গাজা সম্পূর্ণ দখলের যে পরিকল্পনা ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা নিয়েছে, তা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে চিঠি দিয়েছেন ৫৫০ জনেরও বেশি সাবেক ইসরায়েলি সেনা-পুলিশ ও কূটনৈতিক কর্মকর্তা। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এ তথ্য জানিয়েছে ইসরায়েলি সংস্থা ইসরায়েল’স সিকিউরিটি মুভমেন্ট (সিআইএস)।
সিআইএস মূলত ইসরায়েলের সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংস্থা। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী শিন বেট, পুলিশ, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল এবং ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই সংস্থার সদস্যপদ পান।
চিঠিতে সাবেক এই কর্মকর্তারা নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট ইয়ায়েল জামির গাজা সম্পূর্ণ দখলের অভিপ্রায়ে অভিযান পরিচালনা করতে অসম্মত হয়েছেন এবং আমরা মনে করি, তার এই অসম্মতিকে আপনার এবং আপনার মন্ত্রিসভার গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। কারণ আমরা, ইসরায়েলের সেনাবাহনী এবং ইসরায়েলের অধিকাংশ নাগরিক সেনাপ্রধানের এই অবস্থানকে যথাযথ এবং যৌক্তিক বলে মনে করে।”
“সেনাপ্রধান বলেছেন, গাজা সম্পূর্ণ দখল করা হলে সেই ভূখণ্ড ইসরায়েলি সেনাদের জন্য ফাঁদে পরিণত হবে এবং সেখানে এখনও যেসব ইসরায়েলি জিম্মি বন্দি অবস্থায় আছেন, তাদের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। আমরা তার এই বক্তব্যের সঙ্গেও একমত।”
“এখন আপনার (নেতানিয়াহু) এবং ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার উদ্দেশে আমাদের আহ্বান গাজা সম্পূর্ণ দখলের পরিবর্তে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা, যুদ্ধ বন্ধ করা, হামাসকে গাজার শাসনক্ষমতা থেকে সরানো, আঞ্চলিক জোটে যোগদান, ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য দ্বিতীয় যুদ্ধেপ্রভৃতি ইস্যুতে মনোযোগ দিন।”
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সেনপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ায়েল জামিরের বৈঠক হয়।
বৈঠকে সেনাপ্রধানের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “আমাদের লক্ষ্য পুরো গাজা দখলে আনা। এজন্য গাজার সর্বত্র আমাদের অভিযান চালাতে হবে। এমনকি হামাস যেসব অঞ্চলে ইসরায়েলি জিম্মিদের লুকিয়ে রেখেছে বলে আমরা সন্দেহ করছি, সেসব অঞ্চলেও চালাতে হবে অভিযান। আমাদের এই লক্ষ্য যদি আপনার পছন্দ হয় তাহলে দায়িত্ব পালন করুন, নয়তো ইস্তফা দিন।”
কিন্তু সেনাপ্রধান নেতানিয়াহুর এই নির্দেশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, “এটা একটা ভুল পদক্ষেপ হবে। পুরো গাজা দখল করলে আমাদের সেনাবাহিনীকে সেখানে স্থায়ীভাবে থাকতে হবে, যা আসলে হবে একটি ফাঁদের মতো। কারণ হামাস এখনও সম্পূর্ণ দুর্বল হয়নি। তাছাড়া হামাসের কব্জায় এখনও যেসব জিম্মি আছেন, তাদের ঝুঁকিও বেড়ে যাবে।”
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীও বর্তমানে গাজা পুরোপুরি দখলের অভিযানে নামার মতো অবস্থায় নেই উল্লেখ করে বৈঠকে সেনাপ্রধান বলেন, “বর্তমানে গাজার বিশাল এলাকা ইসরায়েলি বাহিনীর দখলে আছে; কিন্তু টানা প্রায় ২ বছর ধরে অভিযানের জেরে আমাদের বাহিনীর অনেক কর্মকর্তা ও সদস্য ক্লান্ত, মানসিকভাবে বিধ্বস্ত এবং অনেকে অবসাদগ্রস্তও হয়ে পড়েছে। আমাদের এখন কাজ চালাতে হচ্ছে রিজার্ভ সেনাদের নিয়ে। এই অবস্থায় দখলকৃত এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে হচ্ছে আমাদের।”
গাজার ৭৫ শতাংশ এলাকা বর্তমানে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দখলে আছে বলে বৈঠকে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
এমকে/টিকে