অন্তর্বর্তী সরকারের ৮ উপদেষ্টার ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র প্রমাণ আছে : সাবেক সচিব

অন্তর্বর্তী সরকারের আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন দুর্নীতি’র প্রমাণ নিজের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেছেন সাবেক সচিব ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার। অবসরপ্রাপ্ত এই সচিব বলেন, ‘এই উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ হয় না, বদলিও হয় না। তবে তিনি উপদেষ্টাদের নাম বলেননি।’

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে এক সেমিনারে এ অভিযোগ করেন আব্দুস সাত্তার।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক শাফিউল ইসলাম।

আব্দুস সাত্তার তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ।

আমলাদের চরিত্র না হয় খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু জুলাই আন্দোলনের রক্তের ওপর দিয়ে চেয়ারে বসা অন্তত আটজন উপদেষ্টার সীমাহীন দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ দিতে পারব। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আট উপদেষ্টার দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না’।

এ সময় উপস্থিত কর্মকর্তারা ‘ঠিক ঠিক’ বলে হাততালি দেন।

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও আগামী দিনের জনপ্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে প্রশাসন ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বিকেল ৪টায় সেমিনার শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। সেমিনারে প্রশাসন ক্যাডারের শীর্ষ পদের প্রায় সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

সাবেক এই সচিব বলেন, ‘কষ্ট লাগে একজন উপদেষ্টার এপিএসের অ্যাকাউন্টে ২০০ কোটি টাকা পাওয়া গেলেও তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

তিনি প্রশ্ন করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতো একটি মন্ত্রণালয় নূরজাহান বেগম চালাতে পারেন? স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় একজন অনভিজ্ঞ উপদেষ্টা দিয়ে চালানো ঠিক হচ্ছে?’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত এক বছরে দুর্নীতি না কমে বরং অতীতের চেয়ে বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন আব্দুস সাত্তার। তিনি বলেন, ‘এক সহকারী কমিশনার (ভূমি) একটি স্কুলের জমির নামজারিতে ৩০ লাখ টাকা চেয়েছেন। ঢাকার আশপাশের একজন ইউএনও একটি কারখানার লে আউট পাস করতে ২০ লাখ টাকা চেয়েছেন।’

আব্দুস সাত্তার বলেন, “আমি একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে বসি। গত বছর ৫ আগস্টের পর ওই অফিসে হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ভিড় করছেন। আমার বস তারেক রহমান ডেকে বললেন, ‘কী হচ্ছে? এরা কারা। তাঁরা এখানে কী জন্য আসে।’ আমি বলেছি, এরা সবাই বঞ্চিত। এরা গত ১৫ বছর হাসিনার আমলে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। হাসিনার পতনের পর উচ্ছ্বাসে ছুটে এসেছেন ন্যায়বিচার পেতে। উনি বলেছেন, ‘দলীয় অফিসে ইন-সার্ভিস কর্মকর্তারা আসা ভালো লক্ষণ নয়। আপনি তাদের অফিসে আসতে নিষেধ করে দেন।’ আমি অফিসের গেটে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছি।

ইন–সার্ভিস কোনো কর্মকর্তা অফিসে আসতে পারবেন না। যদি কোনো সমস্যা থাকে অফিসার্স ক্লাবে আসবেন।”

সেমিনারে সাড়ে ৩ ঘণ্টার আলোচনায় বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় উঠে আসে।

কর্মকর্তারা কিভাবে বিগত সরকারের হাতিয়ার হয়ে কাজ করেছেন, সে প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা আগামীতে যাতে কোনো রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ না করেন, সে আহ্বান করা হয়েছে।

আরো বক্তব্য দেন জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, শহীদ আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী, শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী এবং শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দ্বীপ্তি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারি কর্মকমিশনের সচিব সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম।

সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর মানুষের যে প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা পূরণ হয়নি। বাতাসে কান পাতলে অনেক কথা শোনা যায়। গত ১৫ বছরে কর্মকর্তাদের অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা। অবিশ্বাসের দেয়াল ভেঙে দেওয়া।

এমআর/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নিজের বিয়ে নিয়ে অভিনেত্রী পারসা ইভানার মন্তব্য Nov 14, 2025
img
দুবাইয়ের আকাশে যাত্রী নিয়ে উড়বে ট্যাক্সি Nov 14, 2025
img
নীলাঞ্জনা না থাকলে এত দিন ছবি বানাতে পারতাম না : গৌতম ঘোষ Nov 14, 2025
img
বিএনপি জনগণের দল, কখনও মাঠ ছাড়ে না: বাবুল Nov 14, 2025
img
জুয়ায় জড়িত তুরস্কে ১০২ ফুটবলার নিষিদ্ধ Nov 14, 2025
img
ভিকি-কৃতির খুনসুটিতে ভাইরাল ‘টু মাচ উইথ কাজল অ্যান্ড টুইঙ্কল’ এপিসোড Nov 14, 2025
img
মানিকগঞ্জে থেমে থাকা বাসে আগুন, গাড়িতে থাকা ঘুমন্ত চালক দগ্ধ Nov 14, 2025
img
চিরঞ্জীবীর নতুন ছবিতে তামান্নার হাই-ভোল্টেজ নাচের প্রস্তুতি Nov 14, 2025
img
‘আমরা কোনও দোষ করিনি’, ধর্মান্তকরণের ‘ভুয়ো’ অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন জেমাইমা Nov 14, 2025
img
টিকটকার সুজান খানের পার্টিতে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৫১ Nov 14, 2025
img
হাংকি পাংকি বুঝি না, ধানের শীষের বিজয় বুঝি: কামরুল হুদা Nov 14, 2025
img
বরগুনায় স্বর্ণা পরিবহন নামের যাত্রীবাহী বাসে আগুন Nov 14, 2025
img
‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ রিমেকের জন্য করন জোহরের কাস্টে আলিয়া, রণবীর, আনন্যা Nov 14, 2025
img
যুদ্ধের সময় সীমান্ত দিয়ে অনেকে পালিয়েছেন কিন্তু জিয়াউর রহমান যান নাই: ডা. জাহিদ Nov 14, 2025
img
নতুন মুখে সাজিদ আলীর ‘হীর রাঞ্জা’ Nov 14, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবারও রেললাইনে আগুন Nov 14, 2025
img
বরিশালে থেমে থাকা ট্রাকে দুর্বৃত্তদের আগুন Nov 14, 2025
img
একইদিনে গণভোট-জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা প্রত্যাহারের দাবি ৮ দলের Nov 14, 2025
img
বিমানবন্দর এলাকার ২ স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ Nov 14, 2025
img
৭০ বছর পর নতুন নামে রিয়াল মাদ্রিদের ঐতিহ্যবাহী হোম ভেন্যু Nov 14, 2025