ফিলিস্তিন জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড সুলেইমান আল ওবেইদকে অনেকেই দেশটির পেলে হিসেবে ডাকতেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন এই ফুটবলার। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সাহায্য পেতে অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনি জনতার ওপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে ৪১ বছর বয়সী এই ফুটবলার প্রাণ হারান।
ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএএফ) নিজেদের ওয়েবসাইটে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সুলেইমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
পিএএফের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে মানবিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষমাণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় ও বিচ সার্ভিসেস দলের তারকা সুলেইমান আল ওবেইদ শহীদ হয়েছেন। ফিলিস্তিন ফুটবলে সুলেইমান “দ্য ব্লাক পার্ল (কালো মুক্তা)”, “দ্য গ্যাজেল (হরিণ)”, “হেনরি অব প্যালেস্টাইন” এবং “পেলে অব প্যালেস্টাইন ফুটবল” নামে পরিচিত ছিলেন। ফিলিস্তিন ফুটবলের এই পেলে পাঁচ সন্তান রেখে মারা গেছেন।’
গাজায় জন্ম নেওয়া সুলেইমান সার্ভিসেস বিচ ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। পশ্চিম তীরে গিয়ে সেখানকার ক্লাব আল আমারি ইয়ুথ সেন্টারে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত খেলেন তিনি। ২০১০-১১ মৌসুমে ফিলিস্তিনের প্রথম পেশাদার ফুটবল লিগ জেতেন সুলেইমান। আল আমারির পর আল শাতিয়া ক্লাবে এক মৌসুম খেলেন এ ফুটবলার। এরপর গাজা স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে সাউদার্ন গভর্নরেটস প্রিমিয়ার লিগে ২০২৬–১৭ মৌসুমে ১৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।
পরের মৌসুমে আল খাদামা ক্লাবের হয়েও লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন।
পিএএফের বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, দুর্দান্ত গতি ও দক্ষতার জন্য সুলেইমান ২০০৭ সালে ফিলিস্তিন জাতীয় দলে জায়গা করে নেন। ২০১৩ সালে জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলার আগে ২৪ ম্যাচে ২ গোল করেন তিনি। এর মধ্যে ২০১০ সালে পশ্চিম এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশন চ্যাম্পিয়নশিপে ইয়েমেনের বিপক্ষে ‘সিজর্স কিকে’ নিজের সেরা গোল করেছিলেন এ ফরোয়ার্ড।
সুলেইমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনা। তিনি নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘সাহায্য পাওয়ার আশায় রাফায় অবস্থান করার সময় ফিলিস্তিন জাতীয় দলের তারকা সুলেইমান আল ওবেইদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তাকে “ফিলিস্তিনের পেলে” ডাকা হতো। আমরা তাদের আর কত গণহত্যা করতে দেব? ফিলিস্তিন মুক্ত হোক।’
সুলেইমানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে খেলাধুলা ও স্কাউটিং-সংশ্লিষ্ট শহীদ ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬৬২, যেটা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের নির্মূলীকরণ যুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হয়। এর মাঝে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্ট মৃত মানুষের সংখ্যা ৩২১। গাজায় গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন দেড় লাখের বেশি।
টিকে/