাকায় ফেলা হয়েছে, যেখান থেকে রাতে সেগুলো সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব। এছাড়া ইসরায়েলের ঘোষিত তথাকথিত ‘হিউম্যানিটেরিয়ান পজ’ বা সাময়িক বিরতিও বাস্তব সংকটের কোনো সমাধান নয় বলে উল্লেখ করেন মাহমুদ।

তিনি বলেন, “এই পর্যায়ে এসে আমরা গণহারে ক্ষুধাজনিত মৃত্যু দেখতে যাচ্ছি, এটি নিশ্চিত করেছেন গাজার চিকিৎসা সূত্রগুলো।”

এদিকে ক্ষুধা যখন গাজাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, তখনও থেমে নেই ইসরায়েলের প্রতিদিনের হামলা। শনিবার খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি টেন্ট ক্যাম্পে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। এলাকাটি ইসরায়েলের ঘোষিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে বিবেচিত হলেও সেখানেও অব্যাহত হামলা চলছে।

গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, জ্বালানি ও যন্ত্রাংশের অভাবে তাদের কোনো যানবাহন খুব শিগগিরই আর জীবনরক্ষামূলক সেবা দিতে পারবে না। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।

এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “জরুরি ভিত্তিতে ইসরায়েলি দখলদার কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতে হবে যাতে তারা জ্বালানি ও যন্ত্রাংশ ঢুকতে দেয়

এফপি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জাতীয় সংসদের অর্ধেক আসনের দাবী নারী নেত্রীদের Nov 05, 2025
img
জনসমর্থনে শীর্ষ ১০ এর ভিতর না থাকলে রাজনীতি ছাড়বেন তারেক রহমান Nov 05, 2025
img
বার্সেলোনার দায়িত্ব ছাড়ছেন কোচ হান্সি ফ্লিক! Nov 05, 2025
img
কিছুক্ষণ পরই আকাশে দেখা দেবে ‘সুপারমুন’ Nov 05, 2025
img
রিমান্ডে সেই বুয়েট ছাত্র শ্রীশান্ত Nov 05, 2025
img
সার্ভার ত্রুটির কারণে নভেম্বরের এমপিও আবেদনের সময়সীমা বাড়াল মাউশি Nov 05, 2025
img
বরখাস্ত করা হলো পাকা কলা ঘুস নেওয়া সেই কর্মচারীকে Nov 05, 2025
img
দেশে কোটিপতির সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তা ‘উদ্বেগজনক’: নজরুল ইসলাম খান Nov 05, 2025
img
আওয়ামী লীগের যে কোনো কর্মসূচিতে আইনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হবে: প্রেস সচিব Nov 05, 2025
img
আমি কখনো বলিনি নাটক করব না: তানজিন তিশা Nov 05, 2025
img
গণসংযোগকালে গুলিবিদ্ধ বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ Nov 05, 2025
img
এনসিপির ‘সমন্বয়কারী সদস্য’ হলেন মাহিন Nov 05, 2025
img
মামদানি কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারবেন? Nov 05, 2025
img
নভেম্বরে না হলেও নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে: জামায়াত নেতা আযাদ Nov 05, 2025
img
ইসিকে জামায়াতের ১৮ দফা প্রস্তাব Nov 05, 2025
img
রাকসুর ২২ বছরের ফান্ডের হদিস নেই, প্রশাসন নিশ্চুপ Nov 05, 2025
img
গ্রেপ্তারকৃত যুবলীগ নেতাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিল সমর্থকরা Nov 05, 2025
img
অকার্যকর ঘোষিত পাঁচ ব্যাংকের দায়িত্ব পেলেন যারা Nov 05, 2025
img
বিশ্বকাপ জিতলেই সেরা বলা যায় না, মন্তব্য রোনালদোর Nov 05, 2025
img
কোচ সালাহউদ্দিনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে বিসিবি Nov 05, 2025